প্রসংগ: পুঁজা মন্ডপে পবিত্র ধর্মগন্থ এবং পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়!

মকবুল তালুকদার

পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শাসন শোষন থেকে দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে এিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্বে পুর্ববাংলার সকল হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টানকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পতাকা তলে একএিত করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যেই সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন।

কিন্তু দু:খের বিষয স্বাধীনতার অব্যহতি পর পরাজিত শক্তি স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির একটি ক্ষুদ্রাংশ তথাকথিত অবৈজ্ঞানিক অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সম্প্রীতির বাংলাদেশে পুনরায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। সেনা ছাউনিতে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত রাজাকার, আলবদর, আলসামস, জামাত,পিডিপি, মুসলিম লীগ ও অন্যান্য মৌলবাদীদের সমর্থনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’ এবং তাদের শাসন ত্রাসন। নাগরিকত্ব ফিরে পায় বাঙ্গালি জাতির দুষমন যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী গোলাম আযম এবং একই সংগে রাজনীতি করার সুযোগ পায় মৌলবাদী জংগী সংগঠন জামাত শিবির মুসলিম লীগ। এর বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী জামাত শিবির বিএনপি’র সহযোগী হয়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জয়বাংলাকে ঝেটিয়ে বিদায় করে  তদস্হলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশ জিন্দাবাদ প্রতিস্হাপন করে বিভিন্ন ধর্ম ও গোএের মধ্যে কৌশলে বিভাজন সৃষ্টি করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিষ বৃক্ষের বীজ রোপন করে।

অতি সম্প্রতি কুমিল্লা সহ বাংলাদেশের  বিভিন্ন স্হানে জামাত শিবিরের সাথে একিভূত হয়ে বিএনপি ও তাদের সহযোগি মৌলবাদী জংগী গোষ্ঠী কর্তৃক পুঁজা মন্ডপে অংগ্নি সংযোগ সেই পচাত্তরের পনের আগষ্টে রোপিত বিষ বৃক্ষে জন্ম নেয়া ক্ষমতা লিপ্সু জামাত বিএনপির মৌলবাদী চক্র। ইতিপুর্বে পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে জামাত শিবির একক ভাবে ১৯৯১ সালে যশোরে উদীচী সম্মেলন থেকে শুরু করে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জামাত শিবির বিএনপির সাথে একিভূত ঐক্যজোটের অবৈজ্ঞানিক কমরেডবৃন্দের বৈজ্ঞানিক কৌশল ও পরামর্শে ব্যাপক হারে জামাত শিবির বিএনপির জংগী ক্যাডারদেরকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে কার্যত: সন্ত্রাস নির্মুলে সরকারকে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা সমস্যায় ফেলে দেয়। অধিকন্তু রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতৃবৃন্দের নিরবতাও উক্ত সমস্যার জন্য দায়ী।তবে সরকারের ‘চেইন অব কমান্ড’ ঠিক রাখার জন্য নবীনদেরকে সরকারে স্হান করে দেয়া যথাযথ হলেও অপশক্তির কুটকৌশল মোকাবেলায় অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। যাহোক, যে কথাটি বলছিলাম, সেটি হলো সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ তাদের পুঁজা মন্ডপে পবিএ কোরান শরীফ রেখে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মনে আঘাত দিবেন একথাটি “বিজেপি গয়স্বর রায়” ছাড়া পাগলেও বিশ্বাস করেনা। কারন অসাম্প্রদায়িক  বাংলাদেশ নির্মানে হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য বাঙালি রক্ত দিয়েছেন বা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাই  দুধের শিশু থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ সকলেই মনে করেন সরকারকে বিব্রত করার জন্যই  মৌলবাদের নব্য মহাগোষ্ঠীর দ্বারা উক্ত কর্মটি সাধিত হয়েছে।জাতি তাদেরকে ধিক্কার জানায় এবং ক্ষতিগ্রস্হ সম্প্রদায় ও পরিবারের প্রতি জানায় গভীর সমবেদনা।

পায়ের আওয়াজ যায় কবি মরহুম শৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি নাটক। নাটকের  কাহিনীতে পাকিপন্থী মাতাব্বরের মেয়ে গ্রামবাসীকে  নিয়ে প্রতিবাদের বিষয়টিকে মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় বলে বর্ননা করা হয়েছে। তবে আমি সম্প্রীতির শহর কুমিল্লার ঘটনার সাথে সাথে রংপুরেও হিন্দুদের বাড়ী-ঘরে আগুন দেয়া ও পুঁজা মন্ডপ ভাংচুড় জ্বালাও পোড়াও  ইত্যাদি পুর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করি এবং সরকার উৎখাতে জামাত শিবির বিএনপি এবং ঐক্য জোটের মিলিত অপশক্তির নব্য সংস্করন মানবতা বিবর্জিত জংগীদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া বলে মনে করছি।অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গনও মনে করেন জামাত-শিবির-ঐক্যজোটের কমরেডদের সমন্বয়ে গঠিত নব্য জংগী গোষ্ঠীর বৈজ্ঞানিক ছক অনুযায়ী সরকারী দলে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা তথ্য পাচার ও নিরব সমর্থনে সারাদেশে হিন্দু ধর্মের মহাৎসব দুর্গা পুঁজার মন্ডপ ও বাড়ী ঘর ভাংচূড করে জংগী গোষ্ঠী তাদের ভয়ংকর রূপ ও আগমনী বার্তা ঘোষনা করেছে। যা মোকাবেল করা অতীব জরুরী। ইতিপুর্বে ব্রাম্মনবাডিয়ায় তাদের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্হা না নেওয়ায় তাদের স্পর্ধা বেড়ে গেছে। অধিকন্তু ২০০৪ সালে বিএনপি জামাতের যৌথ মহড়ায় প্রকাশ্য জনসভায় জননেএী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা ও আইভি রহমান সহ ২৪ জন নেতা কর্মী হত্যার বিচার দীর্ঘ সুত্রীতার বেড়াজালে আবদ্ধ থাকাকে বিএনপি জামাত ও তাদের লালিত জংগী গোষ্ঠী সরকারের দুর্বলতা বলেই মনে করে।তাদের এই ধারনা থেকেই ২০০৯ সালে ক্ষমতা হারানোর পর ক্ষমতা লিপ্সু বিএনপি জামাত শিবির উত্তর পাড়ায় এবং কুটনৈতিক মহলে মিথ্যাচার ও বিভিন্ন পন্থায় আন্তর্জাতিক জংগী গোষ্ঠী বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহায়তায় স্বাধীনতার পক্ষশক্তির সরকার উৎখাতের অপচেষ্টা করছে।

ইদানিং লক্ষ্য করছি বেসরকারী টেলিভিশনের টকশোতে বা পয়-পএিকায় কিছু সংখ্যক নব্য বুদ্ধিজীবি অনবরত সরকারকে সমর্থন জানিয়ে জ্ঞানগর্ব ভাষন বা লেখালেখি করছেন; কিন্তু সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখতে নিজেরা কোন ভূমিকা রাখছেনা বা ভূলেও ঐ সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করতে সরকারকে কোন প্রকার গবেষনা লব্দ কৌশল বাতলাচ্ছেন না।তবে কি তাঁরা শুধুই জ্ঞানবাক্য শুনিয়ে সুবিধা আদায়ের জন্য এসব করছেন? প্রসংগত উল্লেখ্য যে, পচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা এবং সর্বপরি ২১ আগষ্ট’২০০৪ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেএী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টার প্রতিবাদে ছাএাবস্হায় এমন কি সরকারী চাকুরীতে থাকা অবস্হায়ও রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সাথে জানাচ্ছি যে অধুনা টেলিভিশনের টকশোতে উপস্হিত  ঐ সকল বুদ্ধিজীবিদের সাথে দেখা হয়নি বা তাদের নাম শুনেছি বলেও মনে হয়না কিম্বা বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলখানা হত্যা বা গ্রেনেড ছুঁড়ে জননেএী শেখ হাসিনাকে হত্যা অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বিবৃতিদানকারী বুদ্ধিজীদের তালিকাতেও  তাঁদের নাম দেখতে পাইনি।দু:খিত সন্মানিত পাঠক বৃন্দ আবেগ প্রবন হওয়ায় অসংলগ্ন মুহুর্তে লেখটি অন্য দিকে চলে যাওয়ায়।

উপসংহারে শুধু এ কথা টুকুই বলতে চাই কুমিল্লায় পুঁজা মন্ডপে পবিএ কোরান রাখার বিষয়টি( যদি সত্যিকার অর্থেই উহা করা হয়ে থাকে) কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামাত শিবির বিএনপি ও ঐক্যজোটের অবৈজ্ঞানিক কমরেডদের সমন্বয়ে সৃষ্ট নব্য সাম্প্রদায়িক জংগী গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সরকার পতনের প্রত্যাশায় দিনের পর দিন বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং কুমিল্লার সাম্প্রতিক ঘটনা তারই অংশ।যা কিনা তাদের দ্বারাই বা তাদের অর্থিক প্রনোনায় হচ্ছে বলে নিশিচত ভাবে বলা যায়। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, উক্ত অপশক্তি কুমিল্লায় তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সাথে যাতে দেশের অন্যএও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে পরে তার ব্যবস্হাও করে রেখেছিল বিধায়  চাঁদপুর, রংপুর, চাপাই নবাবগন্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে একযোগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি তাদের এই অপকর্ম সমর্থন করে না বিধায় অনতিবিলম্বে কঠোর হস্তে তাদেরকে দমন করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।

*লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি বীরমুক্তিযোদ্ধা ও কৃষিবিদ।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন