সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
সারাবিশ্বে একযোগে পালিত হলো গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস। বিশ্বব্যাপী একটি উদারতা আন্দোলন হিসেবে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস একযোগে উদযাপন করা হয় নভেম্বর মাসের শেষ মঙ্গলবার। এই প্রথমবারের মতো দেশে 'গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস' পালন করে অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (অদির) বাংলাদেশ।
আজ মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও অদির বাংলাদেশ সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব শাকিল আজাদ মনন ও অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (অদির) বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মিসেস কোহিনূর আজাদ মলি'র নেতৃত্বে গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে 'অদির বাংলাদেশ'। শোভাযাত্রাটি রাজধানী ঢাকার মগবাজার গাবতলা হতে শুরু হয়ে হাতিরঝিল, বড় মগবাজারসহ বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণঙ্করে অদির প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় অদির প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
এবারের গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবসের স্লোগান: "আমাদের কাছে দুটি দিন রয়েছে যা অর্থনীতির জন্য ভাল। এখন আমাদের কাছে এমন একটি দিন রয়েছে যা সম্প্রদায়ের জন্যও ভাল।'' বিশ্বের প্রায় ৭৫টির বেশি দেশে প্রতিবছর গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস পালিত হয় । এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে দিবসটি ব্যাপকভাবে ভাবে পালন করে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (অদির) বাংলাদেশ। সংস্থাটি প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
গিভিংটুইসডে বা বিশ্ব উদারতা দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক শাকিল আজাদ মনন জিবিনিউজ২৪ কে জানান, 'মহাকালের স্রোতে ভাসতে ভাসতে স্বার্থান্বেষী মানুষ বিভক্ত হয়েছে অসংখ্য জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম বা দেশে; লিপ্ত হয়েছে হাজারোও মতানৈক্যে, যুদ্ধে। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি হয়েছে এসওএস, সেলভ্যাসন আর্মি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউনাইটেড নেশন, রেড ক্রস, স্কাউটিং, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। সবই হয়েছে মানুষের উদারতার টানে। কিন্তু কোটি কোটি মানুষের অসুখ-বিসুখ, দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন ইত্যাদিকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাধান করা সম্ভব না। মানুষের অগণিত সমস্যাকে পুরোপুরি সমাধান দিতে না পারলেও খণ্ড খণ্ডভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে উদার মানসিকতা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেও তা অনেকাংশে লাঘব হবে। অন্তত প্রতিটি সমস্যা জর্জরিত মানুষ তার মানসিক হাহাকার কমানোর মাধ্যমে কোমর শক্ত করে দাঁড়াতে পারবে।'
তিনি জানান, সভ্যতার শুরু থেকে উদারতার বিনিসুতার মালার মধ্য দিয়েই পরিবার, দল, গোত্র ও এমনকি জাতির জন্ম হয়েছে। উদারতার তাড়নায় মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, একে অপরের দুঃখ লাঘবের জন্য সচেষ্ট হয়েছে, নতুন কিছু আবিস্কারের মাধ্যমে মানব সমাজের উপকার করেছে। পক্ষান্তরে এটাও উপলব্ধি করেছে, মানুষ যেহেতু জন্মগতভাবে আত্মকেন্দ্রিক, সেহেতু উদারতার মালা দিয়েই কেবল এই স্বার্থপরতার প্রাচীরকে ভাঙা সম্ভব।'
তিনি আরও জানান, 'আমরা অদির বাংলাদেশ এই দিবসটিকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উদ্ধুদ্ধ করতে চাই। সমাজে প্রতিনিয়ত নানা রকম অবহেলার শিকার হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিশুরা। বহু প্রতিবন্ধী শিশু আমাদের দেশে অসহায় জীবনযাপন করছে। একটু উদারতা বা যত্ন আর স্নেহ ভালোবাসা পেলে প্রতিবন্ধীরাও যে স্বাবলম্বী হতে পারে সেটা আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা।'
অর্গানাইজেশন ফর ডিসএবলড ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড রাইটস (অদির) বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মিসেস কোহিনূর আজাদ মলি জিবিনিউজ২৪ কে জানান, 'উদারতার পথযাত্রা শুধু ওষুধ বা অর্থ দানের মধ্য দিয়ে হয় না; বিপদে সাহস, দুঃসময়ে আশ্রয়, ক্ষুধার্ত অবস্থায় সামান্য খাবার, বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দেওয়া, রোগীকে দুদণ্ড হাসিয়ে শান্তি দেওয়া, অন্ধকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করা, মানুষকে শিক্ষার আলোতে আনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া অথবা সুচিন্তিত বুদ্ধি বা কারিগরি বুদ্ধিদান করেও তা হতে পারে- শুধু প্রয়োজন উদার প্রাণের প্রসারিত হাত।'
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন