সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার অপরাধের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্র, যুব ও গণ অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধসহ হামলার মদদদাতা রেজা কিবরিয়া ও নূরুল হক নূর গংদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ।
আজ মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে চট্টগ্রাম জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার অপরাধের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্র, যুব ও গণ অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধসহ হামলার মদদদাতা রেজা কিবরিয়া ও নূরুল হক নূর গংদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন এর সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এতে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা: উত্তম কুমার বড়ুয়া, বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা ও সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে রাজপথে নিয়মিত প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এসব সাম্প্রদায়িক হামলায় নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্র, যুব ও গণ অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধসহ হামলার মদদদাতা রেজা কিবরিয়া ও নূরুল হক নূর গংদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। চট্টগ্রামের জে এম সেন হল পূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় সুস্পষ্ট প্রমাণসহ নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের দশজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে চট্টগ্রামের জে এম সেন পূজা মণ্ডপে হামলা চালিয়ে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে উসকে দিয়েছিল।"
ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, "রেজা কিবরিয়া ও নূরের নেতৃত্বাধীন যুব অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক মো. নাছির, সদস্য-সচিব মিজানুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের বায়েজিদ থানা শাখার আহ্বায়ক মো. রাসেল এবং ইয়ার মোহাম্মদ, মো. মিজান, গিয়াস উদ্দিন, ইয়াসিন আরাফাত, হাবিবুল্লাহ মিজান, মো. ইমন ও ইমরান হোসেনসহ আরো অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের মদদে চট্টগ্রামের জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছিল। হামলার পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও এবং স্থির চিত্র দেখে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।"
অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, "রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূররা দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার মদদদাতা হিসেবে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। রেজা কিবরিয়াদের অসৎ উদ্দেশ্য জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। এরা জামাত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছে। এদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে আরোও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।"
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, "রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন যুব অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান যুব অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান হামলার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন যুব অধিকার পরিষদ নেতা নাছির, মিজানুর ও রাসেল। এসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনাতেই জুমার নামাজ শেষে তাৎক্ষণিক মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। পরে সেই মিছিল থেকে পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়েছিল। যুব অধিকার পরিষদ নেতা মিজানুর আগে ছাত্র শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। ছাত্রশিবিরের ফেইসবুক গ্রুপ বাঁশের কেল্লার অ্যাডমিন প্যানেলেরও সে সদস্য ছিলো। পরিকল্পিতভাবে মিছিল করে তারা মণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালায়। হামলার পরপর অভিযান শুরু হলে তারা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র দেশের প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলায় রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের প্রত্যক্ষ মদদে রয়েছে। ভিডিও ফুটেজে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরেও রেজা-নূর গংরা তাদের সংগঠনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। নূরের মিথ্যাচার প্রমাণ করে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। এজন্যই সে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার না করে বরং তাদের পক্ষে কথা বলে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোকে আরোও উসকে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে আদর্শচ্যুত হয়ে রেজা কিবরিয়া এখন স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের পেইড এজেন্ট হিসেবে মাঠে নেমেছেন। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন গণ অধিকার পরিষদ নামে একটা রাজনৈতিক দোকানে যোগ দিয়ে তিনি নিজের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচন করেছেন। রেজা কিবরিয়ারা রাজনীতিতে সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত। সবসময় গিরগিটির মতো রং পরিবর্তন করায় তার স্বভাব। এসব লোকের কোন নীতি ও আদর্শ নেই। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি অপশক্তির দোসর জামাত-শিবিরের আপডেট ভার্সন গণ অধিকার পরিষদে যোগ দিয়ে রেজা কিবরিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বেঈমানী করেছেন। কোন স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরের সংগঠন মেনে নিবে না বাংলাদেশের জনগণ। জামাত-শিবিরের মুখপাত্র হিসেবে গণ অধিকার পরিষদে নেতৃত্ব দেয়ায় রেজা কিবরিয়ার মূল উদ্দেশ্য।"
তিনি আরোও বলেন,"বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তি সাম্প্রদায়িক সংগঠন গণ অধিকার পরিষদকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী সংগঠনকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। গণ অধিকার পরিষদ এর ব্যানারে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করাই রেজা কিবরিয়া ও নূরুল হক নূর গংদের মূল উদ্দেশ্য। চট্টগ্রামের ঘটনাই প্রমাণ করে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূর গংরা দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার মূল হোতা। এদেরকে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে। বিদেশে পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী তারেক জিয়া ও আইএসআইয়ের অর্থায়নে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূর গংরা দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস শুরু করেছে। এর আগেও নিষিদ্ধ ছাত্রশিবিরকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নুর গংরা জঙ্গি ও মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। নুরুর সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী শিবিরের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত যা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে এদেশে রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই। রাজপথে এদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জামাত-শিবিরের নিরাপদ আশ্রয়স্থল গণ, ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের সাইবার সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত গুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপরাধে এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অবিলম্বে জঙ্গি, সাম্প্রতিক ও সন্ত্রাসী সংগঠন গণ অধিকার পরিষদসহ ছাত্র, যুব অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দেশব্যাপী আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।"
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর দুই দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো যথাক্রমে-
১। চট্টগ্রামের জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার মদদদাতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূর গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২। জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন গণ অধিকার পরিষদসহ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন