বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আন্তর্জাতিক চাপ ঠেকাতে মানবাধিকার সেল দে লো য়া র জা হি দ

জাতিসংঘ মানবাধিকারের জন্য হাই কমিশনার সদস্য দেশ পর্যায়ে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য একটি কৌশলগত প্রবেশ বিন্দু; মানবাধিকারকে মূলধারায় আনা, অর্থাৎ জাতিসংঘের কান্ট্রি টিম এবং জাতিসংঘ শান্তি মিশনের কাজের সাথে মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি একীভূত করা; জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজকে শক্তিশালী করতে ও সাহায্য করার কাজ করে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ সহ সংস্থাটির ছয়জন বর্তমান ও সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর  শান্তিরক্ষা মিশনে র‌্যাব কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১২ আন্তর্জাতিক সংগঠন দাবি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক এসকল চাপ ঠেকাতে মানবাধিকার সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একথা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি মানবাধিকার সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরো জানান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সত্য তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছে সরকার । যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের ও  চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেখানকার মিশনও এটা নিয়ে কাজ করছে। বিলম্বে হলেও সরকারের ক্ষতি নিয়ন্ত্রনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয়।

জাতিসংঘ মানবাধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানগুলি বাস্তবায়নে সরকারগুলিকে সমর্থন করে যাতে তারা সম্মত হয়েছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবাধিকার সেল গঠনের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানগুলি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুত হচ্ছে। সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ বা এর সরকার তাদের দেশের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রাথমিক দায়িত্ব বহন করবে । এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণে সহায়তা করবে। দায়িত্ব পালনকারী হিসাবে সরকারগুলি জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের সাথে সহযোগিতা করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী এবং উদীয়মান মানবাধিকার সমস্যা গুলো মোকাবেলায় আরও ভালভাবে সজ্জিত হতে পারে। সরকারগুলি কিভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার অংশগ্রহণ করতে পারে সে সম্পর্কে ও কিছু আলোচনা করা দরকার।

বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড এ অধিকারের লঙ্ঘন, যা একটি ন্যায্য এবং নিরপেক্ষ পদ্ধতির মতো সমস্ত বিচারিক গ্যারান্টি সহ পূর্ববর্তী রায় ছাড়াই একজন রাষ্ট্রীয় এজেন্ট (বা তাদের সম্মতিতে) দ্বারা একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা মনোনীত করে।জীবন মানুষের প্রথম এবং মৌলিক অধিকার, যা ছাড়া অন্য কোনো অধিকার বহাল রাখা যায় না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জীবনের অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা করা এবং অপরাধীদের বিচার করা। দুর্ভাগ্যবশত, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রগুলি দ্বারা সংঘটিত একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক "টার্গেটেড কিলিং", প্রায়ই সন্ত্রাসী হুমকির প্রতিক্রিয়ায়: বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের অনুশীলনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনিয়তা রয়েছে।

জাতিসংঘ সুশীল সমাজের অভিনেতা এবং জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সমর্থন করে , যারা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । মানবাধিকার রক্ষার জন্য সরকারের প্রধান দায়িত্ব রয়েছে, তবে সকলের জন্য সেই অধিকারগুলি উপলব্ধি করতে বা এর অগ্রগতির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। জাতিসংঘ ব্যাপকভাবে মানবাধিকারের প্রচারণা চালায় যাতে জীবনের সকল স্তরের ব্যক্তিরা মানবাধিকার বুঝে এবং এর পক্ষে দাঁড়ায়। দৈনন্দিন জীবনে মানবাধিকার রক্ষায় এবং তা এগিয়ে নিতে জনগণের ভূমিকা পালন করতে  -জাতিসংঘ- ব্যবসা থেকে শুরু করে ধর্মীয় ঘটনা ও স্থানীয় সরকার পর্যন্ত -- সবার সাথেই  সংযুক্ত হয় বা জড়িত থাকে।

সামরিক আমলাতন্ত্র্র এর যাঁতাকলে পিষ্ট  বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী ও  উদীয়মান কিছু মানবাধিকার সমস্যা রয়েছে যা মোকাবেলায় ভালভাবে সজ্জিত নয় বাংলাদেশ। এ সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের সদিচ্ছার প্রমান মেলে। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশন হল রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থা যা মানবাধিকার রক্ষা এবং প্রচারের জন্য আদেশ দিয়ে থাকে। তারা সরকার এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে একটি সংযোগ হিসাবে কাজ করে, ব্যক্তি অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে 'সুরক্ষা ব্যবধান' পূরণ করতে সহায়তা করে। সে অর্থে বাংলাদেশে এ ধরণের কোনো ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠান নেই., মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে  জাতীয় মানবাধিকার কমিশন  প্রধান সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন।  "গুম-খুনের বিষয়ে কমিশনের তদন্ত করার ক্ষমতা নেই: নাছিমা বেগম (সমকাল, ১৯ ডিসেম্বর ২১) কমিশন কার্যালয়ে দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানিয়ে  জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম আরো জানান যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম-খুনের মতো অভিযোগ উত্থাপিত হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সরকারের কেবল প্রতিবেদন চাইতে পারে, কিন্তু তদন্ত করার ‘ক্ষমতা নেই’। এ বিষয়ে কমিশন আইন পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে ,যাতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এসব বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। আইন সংশোধন প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদন হলে সংসদের আগামী অধিবেশনে তোলা হবে এমনটি আশাবাদ তার। জাতিসংঘ মানবাধিকার মানবাধিকার কমিশন, মানবাধিকার ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান, হাইব্রিড প্রতিষ্ঠান, পরামর্শএবং উপদেষ্টা মূলক সংস্থা, ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্র এবং একাধিক প্রতিষ্ঠানের জন্য দরকারী সহায়তার ও সংস্থান করে। আঞ্চলিক মানবাধিকার মেকানিজম তৈরিতে জাতিসংঘ  নিবিড়ভাবে কাজ করে..

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় প্রকাশিত হয়েছে কক্সবাজারের বহুল আলোচিত এ মামলার  রায়ের মাধ্যমে ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানগুলি বাস্তবায়নে আমরা সরকারের পাশে রয়েছি।

লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ড নির্বাহী, প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন