জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের সেবা প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকায় ক্ষমা চেয়েছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। ছয় ঘণ্টা ফেসবুকের মালিকানাধীন এ প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ থাকায় এক ধাক্কায় প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে জাকারবার্গের। ফলে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকাতেও পিছিয়ে গেছেন তিনি।
সোমবার রাত থেকে এসব যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সমস্যা দেখা দেয়। ওয়েবসাইট বা স্মার্টফোন কোনও ডিভাইস দিয়েই এই মাধ্যমগুলোতে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না। ডাউনডিটেক্টার নামে যে প্রযুক্তি দিয়ে এই মাধ্যমগুলোর ব্যবহার ট্র্যাক করা যায়, তারা জানিয়েছে, তাদের দেখা এটাই সবচেয়ে বড় বিভ্রাট। বিশ্বব্যাপী এক কোটি ৬০ লাখ ব্যবহারকারী সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার রিপোর্ট করেছেন।
পরে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এই বিভ্রাটের জন্য ক্ষমা চান মার্ক জাকারবার্গ। তিনি লিখেছেন, ‘ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার অনলাইনে ফিরে আসছে। এই বিভ্রাটের জন্য দুঃখিত। আমি জানি পছন্দের মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকতে আমাদের সেবার ওপর আপনারা কতটা নির্ভর করেন।’
এর আগে সর্বশেষ ফেসবুক এ ধরনের বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৯ সালে। সোমবারের ঘটনার পর হুট করেই ফেসবুকের শেয়ারের দাম পড়ে যায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এতে করে জাকারবার্গের নিট সম্পদের পরিমাণ কমে ১২ হাজার ১৬০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
এদিনের ঘটনায় ব্লমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচকেও পিছিয়ে পড়েছেন জাকারবার্গ। সেখানে তার অবস্থান এখন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের পরে। তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন বিল গেটস। আর পাঁচ নম্বরে রয়েছেন জাকারবার্গ। দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরণের ব্যাপক মাত্রার বিভ্রাট খুবই বিরল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ফেসবুক এবং তাদের অন্যান্য অ্যাপে সমস্যা হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকরা ১৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেননি। কেন এই সমস্যা হয়েছে, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হয়নি। তবে অনলাইন নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এটা হয়তো ফেসবুক সাইটগুলোর ডোমেইন নেম সিস্টেম বা ডিএনএস সমস্যার কারণে হতে পারে।
ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ডিএনএসকে অনেক সময় ফোন বুক বা অ্যাড্রেস বুকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এর ফলে একজন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী যে সাইটটি খুঁজছেন, তাকে সেই সাইটের কম্পিউটার সিস্টেমে নিয়ে যায়।
এ বছরের শুরুর দিকে ডিএনএস সমস্যার কারণে বেশ কয়েকটি বড় ওয়েবসাইট সমস্যায় পড়েছিল। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের এই বিভ্রাট নিয়ে মজা করতে ছাড়েনি রেডিট এবং টুইটারের মতো অন্য সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মগুলো।
ফেসবুকের এই সমস্যা এমন সময় ঘটলো, যার একদিন আগে প্রতিষ্ঠানের সাবেক একজন কর্মী ফ্রান্সিস হোগেন সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফেসবুক 'নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসার' প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। তিনি ফেসবুকের অনেক গোপন নথিপত্রও ফাঁস করেছেন।
বিবিসির উত্তর আমেরিকায় প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস ক্লেটন বলছেন, বড় বড় ওয়েবসাইটে বিভ্রাটের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যে মাত্রায়, ব্যাপকভাবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তা আমলে নেওয়ার মতো। যতটা সময় ধরে এই সমস্যা চলেছে, তাও বেশ বিরল। সাধারণত হ্যাকিংয়ের কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় না, তবে সেই আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন