জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা জমে উঠেছে। নির্বাচনী আলোচনা চলছে উপজেলার হাটবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গ্রাম্য দোকানপাট, পাড়া-মহল্লা সবখানে। আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ঘিরেই আলোচনা বেশি।
উপজেলার রহিমপুর, শমশেরনগর ও আলীনগর ইউনিয়নে ৫ জন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দলীয় প্রার্থীরা।
আগামী ৫ জানুয়ারি কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ৫ জন। ৩টি ইউপিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে নির্বাচনে জয় পাওয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন দলীয় প্রার্থীরা।
এর মধ্যে রহিমপুর ইউনিয়নে বর্তমান রেচয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল, শমশেরনগর ইউনিয়নে আব্দুল মালিক বাবুল ও আলীনগর ইউনিয়নে ফজলুল হক বাদশাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ৩টি ইউনিয়নে ঐক্যবদ্ধ নয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা; এ কারণে সংকটে নৌকা।
উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নে নৌকাবঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রহিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুনেল আহমদ তরফদার, শমশেরনগর ইউনিয়নে নৌকাবঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জুয়েল আহমদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবিএম আরিফুজ্জামান অপু, সাবেক সাবেক চেয়ারম্যান মো: আব্দুল গফুর ও আলীনগর ইউনিয়নে নৌকাবঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মুর্শেদ রাজু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
রহিমপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রহিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুনেল আহমদ তরফদার বলেন, গত নির্বাচনেও আমি দলীয় প্রার্থী ছিলাম। এবছরও আমি দলীয় প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। নৌকা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা বিরোধী ব্যক্তি এবার দলের মনোনয়ন পেলেন। তৃণমুলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের চাপে আমি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্র্তমান চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল।
তিনি বলেন, ‘দল ক্ষমতায় আছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি, উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু এখন নির্বাচনে নিজের দলের লোকের সঙ্গেই লড়াই করতে হচ্ছে। কিছু লোকতো বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গেও আছেন। মূলত দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় পরিশ্রম করতে হচ্ছে বেশি। বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে জয় সহজ হতো।’
শমশেরগর ইউনিয়নে নৌকাবঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জুয়েল আহমদ বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক কোন ফ্যাক্টর নয়। দীর্ঘদিন জনগণের সুখ-দু:খে পাশে, ছিলাম। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় জীবন বাজি রেখে জনগণের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। এবার আমি স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে জনগণ।
এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মালিক বাবুল। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে তিনি চাপে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, দলের অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিরা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এরা দলের লোক হয়ে দলের ক্ষতি করছেন।
আলীনগর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের সুখ-দু:খে পাশে ছিলাম। জনগন আবারো বিপুল ভোটে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। বিদ্রোহী প্রার্থী দলের কিছুটাতো ক্ষতি করবে। এ ইউনিয়নে নৌকাবঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মুর্শেদ রাজু বলেন, আলীনগর ইউনিয়নবাসী বিগত ২০ বছর ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে আমি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। ইনশাল্লাহ জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।
কমলগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সমাজসেবক পতনঊষার ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান চিনু বলেন, ভোটারদের ক্ষোভ আছে ক্ষমতাসীনদের ওপর। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেকেই প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাও করছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. এএসএম আজাদুর রহমান বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের এমনিতেই সদস্যপদ চলে যায়। তিনি বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন থেকেই নৌকা বের হয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, ৫ম ধাপে আগামি ৫ জানুয়ারি কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৩, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০৬ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩২৭ জনসহ মোট ৪৬৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন