নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে যা হলো সংসদে

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। সংসদের ভেতরে-বাইরে তুমুল সমালোচনা থাকলেও দ্রুততম সময়ে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

বিলটি পাসের আগে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্য এটি জনমত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব জানালে তা নাকচ হয়ে যায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত রোববার বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ৭ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।

 

ইসি গঠনে বিল পাসের আলোচনায় বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেছেন, এ আইন লোকদেখানো। এ আইনের মাধ্যমে যা হবে, সেটি হবে সরকারের নির্বাচনবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখন যে পরিস্থিতি তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনই সম্ভব নয়। এ আইনের সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও। তারা বলছেন, বিলটি গণতান্ত্রিকভাবে যথাযথা প্রক্রিয়ায় সংসদে ওঠেনি।বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যাঁরা বাইরে কথা বলেন, তাঁদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসলা, সেটা আর থাকেনি। সে জন্যই এখন তারা উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁরা বলছেন, এটা তড়িঘড়ি করে কেন করছেন। এটা ইসি করার আইন হয়নি, হয়েছে সার্চ কমিটি গঠন করার আইন। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাঁরা তালগাছ চান। তাঁরা কিছুই মানেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তালগাছটা তাঁদের না হয়।

জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রস্তাব তুললে আইনের বিরোধীতা করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব দিয়ে নীতিনির্ধারণী আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও গণফোরামের ১০ সাংসদ। আর বিলের ওপর সংশোধনী দিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ১২ সাংসদ। সা

বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হলেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অনুসন্ধান কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী হবেন—এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুসন্ধান কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। আগে তা ১০ দিন ছিল। বিলের শিরোনামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হবে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’।

আইনের নামে আইওয়াশ: বিএনপি

ইসি গঠন বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, জনগণ মনে করে, সরকার আইন করার নামে তাঁদের সঙ্গে প্রহসন করছে। এ আইনের সঙ্গে ২০১৭ সালের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপনে খুব একটা অমিল নেই। কোনো আইন মানুষের অকল্যাণে হলে তা করার থেকে না করাই ভালো। সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতার একটি হচ্ছে সরকারের অনুগত হওয়া। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সার্চ কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হলে তাঁদেরও বিতর্কিত করা হবে।

তিনি দাবি করেন, এ আইনে জনগণ হতাশ। তারা এটা চায় না। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৫-৯৬ ও ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলেন, তারা সেটা চায়। অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে। প্রমাণ করতে পারবেন না, গত দুটি কমিশন জনগণকে আস্থাশীল করতে পেরেছে।

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নামে নাটক-প্রহসন বাদ দিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার দ্বার উন্মোচন করুন। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব, আপনি উদ্যোগ নিন। সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসে নির্বাচনকালে কীভাবে নির্বাচনটি করবেন, সেটা ঠিক করুন। সরকারে থাকতে একরকম বক্তব্য আর বিরোধী দলে গেলে অন্য রকম বক্তব্য ঠিক নয়।’

বিএনপির হারুনুর রশীদ একটি নির্বাচন কমিশন আইন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে, নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব ইসিকে সহায়তা করা। কিন্তু তা না করলে কী হবে, তা বলা নেই। এসব নিয়ে একটি পুরো আইন হওয়া উচিত। এ আইনকে সরকারের কূটকৌশল আখ্যা দিয়ে হারুন বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দিনের বেলা নতুন কৌশলে নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন আছে। মানুষ সেটা জানতে চায়। এখন যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তাতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘খসড়া আইনটির সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্য জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে। এ কমিটিতে সরকারি দল সংসদের প্রধান বিরোধী দল, তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি যদি থাকত তাহলে স্বচ্ছতা থাকত।’

তিনি বলেন, সঠিকভাবে নির্বাচন না হওয়ার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তিনি বলেন, ইসি গঠনে সংবিধানে আইন করার কথা বলা আছে, কিন্তু অংশীজনের সঙ্গে কথা না বলে তাড়াহুড়ো করে আইন করা ‘আইওয়াশ’ ছাড়া কিছুই নয়। এ আইন কেবল বিএনপি নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কঠোর সমালোচনা করেছে। এটাকে ইসি গঠনের আইন না বলে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন বলা যেতে পারে।

সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রপতি কোনো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে একটি ইল্যুশন হিসেবে সামনে আনা হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি ছিল। এখন সে ঘাটতি আরও অনেক বেড়েছে। জাতীয় থেকে স্থানীয় সব নির্বাচন মাগুরার নির্বাচনের চেয়ে অনেক খারাপ হয়। সুতরাং ১৯৯৬ সালের চেয়ে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও বেশি দরকার।

তিনি আরও বলেন, আদালত বলেছিলেন, সংসদ চাইলে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হতে পারে। সংবিধান সংশোধন কমিটিতে সব দল এ ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিল। পরে অজানা কারণে এটি বাতিল করা হয়। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনই সম্ভব নয়।

ইসি গঠন আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: জাতীয় পার্টি

আইনটি প্রণয়ন ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘দেরিতে হলেও আইনটি হচ্ছে। অনেকে তড়িঘড়ি কথা বলেছেন। কিন্তু এর আগে বলা হয়েছিল ১৫ দিনে এ আইন করা সম্ভব। তাহলে তড়িঘড়ি প্রশ্ন আসছে কেন? তিনি বলেন, পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা না আসা পর্যন্ত আইন করে কিছু হবে না। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। এটি একটি অসাংবিধানিক ফর্মুলা।’

ইসি গঠন বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহ-৮ আসন) ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আইনমন্ত্রী অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তা না হলে বিলটি হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানকে সংশোধন না করে, ৪৮ এর ৩ ধারা বাইপাস করে কোনো আইন তৈরি করা যায় না। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যদি কণ্ঠভোটে পাস করিয়ে দেন তাহলে এটি সব থেকে বাজে উদাহরণ হবে।’

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম বিলটি গণতান্ত্রিকভাবে আসবে। দেশে কি বিচারপতি আর আমলা ছাড়া বিশ্বাস করার মতো মানুষ নেই? রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কি বিশ্বাস করেন না? স্পিকারকে বিশ্বাস করেন না? সংসদ সদস্যদের কি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়?’

সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন বিচারপতি আর আমলাদের ওপর নির্ভর করবেন? এ বিলের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি রাখেন কোনো আপত্তি নেই। আপনাদের তো সেনানিবাসে জন্ম হয়নি। দেশ স্বাধীন করার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান বলেন,‘ এ আইনের বিষয়ে মানুষের কৌতূহল রয়েছে। সবাই এটা নিয়ে কথা বলছেন। এ আইন নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করলে আরও সমৃদ্ধ হতো। এ আইনে বিগত দুটি কমিশনকে যে হেফাজত দেওয়া হয়েছে, এটার দরকার ছিল না। এখানে তত্ত্বাধবায়ক সরকার আনার কথা বলে বিএনপি কোন পাগল আর কোন শিশুকে আনতে চায়, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না।’

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘ওয়েস্ট মিনিস্টার ফার্ম অব গভর্নমেন্ট যেখানে প্রধানমন্ত্রী সর্বময়। তিনি সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন নারীকে পুরুষ বানানো ছাড়া আর পুরুষকে নারী বানানো ছাড়া। যদি সেটি মেনে নিয়ে এই আইন করে তাহলে ঠিক আছে। তবে রাষ্ট্রপতি শব্দটা কেন আনলাম, রাষ্ট্রপতি শব্দটা কেন দিলাম? আর যদি প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতার একটা অংশ রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে দেবেন যেটা সংবিধানের ৪৮ (৩) –এ দুটি ক্ষমতা দেওয়া আছে। তার সঙ্গে আর একটি ক্ষমতা দেবেন তাহলে সেটি স্পষ্ট করে বলতে হবে অর্থাৎ অনুচ্ছেদ (৪৮), (৯৫) এবং (৫৬) এর রেফান্সে আছে, তার সাথে ১১৮ যুক্ত করতে হবে। সংবিধান সংশোধন না করে আইন করা অসাংবিধানিক হবে।’

জাপার সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রওশন আরা মান্নান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকার এ আইন করছে। কিন্তু সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ রেখে কীভাবে আইনটি হবে, জানি না। আলোচনা ছাড়া তাড়াহুড়ো করে আইনটি পাস করলে দেশে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

রাষ্ট্রপতির সংলাপের প্রতিফলন নেই: গণফোরাম

গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান বলেন, ‘দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নেই। এই ইসির সুবিধাভোগী ছাড়া সবাই বলবে, তারা ব্যর্থ। কমিশন সরকারের আকাঙ্ক্ষার বাইরে কিছু করতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে গিয়ে যে আইন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি, এই আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটি বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষার সাথে অবাস্তব।’

১৪ দলের শরিকদের বক্তব্য

সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এর আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আইনটি করার জন্য সময় প্রয়োজন। এ আইন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। এ ছাড়া অনুসন্ধান কমিটি যে নামগুলো দেবে, সেগুলো জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এটা হলে তা অনেক ‘ইনক্লুসিভ’ হবে। এ ছাড়া অনুসন্ধান কমিটি যে নামগুলো প্রস্তাব করবে, সেগুলো অন্তত প্রকাশ করা এবং এরপর জনমত বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন—এ ব্যবস্থা করারও দাবি জানান মেনন। মেনন আরও বলেন, বিএনপি আইন নয়, সরকারের উৎখাত চায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ নেই।

সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা একটি অস্বাভাবিক সরকার আনতে চায়। তাদের সাংসদেরা এখানে সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও বিএনপি নেতারা ইতিমধ্যে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত করা তাঁদের উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মানে কি না, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা, যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার—এসব মানে কি না, সেটি স্পষ্ট করতে হবে। এসব না মানলে এ যুদ্ধ বন্ধ হবে না।

ইনু বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অনেক ফাঁকফোকর ছিল। এর মধ্য দিয়ে ইয়াজউদ্দিনকে ক্ষমতায় এনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছুতোয় বিএনপি একটি অস্বাভাবিক সরকার গঠন করতে চায়।

সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী

বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির ওই পথে হাঁটে না। ইনডেমনিটির কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। এ আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এ আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাঁকে প্রটেকশন দেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘জাতির জনককে হত্যার কথা স্বীকার ও খুনিদের পুনর্বাসিত করার কথা মেনে বিএনপি জনগণের কাছে মাফ চাইলে ঐকমত্য হতে পারে।’

তড়িঘড়ি করে আইন প্রণয়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব দল সংলাপ করেছে বা যাঁরা যাননি, তাঁরা সবাই নির্বাচন কমিশন নতুন আইনের মাধ্যমে গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়, তখনই এ আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী এ আইন করার জন্য বলেছিলেন ‘

এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের করা ইসি গঠন আইনের খসড়া এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) করা আইনের খসড়া সংসদে পড়ে শুনান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের খসড়ার অনেক কিছুই এ আইনে নেওয়া হয়েছে। মূল কাঠামো একই। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যাঁকে খুশি নিয়োগ দিতে পারেন। এ আইন করে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা ধরে রাখার জন্য কিছু বাধ্যবাধকতা আনা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যাঁরা বাইরে কথা বলেন, তাঁদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসলা, সেটা আর থাকেনি। সে জন্যই এখন তাঁরা উঠেপড়ে লেগেছেন। এখন বলছেন, এটা তড়িঘড়ি করে কেন করছেন, এটা ইসি করার আইন হয়নি।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক একজন সিইসি বলেছেন, এ সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আপনারা যদি এ কথা মানেন, এটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু আমি এটা মানি না।’

আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিল। তখন থেকেই এ সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। এ কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো ১০ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক অভিযোগ থাকে।

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা তো তালগাছ চান। ওনারা কিছুই মানেন না যতক্ষণ তালগাছটা ওনাদের না হয়। এই সংসদই বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে তিন টার্মের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলা হলে কোর্ট দুটি বিধানকেই অবৈধ ঘোষণা করে। তারপরও ওনারা এটার কথা বলবেন। ওনারা আদালতের রায়ও মানেন না। ওনাদের কথা হলো যেটা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী করেছেন, সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন, সেটা ভালো নয়।’

কণ্ঠভোটে বিল পাস

বিরোধী দলের সদস্যদের আনা বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অবশ্য সেগুলোর মাধ্যমে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

ইসি গঠন বিলে যা বলা হয়েছে

ইসি গঠন বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি এ আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশের উদ্দেশ্যে ছয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। কমিটিতে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি এর সভাপতিও হবেন। প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক।

এতে বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি তাদের সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। অন্যূন তিন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম হবে। কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এর সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে।

বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতায় বলা হয়েছে- তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তার বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি বা বেসরকারি পদে অন্যূন ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন