“আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ। ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশই উন্নত জীবন”
পুরো বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে খাদ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এ বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-ঋঅঙ এর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২১’ উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে “আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ। ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশই উন্নত জীবন” নির্ধারণ করা হয়েছে। এসডিজির ২ নং লক্ষ্য ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার বিষয়কে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের হার কমেছে। কিন্তু বিগত আগষ্ঠ’২০ মাসে সাউথ এশিয়ান নেটওর্য়াক অব ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনাকালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ১৫ বছর আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে এই হার ছিলো ৪০ শতাংশ। শুধু তা ই নয়, দেশের ৪০টি জেলার দারিদ্র হার জাতীয় হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রধানত নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বিগত দেড় বছরের বেশি সময় ধরেই চালের বাজার অস্থির। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লক্ষ। যার মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ এবং এদের মধ্যে অতিদরিদ্রের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দারিদ্র্যের হার কমলেও সংখ্যাগত দিক থেকে দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা খুব বেশি কমেনি। দৈনিক ১ হাজার ৮০৫ কিলোক্যালরি খাদ্য কিনতে পারে না এমন জনগোষ্ঠী অতিদরিদ্র এবং দৈনিক ২ হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্য কিনতে পারে না এমন মানুষ দরিদ্র। এ সকল জনগোষ্ঠী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পায় না। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য, অর্থাৎ মধ্য আয়ের দেশ ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সকল দরিদ্র এবং অতিদরিদ্রদের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ভারত, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশের একাংশ আইন/নীতির মাধ্যমে সকল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এসডিজির ১নং লক্ষ্য ‘দারিদ্র্যের অবসান’ এবং ২নং লক্ষ্য ‘ক্ষুধামুক্তি’সহ সকল লক্ষ্য অর্জনে অবিলম্বে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন করে অতিদরিদ্র ও দরিদ্রদের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং সে অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা করে অতিদরিদ্রদের অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যায়ক্রমে সকল দরিদ্র মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। ১৬ অক্টোবর ২০২১ইং বিশ্ব খাদ্য দিবস উদাযপন উপলক্ষে নগরীর চান্দগাঁওস্থ আইএসডিই বাংলাদেশ মিলনায়তনে ক্যাব যুব গ্রুপ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের আয়োজনে আলোচনা সভায় উপরোক্ত দাবি জানানো হয়।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি বিশিষ্ঠ কৃষক নেতা আতিকুর রহমান চৌধুরী। ক্যাব সংগঠক ও প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হকের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন ক্যাব দক্ষিন জেলা সাধারণ সম্পাদক ও স্বাউটস জেলা সহ-সভাপতি অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোঃ মুহাম্মদ জানে আলম, কিন্ডার গার্ডেন ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউনুচ, চান্দগাঁও থানা সভাপতি মাহবুবুর রহমান দুর্জয়, চট্টগ্রাম পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান, ক্যাব ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের আবদুর রহমান, ক্যাব যুব গ্রুপের নেতা ও পরিবেশবিদ ইমতিয়াজ আহমদ, ক্যাব যুব গ্রুপের সদস্য হেমায়েত উল্লাহ, আনোয়ার ইব্রাহিম, মোঃ শিহাব, মোঃ মিজান, সাবিউল আলম, জামসেদ ইসলাম, ফরহাদুল ইসলাম, মোঃ হৃদয়, আরাফাতুল ইসলাম, আল আমিন, মোহাদ্দেছ আহমেদ প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন সরকার ও বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থার নানা উদ্যোগের কারনে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও করোনার পর খাদ্যপণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির কারনে সীমিত আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। অন্যদিকে সরকার হতদরিদ্রের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টণীর অনেকগুলি যুগান্তারী উদ্যোগ নিলেও মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকির অভাবে এসমস্ত কর্মসুচিগুলি কাঙ্খিত লক্ষ্য পুরণে সমর্থ হচ্ছে না। বাংলাদেশের সংবিধানে সবার জন্য খাদ্য অধিকারের কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত খাদ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়নি। খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে দেশী-বিদেশী করপোরেট ও বহুজাতিক কোম্পানি গুলির ক্রমাগত আধিপত্য বিস্তারের কারনে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। আর সে কারনে বিগত বিশ বছরে দেশে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও অনেক বেশি। একদিকে প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসবায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার ভোক্তারা বেশি দামে খাদ্য পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দেশীয় প্রকৃত কৃষকেরা প্রতিবছরই লোকসান গুনছে। যেকারণেই সবার জন্য পর্যাপ্ত ও গুণগত খাদ্য, পুষ্টি নিরাপত্তা, খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে রাষ্ট্রকে বাধ্য করার বিষয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন