জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
মুহাম্মদ রেজাউল হক টিটু ওরফে রেজা ভান্ডারী (৪৮) নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবার কখনো এনএসআই কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। এসব পরিচয় দিয়ে নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাতজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
তবে আটকের পরে জানা গেল টিটু বাউল শিল্পী ও অখ্যাত একটি অনলাইনের সাংবাদিক। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবপুর থানাধীন সাতরশিয়া বিশ্বাসপাড়ার মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে। ঢাকায় তার বাসা হাজারীবাগে রায়েরবাজার এলাকায় টালি অফিস রোডে।
ভুক্তভোগী একজনের কাছে সন্দেহ হলে বৃহস্পতিবার রাতে নেত্রকোনা পৌর শহরের পারলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে টিটুকে আটক করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশে দেন ভুক্তভোগীরা। পরে এ চক্রের আরও দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
তারা হলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গলধাপাড়া এলাকার মৃত আবদুল হেকিমের ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (৪৯) ও নেত্রকোনা পৌরশহরের কাটলী এলাকা আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু সায়েম (২৭)।
আবু সায়েম এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হলেও তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন পদের জন্য ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন মূলহোতা টিটুকে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি পদের মধ্যে একটি পদে এক ভুক্তভোগীর কাছে ডাকযোগে চাকরির নিয়োগপত্র আসে। একই চিঠিতে একটি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে ও আরেকটি নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের প্যাডে মোট দুটি নিয়োগপত্র দেখতে পান ভুক্তভোগী। বিষয়টি সন্দেহ হলে ভুক্তভোগী অর্থ লেনদেনকারী টিটুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইদুল ইসলাম রিপন বলেন, এ বিষয়ে জানতে পারি সায়েম নামে একজন আমার এলাকার। সে চাকরির জন্য বেশ কিছু অর্থ লেনদেন করেছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরাফাত নামে জনসংযোগ কর্মকর্তা জানতে পারেন সায়েম একটি চক্রের খপ্পরে পড়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হক বিষয়টি আমাকে ফোনে জানায়, সায়েম কোথায় আছে তাকে নিয়ে দেখা করার জন্য।
রিপন বলেন, ‘সায়েমের লোকেশন ও সে প্রতারণার শিকার হয়েছে কিনা তা জানার জন্য সায়েমকে ফোন দিই। দুই মিনিট পরে ফোন আসে। পরিচয় দেয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি। পরে আমার পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ঢাকায় গেলে যেন তার সঙ্গে চা পান করি। তখন পর্যন্ত আমি জানি না তিনি টিটু।’
তিনি বলেন, ‘এর পরপরই জানতে পারি টিটু ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আটক হয়েছে। আমার নেত্রীর প্রেস সেক্রেটারির মিথ্যে পরিচয় দেওয়ার কথা শুনে আমি ওখানে যাই। তাকে আটকে সহায়তার করার পেছনে আমার হাত রয়েছে।’
নেত্রীর নামে মিথ্যা পরিচয় দেওয়ায় টিটুর বিরুদ্ধে নিজেই অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।
নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, ভুক্তভোগীদের কারও কাছ থেকে জানতে পারি রেজাউল হক টিটু এনএসআইয়ের কর্মকর্তা, আবার কারও কাছে জানতে পারি প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব।
তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে তিনি নিজেকে বাউল শিল্পী ও সিএনএন অনলাইনের সাংবাদিক পরিচয় দেন। তিনি শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের প্যাডে নিয়োগপত্র ও বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাহিদাপত্রও দিয়েছে ভুক্তভোগীদের।
ওসি বলেন, এসব কাগজপত্র ও এ ঘটনা অধিকতর তদন্তের বিষয়। আটককৃত তিনজনকে আজ (শুক্রবার) আদালতে প্রেরণ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন