শাহরিয়ার খান সাকিব, মৌলভীবাজার :: এ মহাদুর্যোগে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন বা সৎকার নিয়ে যখন প্রায়ই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে, তখন নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে সেই কাজ সম্পন্নে এগিয়ে এসেছেন মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেখ বোরহান উদ্দিন রহ ইসলামী সোসাইটি (বিআইএস) মৌলভীবাজার।
করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এমন মরদেহ দাফন কাফন ও সৎকারে সংগঠনের উদ্যোগে আশরাফুল খান রুহেলকে প্রধান করে হয়েছে ৪০ সদস্যের টিম গঠন করা।
তবে দাফনকার্যে প্রায়ই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের, ঘটছে বাধাদানের মত ঘটনাও। এ টিমে যুক্ত হওয়া সহজ ছিল না। এ কাজ করতে গিয়ে পরিবার থেকে অনেককে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে সংগঠনের তরুন সদস্যদের। তবু নানা কৌশলে তাঁরা যুক্ত থেকেছেন। আবার কোনো কোনো পরিবার তাঁদের কাজে উৎসাহও জুগিয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে তাঁরা মানুষের ভেতরের রূপটা দেখেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাসপাতাল বা বাসায় এনে মরদেহ গোসল করানো, অজু, কাফনের কাপড় পরানোসহ পুরো দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।
জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাজ করছেন তারা। নারী মরদেহের জন্য নারী স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একঝাঁক মেধাবী তরুণ কাজ করছেন এই দলের সদস্য হিসেবে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব জানান, করোনায় মৃত অনেক ব্যক্তির মরদেহ ফেলে যাচ্ছেন তাদের স্বজনেরা। এমন খবর জানার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনায় মৃত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেই আমরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দাফন কার্যক্রমের পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন জেলার বিত্তশালী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
মরদেহ দাফনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সংগঠনের কোভিড-১৯ দাফন - কাফন ও সৎকার টিমের টিম লিডার মো. আশরাফুল খান রুহেল বলেন, কবরস্থানে মৃত ব্যক্তির পরিবারের হাতেগোনা কয়েকজন সদস্য থাকেন। কখনও কখনও কেউই থাকেন না। মৃত্যুর পরও স্বজনহীন মানুষটির অসহায়ত্ব সত্যিই আমাদেরকে ব্যথিত করে। শেষযাত্রায় তাই সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানোর বিষয়টি আমাদের কাছে মুখ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়। মৃত্যুভয় তো থাকেই। আমরা যারা এ কাজ করছি, তারা নিজেরাও নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে সচেতন।
সংগঠনের মহাসচিব মিজানুর রহমান রাসেল বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে নিজেরা সুরক্ষিত থেকে লাশ দাফন কাফন ও সৎকার করছি আমরা।
করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের স্বজনেরা যখন লাশের পাশে আসেননি, তখন এই স্বেচ্ছাসেবীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাফন-কাফন ও সৎকারের কাজ করছেন। কোথাও দাফন-কাফন বা সৎকারের প্রয়োজন হলে রাত-বিরেতে তাঁরা ছুটে গেছেন।
সংগঠনের সূত্রে জানা যায়, শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটি (বিআইএস) মৌলভীবাজার ২০০১ সাল থেকে জেলার বিভিন্ন সামাজ ও শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণসহ সচেতনতামূলক কাজ করেছে জেলার ৭টি উপজেলায়।
এরই ধারাবাহিকতায় যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে করোনায় আক্তান্ত ও উপসর্গকারী যারা নিজ বাড়িতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন তাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জেলার ৭টি উপজেলায় গড়ে তুলেন ফ্রি অক্সিজেন হোম সার্ভিস সেবার কার্যক্রম। ফ্রি অক্সিজেন সেবা ও দাফন কাফন সৎকার এই উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন