-মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে: জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান যা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আর প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সমস্যার মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করে তা নিষ্পত্তি, যথোপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে বলে মত দেন তিনি। গতকাল ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সাম্প্রতিক চার বছর: টেকসই সমাধান নিশ্চিতের চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সাইড ইভেন্টে বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব বিষয় জানানো হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন উপলক্ষে বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক ইভেন্টটির আয়োজন করে। ভার্চুয়াল এই ইভেন্টটি জাতিসংঘের সদস্য দেশ, জাতিসংঘ সদরদপ্তর ও এর সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবর্গের বিপুল উপস্থিতি, তাদের বক্তব্য, পরামর্শ ও এতদসংশ্লিষ্ট নানা উপস্থাপনার কারণে ভিন্ন মাত্রা পায়। আলোচনা পর্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া (আইআইএমএম) -এর প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান। পর্বটির সঞ্চালক ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রায়। ইভেন্টের উদ্বোধনী বক্তব্যে স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও সর্বোচ্চ মানবিক উদারতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সীমান্ত উন্মুক্ত করে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছেন মর্মে উল্লেখ করেন। অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের ব্যর্থতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্ট বর্তমান অচলাবস্থার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি অবনতির বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সংকটের বহুমাত্রিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করে এবং তা আমলে নিয়ে এর স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। দায়বদ্ধতা নিরূপণের বিষয়টির উদাহরণ টেনে তিনি আইআইএমএমসহ আন্তর্জাতিক তদন্ত ও জুডিশিয়াল প্রক্রিয়াসমূহকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা এবং এই নৃশংস অপরাধের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান রাবাব ফাতিমা। এছাড়া প্রদত্ত বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করতে আসিয়ানসহ আঞ্চলিক অন্য দেশগুলোকে আরও জোরদার ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান রাষ্ট্রদূত। ইভেন্টটিতে আরও বক্তব্য দেন গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়ের আইন-উপদেষ্টা হুসেইন থামাসি, সংঘাতকালে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি মিজ্ প্রমিলা প্যাটেন, নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশনারের পরিচালক মিজ্ রুভেন মেনিক দিওলা, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ-এ গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মধ্যকার মামলার গাম্বিয়া পক্ষের আইন উপদেষ্টা পায়াম আখওয়ান, গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্টের নির্বাহী পরিচালক সাইমন অ্যাডামস্, গ্লোবাল জাস্টিজ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট মিজ্ আকিলা রাধা কৃষ্ণান, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের মহাপরিচালক ড. ওয়াকার উদ্দিন। এছাড়া জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরব, তুরস্ক, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস্ ও ইন্দোনেশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ও প্রতিনিধিগণ সাইড ইভেন্টটিতে বক্তব্য দেন। ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণসমূহ ও তথ্যাদি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য অংশীজনদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য আইআইএমএম এর প্রধান হিসেবে যে সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন তা তুলে ধরেন নিকোলাস কৌমজিয়ান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন