জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ‘শাস্তি আপনার প্রাপ্য।’
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে এক পোস্টে তিনি একথা লিখেছেন।
পোস্টে তারানা হালিম লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মুরাদ হাসান, আপনি কর্মক্ষেত্রে যা করেছেন তা কনফ্লিক্ট অব ইনট্রেস্ট, আপনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা বিকৃত রুচির, অশালীন, নারীর প্রতি অবমাননাকর। আপনি দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন, শাস্তি আপনার প্রাপ্য।’
পোস্টে সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাসূল করিম (সা:) বলেছেন, ‘ভালো মানুষ নারীকে সম্মান করে।’ তাই আপনি দোষী থাকবেন দুনিয়াতে ও আখিরাতে। আমরা যারা দলকে ভালোবাসি তারা জানি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর হতে হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছ থেকে এটাই আশা করি আমরা। ভবিষ্যতে সব লুটেরা, ঘুষখোর, লম্পটদের বিরুদ্ধে আপনার এমন কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক। এই দৃষ্টান্ত যেন সকলের জন্য শিক্ষার কারণ হয়।’
এর আগে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্যকে নিয়ে ডা. মুরাদ হাসানের ‘নারীবিদ্বেষী’ বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ফাঁস হয়েছে একটি ফোনালাপ। দাবি করা হচ্ছে, এই কথোপকথনটি ডা. মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। ফোনালাপে থাকা চিত্রনায়ক ইমন ইতোমধ্যে সেটি স্বীকারও করেছেন। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
এর আগে নানাভাবে এই প্রতিমন্ত্রী আলোচনায় আসেন। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোতে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান অপর আলোচক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী পাপিয়াকে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি নিজে একজন ‘চিকিৎসক হিসেবে’ বিএনপির এই নেত্রীর (পাপিয়া) ‘চিকিৎসা দরকার’ মনে করেন বলেও মন্তব্য করেন। এ সময় দু’জনের মধ্যে তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়।
এর দুদিন আগেই ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক নারী সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান। প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে ওই নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। এসময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করতে শোনা যায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে।
এরই মধ্যে এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ৪০ নারী অধিকারকর্মী। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে ‘লিঙ্গবাদী’, ‘কুৎসিত যৌন হয়রানিমূলক’ বলেও আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেন তারা। বিবৃতিতে নারী অধিকারকর্মীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পদে আসীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর মুখে এই ভাষা বাংলাদেশের আপামর নারীদের অপমান এবং অসম্মান করেছে বলে আমরা মনে করি। এর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে সমাজ এবং রাষ্ট্রে কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার বৈধতা দেওয়া হয়।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন