নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ও কিছু কথা

।। মিতা রহমান।।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ২৫ নভেম্বর। প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য 'নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর, সমঅধিকার নিশ্চিত কর'।

১৯৬০ সালের এই দিনে ডোমিনিকান রিপাবলিকে বর্বরোচিত এক নির্যাতনে তিন নারী মারা যান। তাদের স্মরণ করে ১৯৮১ সালে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনবিরোধী দিবস ঘোষণা করা হয়। এর পর ১৯৯৩ সালে আসে আরেক ঘোষণা। সেবার ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর এ সময়কে করা হয় 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ'। তখন থেকে ২৫ নভেম্বর 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ' প্রথম পালন করা হয় ১৯৯৭ সালে।

নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।’
আমাদের জাতীয় কবি ও জাতিসত্ত্বার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
‘সাম্যের গান গাই,
আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোন ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ-তাপ, বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’

নেপোলিয়নের জাতি গড়ার কারিগর সেই নারী আর কাজী নজরুলের সাম্যবাদের সেই নারী আজ শুধু ইতিহাসের পাতায়, কবিতার খাতায় সোনালি অক্ষরেই শোভা পাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতার রূপ দেখে আমাদের তা-ই মনে হয়।

আজ এই সভ্য জগতে বাস করেও আমরা আদিমতাকে বজায় রেখে নারীর প্রতি হিংস্রতা চালিয়ে যাই। নারীর প্রতি অবিচার, অনধিকার, অস্বীকার, মারপিট, প্রতিটি কাজে দোষ ধরা ইত্যাদিকে আমরা ছোট করেই দেখি কিংবা কেউ কেউ দেখিই না। নারীর প্রতি নৃশংসতার অন্যতম কারণ হতে পারে ক্ষমতার দাপট, প্রশাসনের উদাসীনতা, স্বাভাবিক বিষয় ভেবে প্রশাসনকে না জানানো, নারীদের চুপ করে থাকা, ভাগ্য বলে মেনে নেয়া প্রভৃতি।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আমরা সবাই হয়তো নেপোলিয়ন বা নজরুলের মত করে ভাবতে পারি না। তবে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতা, চিন্তাধারা বদলাতে পারি।

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশের তরুণ-যুবসমাজকে সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে অভিভাবক, শিক্ষকসমাজ ও এলাকার রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। নারী নির্যাতনের সংস্কৃতিকে সমর্থন করে, এমন পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ নিরোধের লক্ষ্যে জাতীয় নীতি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

নারীর বিষয়ে সমাজের পুরুষের বিশেষ করে তরুণ সমাজের যে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা, তা থেকে আধুনিক যুক্তিযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য সচেতনতার প্রয়োজন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজকে সব ক্ষেত্রে সম–অংশগ্রহণের সুযোগ করে না দিলে এবং নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধ না হলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারবে না।

ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, উত্ত্যক্ত, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, বে-আইনি ফতোয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কিশোরী নির্যাতন বন্ধে নীরবতা ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নিমূ‌র্লের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সচেতনতা মূলক কর্মসূচিতে নারী ও কন্যাশিশুদের যুক্ত করতে হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নিমূ‌র্ল কর্মসূচিতে পুরুষসমাজকে যুক্ত করে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

যুবসমাজকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। স্বাভাবিক, সুস্থ ও সমতা ভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণে তাই সব প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। তাহলেই এ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

[ মতামত : সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও সমন্বয়কারী, জাতীয় নারী আন্দোলন ]

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন