জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
দেশে গত কয়েক বছর ধরে নৌ-দুর্ঘটনা ও এতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান এবং গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত ৬ বছরে নৌ দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩ হাজার ৩৪৫ জন।
ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বরগুনাগামী লঞ্চে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আগুন লাগার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভয়াবহ এই নৌ দুর্ঘটনার পর নদীপথে হতাহতের বিষয়টি ফের আলোচনায় ওঠে এসেছে।
অতীতেও এমন বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন লঞ্চযাত্রীরা। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে, গ্রেফতারও হয়েছেন দায়ীরা। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু অধিকাংশ নৌ দুর্ঘটনাই সীমাবদ্ধ থাকে তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলেই। তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতে ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়ানো জন্য যে সুপারিশ করা হয়, তা আর বাস্তবে রূপ নেওয়ার কোনো নজির দেখা যায়নি।
দেশে নৌ দূর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোড জানিয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭১২টি নৌ দুর্ঘটনায় ১৮৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৬৬ জন। এর সঙ্গে গতরাতের এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে ইতোমধ্যে ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বার্ষিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে সেভ দ্য রোড জানায়, নদীপথে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ৩ হাজার ৪৮৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৩ হাজার ১১৭ জন। বৃহস্পতিবার রাতে নিহতদের সংখ্যা সহ চলতি বছর এ পর্যন্ত নৌ দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২২৮ জন। গত ছয় বছরে নৌ দূর্ঘটনায় নিহতের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪৫ জন। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, ২০২১ সালের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ সংস্থার পরিসংখ্যানে ৬ বছরের সঠিক তথ্য উঠে আসবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ১,২০৩টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ৯৫৩ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৭২৪ জন এবং নারী ২২৯ জন। আহত হন ২৫৬ জন পুরুষ এবং ৬৮ জন নারী।
২০১৯ সালে মোট ৮২০টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬৮৫ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৬৬৮ জনকে। ২০১৮ সালে মোট ৫০৮টি নৌ-দুর্ঘটনার তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস। এসব দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৪৫৫ জনকে।
২০১৮ সালে মোট ৫০৮টি নৌ-দুর্ঘটনার তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস। এসব দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৪৫৫ জনকে।
২০১৭ সালে ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে মোট ৫৩০টি নৌ-দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। এসব দুর্ঘটনায় ৬৪৩ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৫৭১ জনকে।
২০১৬ সালে মোট ৪২৫টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪১০ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৩২১ জনকে।
সর্বশেষ, বৃহস্পিতবার দিনগত রাতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ তে আগুন লাগে। লঞ্চটি রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠি টার্মিনালের কাছাকাছি পৌঁছালে ইঞ্জিনরুমে লাগা আগুন মুহূর্তেই পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। পরে লঞ্চটি সদর উপজেলার দিয়াকুল এলাকায় গিয়ে নদীর তীরে নোঙর করে। খবর পেয়ে ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪০ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন