জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত হলফনামায় দেখা গেছে প্রতিদ্বন্দ্বি চার প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে আছেন প্রেমসাগর হাজরা তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আফজল হক সম্পদে এগিয়ে আছেন, তিনি নির্বাচন করছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ভানু লাল রায়ের নগদ অর্থ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে বেশি। আর জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও শ্রমিক লীগ নেতা প্রার্থী প্রেমসাগর হাজরার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে আফজল হক এসএসসি পাস করেছেন, ভানুলাল রায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন এবং মিজানুর রব এসএসসি পাস করেছেন।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির কলামে দেয়া তথ্যে সবচেয়ে বিত্তশালী প্রার্থী আফজল হক, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ৮৫ লক্ষ ৪ হাজার ৭টাকা। আফজল তার হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। ব্যবসা থেকে আফজল হকের বাৎসরিক আয় তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা, আফজল হকের কাছে নগদ দশ লক্ষ টাকা এবং তার স্ত্রীর কাছে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। ব্যাংকে তার হিসাবে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার সাতাশি টাকা রয়েছে। স্বর্ণ আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আফজলের আছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার।
কৃষি ও অকৃষি জমি মিলিয়ে আফজল ও তার স্ত্রীর রয়েছে মোট ১১ দশমিক ৩১ একর জায়গা, যার মধ্যে একটি দালান ও একটি বাগান রয়েছে। আফজল হকের ব্যাংকে ঋণ আছে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
আরেক প্রার্থী প্রেমসাগর পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কৃষিকাজ। তার হাতে নগদ আছে ২ লক্ষ টাকা তার ব্যাংকে নিজের নামে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে আছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কৃষিকাজ থেকে তার বাৎসরিক আয় ৫০ হাজার টাকা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে তার উপর নির্ভরশীলদের রয়েছে আরও ৫ লক্ষ টাকা। যানবাহনের কলামে প্রেমসাগর লিখেছেন তার উপর নির্ভরশীলদের একটি কার ও মোটরসাইকেল রয়েছে। প্রেমসাগরের স্ত্রীর ৩ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও আসবাবপত্র রয়েছে আড়াই লাখ টাকার। প্রেমসাগরের নামে দুইটি ফৌজদারি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভানু লাল রায়ের হাওরবিলাস ফিশারি নামে একটি মৎস্যখামার রয়েছে উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকায়। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বাৎসরিক ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা সম্মানী পেতেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ভানু লাল রায়ের কাছে নগদ অর্থ আছে ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, যানবাহন আছে তার ৫৫ হাজার টাকার। ভানু লাল রায়ের স্থাবর সম্পত্তি আছে ৪.৯ একর যার বর্তমান মূল্য ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র রয়েছে ৯০ হাজার টাকার। ভানু লাল রায়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৩০ টাকা।
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রব এক্সপেট্রা লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন বলে হলফনামায় জানিয়েছেন। মিজানুর রবের চাকুরি থেকে বাৎসরিক আয় ৩ লক্ষ টাকা, তার কাছে নগদ অর্থ আছে ৪ লক্ষ টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ১ লক্ষ টাকা। মিজানুর রবের ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে, তার আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী আছে ১ লক্ষ টাকার। তার কোন কৃষি বা অকৃষি জমি নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। মিজানুর রবের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ লক্ষ টাকা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাওসার ইকবাল বলেন, হলফনামার জনসমক্ষে প্রকাশ খুবই ভালো উদ্যোগ, এই হলফনামা প্রকাশের ফলে ভোটররা প্রার্থীদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার সুযোগ পায়। হলফনামায় প্রার্থীরা তাদের আর্থিক বিষয়সহ ব্যক্তিগত যেসব তথ্যাদি উপস্থাপন করেছেন তা যাচাইবাছাই হওয়া উচিত।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন