জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি আরও দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। যদিও আশার বাণী শুনিয়ে শনাক্তের হার আগামী মাসের শেষ দিকে দ্রুত কমার কথা বলেছেন। এরই মধ্যে অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রন বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন করছে।
সরকারি তথ্য মতে, গেল কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে করোনার শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনায় আক্রান্ত অনেক মানুষ পরীক্ষা না করায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও শনাক্তের হার সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নাজির আহমেদ, ডা. মুশতাক হোসেন ও এম এইচ চৌধুরী লেনিন করোনার সংক্রমণ কমাতে সরকারকে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বাধ্য করার পরামর্শ দিয়েছেন।
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন বলেন, দেশে করোনা শনাক্ত চূড়ার দিকে যাচ্ছে। এ জন্য করোনা শনাক্ত ক্রমাগত বাড়ছে। প্রাণঘাতী করোনার তৃতীয় ঢেউ ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের দিকে হ্রাস পাওয়ার ধাপ শুরু হতে পারে। তবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে- এর ওপর নির্ভর করে এটি দ্রুত বা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে।
ডা. লেনিন আরও বলেন, করোনার র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট ব্যবহার করে দেশে দুই লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু আমি জানি না, কেন এ ধরনের পরীক্ষা দেশে এখনও এত কম। অনেক মানুষ করোনা পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন এবং আমরা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাচ্ছি না।
ডা. লেলিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির আংশিক চিত্র পাওয়ায় আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মাঝে মাঝে সঠিক পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
করোনা সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ দেখা যাবে। আগামী মাসের শেষের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
তবে ডা. ফয়সাল বলেন, অনেক আক্রান্ত মানুষই পরীক্ষা করান না। তাই সরকারি হিসাবে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিফলিত হয় না। সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্তের খুব ক্ষুদ্র অংশ রেকর্ড করা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত এক বা দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।
ডা. ফয়সাল আরও বলেন, ভাইরাসটির সংক্রমণ এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তে থাকবে। এই ভাইরাস কাউকে ছাড়বে না। এটা উদ্বেগের যে গ্রামীণ এলাকার অনেক মানুষ এখনও করোনার টিকা নেয়নি। করোনার নমুনা পরীক্ষার করার বিষয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষ খুব কম সচেতন। অধিকাংশ জেলায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চললেও আমরা করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র পাব না।
এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের এখন রোগী ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গ্রামীণ এলাকার অধিকাংশ মানুষ টিকা না নেয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা উচিত।
ডা. ফয়সাল বলেন, যারা এখনও টিকার এক ডোজও নেয়নি তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই তাদের খুব সতর্ক থাকা উচিত। এ ছাড়া, বয়স্ক মানুষ ও যাদের একাধিক রোগ রয়েছে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। কেননা তাদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ভয়ানকভাবে বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধির প্রতি মানুষের এখনও চরম অনীহা। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইন প্রয়োগে সরকারও মনে হয় অনিচ্ছুক। যদি এটা চলতে থাকে, আমি মনে করি, বর্তমান ঢেউ আমাদের অনুমানের চেয়ে আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। অধিকাংশ সরকারি বিধিনিষেধ শুধু কাগজেই আছে। কেননা সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অভিযান নেই। মানুষ এখনও মাস্ক পরতে এবং জনসমাগম এড়াতে অনিচ্ছুক।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কোভিড সংক্রমণ কমাতে সরকারের উচিত সব বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা। যত দ্রুত সম্ভব টার্গেট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে টিকাদান কর্মসূচি আরও বাড়ানো উচিত।
সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞা ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিক না। অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, বিভিন্ন নির্বাচন, সব সামাজিক সভা চলছে এবং দোকানপাটও খোলা রয়েছে। মৃত্যুহার খুব কম হলেও প্রতিটি জীবনেরই মূল্য আছে। জীবন বাঁচাতে এবং মানুষকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, অন্তত আরও তিন সপ্তাহ মানুষকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া উচিত না এবং যে কোনো ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে যাওয়া। স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনা চলা উচিত এবং মাস্ক ছাড়া বাইরে বের না হওয়া।
ডা. বে-নজির মনে করেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ মার্চের মাঝামাঝি সময়ে নিয়ন্ত্রণে এসে পড়তে পারে। দেশে আরেকটি ঢেউ পরে আবার আঘাত হানতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এপ্রিলে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় এর আগের দুই বছর এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়েছে।
ডা. বে-নজির এও বলেন, মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস খুব শিগগিরই বিদায় নেবে না। আরও বিপজ্জনক ধরন যে কোনো সময় আবির্ভূত হতে পারে। ভাইরাসটিকে সঙ্গে নিয়েই কীভাবে বাঁচা যায়, তা আমাদের শিখতে হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন