দেশের টাকা বাইরে যাবে কেন: হাইকোর্ট

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

যেখানে দুদক আছে, বিএফআইইউ আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে তারপরও আসামি কীভাবে পালিয়ে যায় বলে প্রশ্ন রেখেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, আসামি দেশত্যাগ করে চলে গেল আর আপনারা নীরব দর্শক হয়ে দেখছেন।

নিষেধাজ্ঞার পরও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের দেশত্যাগের খবরে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

 

গত ৭ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে কীভাবে আমজাদ হোসেন বিদেশ গেলেন তা দুদকের কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত। রোববার (১৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

আদালত শুনানিতে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আসামি দেশত্যাগ করে চলে গেল আর আপনারা নীরব দর্শক হয়ে দেখছেন। যেখানে দুদক আছে, বিএফআইইউ আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে তারপরও তিনি কীভাবে পালিয়ে যান?

হাইকোর্ট বলেন, মামলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে- তারপরও কীভাবে তিনি দেশত্যাগ করলেন?

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ইয়েস মাই লর্ড দুদকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে চলে গেলেন। মাই লর্ড আমরা সব সময় স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।

আদালত বলেন, বুঝলাম তো আপনারা কাজ করছেন, তাহলে গেল কী করে। কী পদক্ষেপ নিলেন? তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন?

দুদকের আইনজীবী বলেন, এটা নিয়ে আমার অফিসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কথা না বলে কিছু বলতে পারবো না।

তখন আদালত বলেন, তাহলে এটা আমাদের জানান, তার বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা ছিল কি না? আর নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকলে তিনি গেলেন কীভাবে। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে কি কাজ করলো? তাকে কেন ধরতে পারলো না।

আদালত আরও বলেন, কী কী মামলা করেছেন, কীভাবে ফ্রিজ করলেন, কীভাবে নিষেধাজ্ঞা হলো, কখন কীভাবে পালিয়ে গেল এগুলোর বিস্তারিত ইতিহাস আমাদের জানাবেন। আমরা আগামীকাল আদেশ দেবো। অনেক কাজ করছেন এটা তো মুখে বললেই হবে না। কিন্তু পালানো থামাতে পারছি না। এটা তো একটা সিরিয়াস ম্যাটার।

‘আমরা যদি এখন এসবের বিষয়ে লক্ষ্য না রাখি তাহলে তো দেশের টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা সিরিয়াস ফিনান্সিয়াল ক্রাইম। এ বিষয়ে আমাদের সিরিয়াস স্ট্যান্ড নেওয়া উচিত। দেশের টাকা দেশের বাইরে যাবে কেন।’

আদালত আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের অর্থনীতি ভালো থাকুক। দেশের মানুষ উপকৃত হোক, দেশের উন্নয়ন হোক, মানুষ যাতে ডাল ভাত আনন্দের সঙ্গে খেতে পারে। এভাবে টাকা যদি বাইরে চলে যায় তাহলে দেশের মানুষ কিভাবে সুন্দর জীবন যাপন করবে। এগুলা আমাদের দেখতে হবে। এটা দেখা দুদকের প্রধান দায়িত্ব।

গত ৭ নভেম্বর‘হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, দেশ ছাড়লেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের আমজাদ’শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। স্থলসীমান্ত দিয়ে বুধবার (৩ নভেম্বর) ভারত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরির আমজাদও রয়েছেন। তার পারিবারিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করেন আদালত। এ ছাড়া সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে আমজাদ হোসেনের বাংলাদেশি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন দিলে পরিচয় দেওয়ার পর তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন। এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, আমজাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। আমেরিকা, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা বিপুল অঙ্কের অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাসাদ গড়েছেন। আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে নতুন করে আরও ৮২৯ কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য মিলেছে। এর কিছুদিন আগে আরও ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। এর অনুসন্ধানও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে তার জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে ৯ কর্মচারীর নামে তার ২৫ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর আমজাদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দেন আদালত।

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ারের আবেদনের পর ২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ হিসাবগুলো জব্দের আদেশ দেন। তবে বেশির ভাগ হিসাবেই বর্তমানে কোনো টাকা নেই। হিসাবগুলোর মধ্যে ৬৭৯টিতে ব্যালেন্স শূন্য। শূন্য ব্যালেন্সের হিসাবগুলোর প্রতিটিতেই কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শতকোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও অনেক। বাকি ২৫৬টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৫৫ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

ইমিগ্রেশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- আমজাদ হোসেন বছরজুড়েই কলকাতা, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর ঘনঘন যাতায়াত করতেন। যা স্বাভাবিক যাতায়াত নয় বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর আগে বিদেশে অর্থ পাচার ও জালিয়াতির কারণে গত বছরের ৯ জানুয়ারি আমজাদ হোসেন ও পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ১১ থেকে ১৫ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে তিনি সিঙ্গাপুর ঘুরে আসেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন