জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
সংসদে পাস হওয়া ইসি গঠন আইনের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ আইনটি পাসকে সরকারের কূটকৌশল আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে আগামীতে দিনের বেলা নতুন কৌশলে নির্বাচন করবে কি না তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন আছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব ইসিকে সহায়তা করা। কিন্তু না করলে কী হবে তা বলা নেই। এসব নিয়ে একটি পুরো আইন হওয়া উচিত। জনগণ মনে করে সরকার আইন করার নামে তাদের সাথে প্রহসন করছে। এই আইনটির সাথে ২০১৭ সালের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপনে খুব একটা অমিল নেই। কোনো আইন মানুষের অকল্যাণে হলে তা করার থেকে না করাই ভালো। সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভূক্তির যোগ্যতা একটি তারা হচ্ছে সরকারের অনুগত হওয়া। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সার্চ কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হলে তাদেরও বিতর্কিত করা হবে। তাছাড়া এখন যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ৪৮নং অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে এই আইন করা হলে তা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। এই আইনে প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির সদস্য নির্বাচনের সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার বিধান যুক্ত করার দাবি করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সংবিধানের ১১৮নং অনুচ্ছেদে শ্যাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়িই কাজ করতে হবে। আইনে না থাকলেও যেটা হবে তা হল, অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। সে প্যানেল যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি পাঁচজন নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। তবে এটা যে অসাংবিধানিক তা নয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। এটি একটি অসাংবিধানিক ফর্মুলা বলে উল্লেখ করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আইনটি প্রণয়ন ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেরিতে হলেও আইনটি হচ্ছে। অনেকে আইনটিকে তড়িগড়ির কথা বলেছেন। কিন্তু এর আগে তো বলা হয়েছিল ১৫ দিনে এই আইন করা সম্ভব। তাহলে তড়িঘড়ির প্রশ্ন আসছে কেন? সার্চ কমিটির সদস্য সংসদ থেকে এলে বিতর্ক হতো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন শতভাগ আমলা নির্ভর উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশে কী বিচারপতি ও আমলা ছাড়া বিশ্বাস করার মতো কেউ নেই? রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের কী বিশ্বাস করা যায় না? আওয়ামী লীগ এত বড় রাজনৈতিক দল বলেন আপনাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হয়নি তাহলে আপনারাও কেন বিচারপতি ও আমলার ওপর নির্ভর করবেন?
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে আমলা এরশাদ, বিএনপি, আওয়ামী লীগ সব সরকারের আমলে আরামে চাকরি করেছেন পরে চাকরি শেষে আবার পঁচ বছরের জন্য সিইসি হয়েছেন। তারা ওপরেরটা খান নিচেরটাও খান। স্পিকারের মাধ্যমে মনোনয়নে দুইজন সংসদ সদস্যকে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেন তিনি। জাপার রওশন আরা মান্নান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকার এই আইনটি করছে। কিন্তু সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ রেখে কিভাবে আইনটি হবে জানি না। আলোচনা ছাড়া তাড়াহুড়া করে আইনটি পাস করলে দেশে আবারো অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। আশ করব স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বজায় রেখে সরকার সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠন করবেন। তাহলে দেশটি শান্ত থাকবে।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই আইনের বিষয়ে মানুষের কৌতূহল রয়েছে। সকলে এটা নিয়ে কথা বলছেন। এই আইনটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সাথে আলোচনা করলে আরো সমৃদ্ধ হতো। এই আইনে বিগত দুটি কমিশনকে যে হেফাজত দেওয়া হয়েছে এটার দরকার ছিল না। এখানে তত্ত্বাধবায়ক সরকার আনার কথা বলে বিএনপি তাদের পূর্বের বক্তব্য অনুযায়ী ‘পাগল আর কোনো শিশু’কে আনতে চান সেটা বুঝতে পারছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নেই। এই ইসির সুবিধাভোগী ছাড়া সকলেই বলবে তারা ব্যর্থ। সরকারের আকাঙ্খার বাইরে কিছু করতে পারে না কমিশন।
তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে গিয়ে যে আইন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি, এই আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটিতে বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্খার সঙ্গে মিল নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন