জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেছেন, যুক্তরাজ্য আগামী ৫০ বছর বা তারও বেশি সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সংস্কৃতির বন্ধন জোরদার করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে আধুনিককালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমরা দৃঢ় ঐতিহাসিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থেকে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে একটি অভিন্ন পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি।
হাইকমিশনার বলেন, প্রথম অর্ধ শতাব্দীতে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ব প্রশংসার সঙ্গে দেখছে। বাংলাদেশ তৈরি পোষাক খাতের শক্তিশালী কেন্দ্র হয়ে ওঠার পাশাপাশি বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা সরবরাহকারী হিসেবে শান্তি ও নিরাপত্তায় অগ্রণী অবদানকারী এবং গ্লাসগোতে কপ২৬-এ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সবচেয়ে প্রভাবশালী বৈশ্বিক কণ্ঠস্বরগুলোর অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রূপান্তর এবং সেই সাফল্যে যুক্তরাজ্যের অংশীদারিত্ব নিয়ে আমি আনন্দিত।
হাইকমিশনার যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, শিক্ষা, উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রিকেট ও রন্ধনশিল্পে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বার্তায় লিখেছেন, ৫০ বছর আগে এই দিনে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের বন্ধু হতে পেরে গর্বিত।
হাইকমিশনার যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ব্রিট বাংলা বন্ধনের নতুন যুগের এই ঐতিহাসিক বার্ষিকীতে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বাধীন মাতৃভূমিতে পা রাখার আগে ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে তার ঐতিহাসিক সফর এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে তার বৈঠক করার মাধ্যমে একটি নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন এবং তা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি লাভকে ত্বরান্বিত করেছিল। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে কমনওয়েলথ দেশগুলোকে উৎসাহিত করেছিল।
ডিকসন মুক্তিযুদ্ধের আগে, মুক্তিযুদ্ধকালে ও পরে উদীয়মান বাংলাদেশে ব্রিটিশ সরকারের মানবিক ত্রাণ সহায়তার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্য ছিল অন্যতম বৃহত্তম দাতা, যা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের জন্য যুক্তরাজ্যে বিদ্যমান জোরালো জনসমর্থনের প্রতিফলন। এই সবই যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস-হোম বাংলাদেশ সফর করেন। তারপর থেকে যুক্তরাজ্য গবেষণা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সামাজিক উন্নয়ন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার উন্নতি, নারী ও শিশুদের আয়ু বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নে এই দেশের একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদার হয়ে রয়েছে।
ডিকসন বলেন, এই সবই গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে সহায়তা করেছে। একটি গতিশীল, স্বাধীন জাতি হিসেবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক রূপান্তরের রোল মডেল হয়ে ওঠেছে।
হাইকমিশনার বলেন, অনেক বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যকে তাদের বাসস্থান বানিয়েছে এবং পাঁচ দশক পর প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও গভীর ও দৃঢ় হয়েছে।
হাইকমিশনার ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সফর ছাড়াও প্রিন্স অফ ওয়েলস, প্রিন্সেস রয়্যালসহ রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের এবং জন মেজর, টনি ব্লেয়ার এবং ডেভিড ক্যামেরনসহ বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীদের সফরের কথাও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যের আগ্রহের প্রতিফলন ঘটার মাধ্যমে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ দারিদ্র্য, বন্যা এবং প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পথ অনুসরণ করছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন