চীনকে কড়া বার্তা ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

লাদাখ নিয়ে ফের চীনকে আক্রমণ করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সংসদে বললেন, ভারত সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করবে না।

লাদাখে ভারত ও চীনের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে এই প্রথম সংসদে মুখ খুললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বুঝিয়ে দিলেন, মস্কোয় চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতের শান্তি বৈঠক হলেও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভারত সামান্যতম জমি ছাড়তে রাজি নয়। তবে এ দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন, তা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিরোধী শিবির এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশের মনে।

 

করোনাকালে ভারতীয় সংসদের বিশেষ বর্ষাকালীন অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে। ২০ দিনের অধিবেশনে মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় দিন। পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লাদাখ সংঘাত নিয়ে সংসদকে তাঁর অভিমত জানান। যদিও এর আগে মস্কোয় এবং আম্বালায় রাফাল যুদ্ধবিমানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও রাজনাথ তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। এ দিন সংসদে তিনি যা বলেছেন, তা তাঁর আগের বক্তব্যের থেকে বিশেষ আলাদা নয়।

রাজনাথের অভিযোগ, ১৯৬০ সালে চীন এবং ভারতের সীমান্ত বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বার বার তা লঙ্ঘন করছে। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরনোর চেষ্টা করছে তারা। ভারতীয় সেনা তাদের প্রতিহত করছে। তারই জেরে জুন মাসে গালওয়ানের ঘটনা ঘটে এবং এখন প্যাংগংয়ের উত্তর এবং দক্ষি্ণ প্রান্তে সংঘর্ষ চলছে। গালওয়ানের ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। চীন কোনও হতাহতের কথা জানায়নি।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ভারত যুদ্ধ চায় না। শান্তিপূর্ণ ভাবে এই সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হলে ভারত কড়া জবাব দিতেও প্রস্তুত। সীমান্তে দেশের সেনা বাহিনী সে কাজই করেছে এবং করছে। একই সঙ্গে রাজনাথ জানিয়েছেন, মস্কোয় চীনের প্রতিনিধিদের এ কথাই বলে এসেছেন তিনি এবং দেশের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাজনাথের অভিযোগ, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালে সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের যে চুক্তি হয়েছিল, তাও লঙ্ঘন করছে চীন। এ বিষয়েও চীনকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী একাধিকবার জানিয়েছেন, যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার মীমাংসা করতে চায় ভারত।

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের প্রশ্ন রাজনাথ এ দিন সংসদে দাঁড়িয়ে যা বলেছেন, তার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বয়ান মিলছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গালওয়ান সংকটের পর বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, চীন ভারতের এক বিন্দু জমিও দখল করতে পারেনি। চীনের সেনা ভারতের সীমান্তে নেই। অথচ রাজনাথ বলছেন, চীন ১৯৬০ সালের সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ১৯৯৩ এবং '৯৬ সালের চুক্তিও লঙ্ঘন করেছে। দীর্ঘ সীমান্ত সংকটের পর চীন এবং ভারত দুই দেশই দাবি করেছে যে তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা মানছে না। তা হলে কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভুল ছিল? সংসদে বিবৃতি দিয়ে রাজনাথ কি সে কথাই প্রমাণ করলেন?

বস্তুত, এই প্রশ্ন আরও বেশি উঠছে কারণ, রাজনাথের বক্তব্যের পর এ বিষয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়নি। প্রতিরক্ষামন্ত্রীরলাদাখ বিবৃতির পরে কংগ্রেস সংসদের বাইরে গান্ধী মূর্তির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ দেখায়। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ''সরকার বিভিন্ন জায়গায় লাদাখ নিয়ে কথা বলছে। মন্ত্রীরা বিবৃতি দিচ্ছেন। অথচ সংসদে আমাদের প্রশ্ন করতে দেওয়া হচ্ছে না। গণতন্ত্রে এমনটা করা যায় না। আমরাও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। লাদাখ নিয়ে কোন আমরা নিজেদের মত জানাতে পারব না?'' লাদাখ প্রসঙ্গে গত কয়েক মাসে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কিন্তু সরকার কোনও জবাব দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি নিয়েও গত জুন মাসে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সাধারণত সংসদে বিরোধীদের উত্তর দেয় সরকারপক্ষ। এ বার সে প্রক্রিয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন