আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করার সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের দাবি
২৮ অক্টোবর ২০২১, চট্টগ্রামঃ গলায় ফাঁসির দড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন তরুণ। তাঁদের সামনের ব্যানারে তুলে ধরেছে মূল কথা: জলবায়ু দুর্যোগ আমাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সমান (Climate Crisis is a Death Penalty for us)। পাশেই তাঁদের বন্ধুরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া ও ২০৫০সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যতে নামিয়ে আনার দাবি তুলে ধরছে।
আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিকট কার্বন নির্গমন কমানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৮অক্টোবর২০২১) আইএসডিই-বাংলাদেশ (ISDE-Bangladesh), বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্ম জোট (Bangladesh Working Group on External Debt) ও উপকূলীয় জীবন যাত্রা ও পরিবেশ কর্ম জোট (Coastal Livelihood and Environmental Action Network)-এর যৌথ উদ্যোগে এ অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। প্রতীকী এ গণফাঁসির কর্মসূচিতে যোগ দেন শতাধিক তরুণসহ স্থানীয় জনসাধারণ।
প্রতীকী কর্মসূচিতে আইএসডিই-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, ইতিমধ্যে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের ঘনত্ব¡ পৃথিবীর সহনক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। একারণে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হারে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে অসহায় মৃত্যুর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইপিসিসি সতর্ক করে দিয়েছে যে, জলবায়ু দুর্যোগ ঠেকানোর সর্বশেষ সুযোগ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখনই কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ না নিতে পারলে একুশ শতকের শেষ নাগাদ মানব সভ্যতা রক্ষা করা যাবে না। কিন্তু উন্নত বিশ্বের নেতৃবৃন্দ শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। এমন একটি জরুরি অবস্থায় জাপান ও অস্ট্রেলিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলের ঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়েই চীন, জাপান ও মার্কিন কোম্পানিগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগ করছে। আমাদের জীবন নয়, মুনাফাই তাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছে।
প্রতীকী কর্মসূচিতে বক্তারা অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিবছর ১০০বিলিয়ন ডলার ক্ষতি পূরণ নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা, ২০৫০সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি জানান।
প্রতিকি ফাঁসি ও উদ্বাস্তু সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নবী উল হক, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হক, আইএসডিই এর কর্মসূচি কর্মকর্তা উম্মে রুমানা রুমি, রহিমা বেগম প্রমুখ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন