সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
বিশ্বব্যাপী উদারতা দিবস গিভিংটুইসডে একযোগে উদযাপন করা হয় নভেম্বর মাসের শেষ মঙ্গলবার।এ বছর ৩০শে নভেম্বর সারাবিশ্বে একযোগে উদযাপন করা হবে বিশ্ব উদারতা দিবস অর্থাৎ গিভিংটুইসডে। গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস হল বিশ্বব্যাপী একটি উদারতা আন্দোলন যা প্রতি বছর পালিত হয় এবং মানুষের আমূল উদারতার শক্তি প্রকাশ করে থাকে। এই প্রথমবারের মতো দেশে 'বিশ্ব উদারতা দিবস' উদযাপন করতে যাচ্ছে অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (অদির) বাংলাদেশ।
গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস ২০১২ সালে একটি সাধারণ ধারণা হিসাবে রচিত হয়েছিল। এটি এমন একটি দিন যা মানুষকে ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করে৷ তারপর থেকে ধারণাটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে যা কোটি কোটি মানুষকে উদার হতে, সহযোগিতা করতে এবং উদযাপন করতে অনুপ্রাণিত করে। গিভিংটুইসডে সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাবনা এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের উদারতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের কল্যাণে তাদের সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে কাজ করে।
সময়, সম্পদ এবং প্রতিভা বিকাশে অনুদানকে উত্সাহিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস। এটি অংশীদারদের একটি অনন্য মিশ্রণের সম্মিলিত শক্তিকে একত্রিত করে। অলাভজনক, নাগরিক সংস্থা, ব্যবসা এবং কর্পোরেশন, সেইসাথে পরিবার এবং ব্যক্তির ছোট কাজগুলিকে উৎসাহিত করতে এবং দানের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে বিশ্বজুড়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এবারের বিশ্ব উদারতা দিবস বা গিভিংটুইসডে'র স্লোগান: "আমাদের কাছে দুটি দিন রয়েছে যা অর্থনীতির জন্য ভাল। এখন আমাদের কাছে এমন একটি দিন রয়েছে যা সম্প্রদায়ের জন্যও ভাল। বিশ্বের প্রায় ৭৫টির বেশি দেশে প্রতিবছর বিশ্ব উদারতা দিবস বা গিভিংটুইসডে পালিত । এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে দিবসটি ব্যাপকভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (অদির) বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
অদির বাংলাদেশ সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক শাকিল আজাদ মনন জিবিনিউজ২৪ কে জানান, 'প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যানে সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দাতা সংস্হা সামাজিক দ্বায়বদ্ধতায় থেকে উদারতা অর্থাৎ গিভিং প্র্যাকটিস অব্যহত রাথা। গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস এদেশে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। এযাবত দেশে কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা সরকার কেউই এই দিবসটি উদযাপন করেনি ।এটি একটি ভাল উদ্যোগ। আমরা অদির বাংলাদেশ এই দিবসটিকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উদ্ধুদ্ধ করতে চাই। সমাজে প্রতিনিয়ত নানা রকম অবহেলার শিকার হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিশুরা। বহু প্রতিবন্ধী শিশু আমাদের দেশে অসহায় জীবনযাপন করছে। একটু উদারতা বা যত্ন আর স্নেহ ভালোবাসা পেলে প্রতিবন্ধীরাও যে স্বাবলম্বী হতে পারে সেটা আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা।'
তিনি জানান, 'প্রতিবন্ধিতা-বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী সেই শিশুকে প্রতিবন্ধী বলা হয় যে শিশু অসুস্থতার কারণে, চিকিৎসাজনিত ত্রুটি, দুর্ঘটনায় বা জন্মগতভাবে যদি কারও শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দরুন স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে লোপ পায় তাহলে। জাতীয় শিশু নীতিমালাতেও প্রতিবন্ধী শিশুসহ সব শিশুর অধিকার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে যদিও বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন চিত্র প্রকাশ করে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মেধার বিকাশে অন্তরায়।নানারকম কুসংস্কারে জর্জরিত এ সমাজে প্রতিবন্ধীদের বাতিলের খাতায় ফেলে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নিজ পরিবারেও প্রতিবন্ধী শিশুরা নিগৃহীত হয় এমনকি পরিবারের বোঝাও মনে করা হয় কখনো কখনো। অবহেলা, লাঞ্চনা গঞ্চনার শিকার হয় তারা জীবনের প্রতি পদে পদে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাসেবা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১-এও। তার পরও দেখা যায় শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ৯নং ধারায় প্রতিবন্ধিতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘‘প্রতিবন্ধিতা’’ অর্থ যেকোন কারণে ঘটিত দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ীভাবে কোন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত, বিকাশগত বা ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্ততা বা প্রতিকূলতা এবং উক্ত ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিগত ও পরিবেশগত বাধার পারস্পরিক প্রভাব, যাহার কারণে উক্ত ব্যক্তি সমতার ভিত্তিতে সমাজে পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হন।'
তিনি আরও জানান, 'এ আইনের ১১নং ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার’’ অর্থ ধারা ১৬ তে উল্লিখিত এক বা একাধিক যে কোন অধিকার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সংক্রান্ত আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইন বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন দলিলে উল্লিখিত অন্য কোন অধিকার, মানবাধিকার বা মৌলিক অধিকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরও যে সমাজের সর্বস্তরে যেকোন সেবাগ্রহণে স্বাভাবিক মানুষদের মতই সমানসুযোগ প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে তা বলা হয়েছে এ অাইনের ১৩নং ধারায় যেমন, ‘‘প্রবেশগম্যতা’’ অর্থ ভৌত অবকাঠামো, যানবাহন, যোগাযোগ, তথ্য, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জনসাধারণের জন্য প্রাপ্য সকল সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যান্যদের মত প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমসুযোগ ও সমআচরণ প্রাপ্তির অধিকার।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন