জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় অন্তত ২৬টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও সুপারিশ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ই-অরেঞ্জের কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত চলছে অন্য আটটির বিরুদ্ধে।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত চলছে। এতে কারো কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবেই-বিজনেস বলুন আর যেটাই বলুন, কতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে- ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জের মধ্যে কিভাবে যেন আমাদের বেশ কয়েকজনের নামও জড়িত করে ফেলেছে। একজনের নাম তো বলতেই হয়- প্রখ্যাত নিউরোসার্জন এম আলী। তিনি তো আমার কাছে এসে কেঁদে কেঁদে বলেছেন, তিনি কিছুই জানতেন না।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (এম আলী) একজন প্রখ্যাত ডাক্তার। টেলিমেডিসিন কিভাবে প্রসার করা যায়, সে বিষয়ে ধামাকার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল। এখন তাঁর নামটি ধামাকায় দিয়ে...সেই বেচারা বিপদেই পড়েছেন আমরা দেখছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইভ্যালি একটা, আরো কয়েকটা মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। কিভাবে তারা তাদের কমিটমেন্ট পূরণ করবে, এটা আমার এখন জানা নেই। আমরা মনে করি, তারা যে কমিটমেন্ট জনগণকে দিয়েছে, তা যদি পূরণ না করে, তবে আইন অনুযায়ী আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং করতেই হবে। যারা প্রতারণা করবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী খুঁজে বের করবে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা আমরা করব। কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে করে। আমাদের কাছে খবর আসছে, এগুলো তদন্তে কমিটি কাজ করছে।’
তদন্ত শুরু হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রতারক সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও এই কর্মকর্তা একই ধরনের তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ এমন আরো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রতারণা করেছে। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পণ্য বিক্রির অফার দিয়ে যারা গ্রাহকদের পণ্য দেয় না তারা মূলত প্রতারণা করছে। এ ধরনের প্রতারকদের বেশি বেশি ধরা হলে ধীরে ধীরে প্রতারণা কমে আসবে। আমরা চাই, সুন্দর একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ফিরে আসুক।
জানা গেছে, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পাশাপাশি অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও এ নিয়ে কাজ করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনও নিজেরা তদন্ত শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০টি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তদন্ত করছে সিআইডি। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, কিউকম, আলেশা মার্ট, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, সিরাজগঞ্জ শপ ও আলাদিনের প্রদীপ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশও করেছে। এগুলো ছাড়াও আরো অন্তত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম জানা গেছে যাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এগুলোর মধ্যে আছে এসপিসি ওয়ার্ল্ড, দালাল, নিরাপদ ডটকম, এসকে ট্রেডার্স ও মোটরস, ২৪টি কে টি ডট কম, গ্রিনবাংলা, এক্সিলেন্টবিগবাজার, ফাল্গুনিশপ। অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ প্রতারণার কথা জানা যাচ্ছে। তবে এই অঙ্ক আরো বাড়তে পারে।
সম্প্রতি দেশব্যাপী গ্রাহকদের প্রতিবাদ ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তর তদন্ত শুরু করে। এর মধ্যে ইভ্যালির হাজার কোটির টাকার প্রতারণার তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহক থেকে শত শত কোটি টাকা সংগ্রহ করলেও পণ্য সরবরাহ করেনি। সেই টাকার হদিসও নেই। এমনকি মার্চেন্টদের থেকে পণ্য এনে সেই টাকাও তারা পরিশোধ করেনি। তাহলে কোথায় গেল এত টাকা, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সম্প্রতি এসপিসি ওয়ার্ল্ড ও ধামাকা শপিং নামের আরো দুটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পায় সিআইডি। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এরই মধ্যে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি অভিযোগ আসছে। অপরাধের প্রমাণ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক তদন্তে ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে ৮৯ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাই। আরো টাকা তারা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেছে। আইনানুযায়ী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ টাকা স্থানান্তর করতে পারে না।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক এবং ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যেহেতু এরই মধ্যে আইন অমান্য করেছে, তাই মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো দায়িত্ব না নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন