জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বাদ দিতে ১২ সংস্থা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাকরুয়াকে চিঠি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে এই খবর জানানো হয়েছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর পাঠানো চিঠিটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলানটারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পারসিটিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনা ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।
চিঠিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ২০০৪ সালের র্যাব গঠনের শুরু থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম করে দেওয়ার বিস্তর অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তারা।
তারা বলেছে, ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধ করে এলেও বাংলাদেশ সরকার তাদের পুরস্কৃত করছে ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে ৬ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ২০১২ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের যে নীতি নিয়েছিল, তা জাতিসংঘ মিশনে আসা বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে আসা র্যাব সদস্যদের বিষয়ে কোনো যাচাই না করেই তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের অধীনে বাংলাদেশের ২০১৯ সালের ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়। কমিটি জানায়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাথে কাজ করা কর্মীদেরকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে মোতায়েন করার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
চিঠিতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে একটি যাচাই পদ্ধতি চালু করা উচিত যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনের অভিযোগও তদন্ত করে দেখা হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদসহ র্যাবের ৭ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বেনজীর আহমেদের। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে ১৩৬টি বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড এবং ১০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। তার অধীনে থাকা অফিসারদের দ্বারাই এসব কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব প্রধান বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখিত অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট। যারা র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছে তারা বাংলাদেশ সরকার এবং দেশকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে।
এইচআরডব্লিউ আরো উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো জানিয়েছে, অফিসাররা তাদের বাড়িতে যেয়ে তাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে গুম করা হয়নি, এ ধরণের মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন তারা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন