জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে এই মামলায় দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায়ের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। বিষয়টি উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সিফাতকে।
কিন্তু সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজারের আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্ত শেষে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চার্জশিট প্রদান করেন।
এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। তারপর ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
সবশেষে গত ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি মামলায় দুপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করলে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। মামলার ১৫ আসামি মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন ও এপিবিএনের ৩ জন। অপর তিনজন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা।
এই মামলার আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাবেক এএসআই সাগর দেব।
আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত বছর ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ আসামির সাজা হবে কিনা, তা জানা যাবে রায় ঘোষণার পর। বিচারক বহুল আলোচিত এই মামলায় রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেছেন সোমবার।
তিনি বলেন, ‘এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রত্যাশা করি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে এবং সিনহার পরিবার ন্যায় বিচার পাবে।’
অন্যদিকে আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ওসি প্রদীপ এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই অবহিত নন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘এই হত্যার সঙ্গে ওসি প্রদীপ জড়িত ছিলেন তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ।’ ন্যায়বিচার না পেলে উচ্চ আদালতে যাবেন জানান আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত।
আসামিপক্ষের অন্য একজন আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, বিজ্ঞ আদালতের কাছে আমরা ন্যায়বিচার পাব আশা করি। প্রত্যাশিত রায় না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন