দে লো য়া র জা হি দ
বাঙালি জাতির, ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার অসাধারণ এক উত্থানে এমন কোন মিটিং, মিছিল বা সংগ্রাম নেই যাতে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহন নেই। ভাষা আন্দোলনের প্রজ্জলিত শিখা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিলো সারা বাংলায় । বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সালাম, জব্বার, শফিক। রফিক সহ অনেকেই। ভাষা আন্দোলনে মেয়েদের দৃশ্যমান ভুমিকাগুলোকে বিগত ৭০ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি, একে চরম অবহেলা বা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এবিষয়গুলো নিয়ে তথ্যানুসন্ধানের এক পর্যায়ে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত শরীফা বুলবুল এর লেখা কয়টি নিবন্ধ পাঠ করেছিলাম। যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী এখানে সন্নিবেশিত হলো। আন্দোলন ও সংগ্রামের সুতিকাগার বলে খ্যাত কুমিল্লার এক সংগ্রামী নারী অধ্যাপিকা লায়লা নূর। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার পদচারনা ছিলো অবিস্মরণীয়। তিনি ভাষা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখেন ১৯৪৮ সাল থেকে বায়ান্নর সব আন্দোলনেই তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় থেকে লায়লা নূর ভাষার জন্য আন্দোলনে যোগ দেন। তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গাজীপুর গ্রামে। ১৯৫৭ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে নির্যাতনের শিকারও হতে হয় তাকে. তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভাষাসংগ্রামী লায়লা নূর আজো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু না হবার বেদনা নিয়ে চলে গেছেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যখন ছাত্রজনতা আন্দোলন শুরু করেন তখন দাবানলের মতো প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে নড়াইলেও শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। সে দিন ছাত্ররা জনতা আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য সকল ছাত্রীদের আহ্বান জানালে নড়াইলে মাত্র ৩ জন নারী একাত্ম্য ঘোষনা করেন ও মিছিলে যোগ দেন । তারা হচ্ছেন- সুফিয়া খাতুন, রিজিয়া খাতুন ও রুবি। রিজিয়া খাতুন, তাদেরই একজন যিনি ৬৪ বছরেও রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি পাননি। রিজিয়া খাতুন ১৯৬৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ডুমুরতলা প্রাইমারি স্কুল, শহর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, মহিষখোলা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। নড়াইল শহরের আলাদাতপুর এলাকায় বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন. ভাষা আন্দোলনের আরেক অগ্রণী নারী ড. সুফিয়া. নারী ভাষাসৈনিকদের অন্যতম সুফিয়া আহমেদের রয়েছে জীবনে নানাহ রোমঞ্চকর আন্দোলনের স্মৃতি। জীবনে অনেক বিস্তৃত তার কাজের পরিধি। আর প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই সযত্নে তিনি সফলতা তুলে এনেছেন.সুফিয়া আহমেদের বাবা ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ বিভাগে ক্লাস নিতেন। সেই সময় মনের অজান্তেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি । ১৯৬১ সালে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আলোর মুখ দেখে অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগ দেন তিনি।
তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন ১৯৮৩ সালে। একজন অনন্য শিক্ষা ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশের বাইরেও সুফিয়া আহমেদ পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও তিনি অধ্যাপনা করেছেন। শিক্ষা ও গবেষণা-সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও তিনি সংস্কৃতি, নারী উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি তুরস্কে পাকিস্তান সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের ছাত্রী সদস্য হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। তখনই তুরস্ক সম্পর্কে হয়ে উঠেন আগ্রহী। যার ফলে পরবর্তী সময়ে আধুনিক তুরস্ক (ঊনবিংশ থেকে বিংশ শতাব্দী) ও সেখানকার নারীদের নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে এ ব্যক্তিত্বের ভাণ্ডারে। সম্ভবত তিনিই প্রথম নারী যিনি দুবার জাতিসংঘে কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ফেনী মহকুমার শশ্মদি ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামে নারী ভাষাসৈনিক শরিফা খাতুন (১৯৩৬ সালের ৬ ডিসেম্বর) এর জন্ম। ১৯৫১ সালে নোয়াখালী সদরের উমা গার্ল্স স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স, ১৯৫৮ সালে এমএ পাস করেন।
শরিফা খাতুনের, বাবা আসামের রেলওয়েতে চাকরি করতেন। তার জন্মের হয় নিজ গ্রামে । পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে আসামেই থাকতেন। সেখানে বাঙালিদের কোনো স্কুল ছিল না তাই খালা-খালুর কুমিল্লা শহরের বাসায় চলে আসেন। ও পরে কুমিল্লায় খালুর বাসায় থেকে শহরের লুৎফুন্নেসা স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন তার চাচা তাকে ফেনীতে নিয়ে ভর্তি করান। স্কুলের ছাত্রী থাকাকালীন ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দু’একটি মিছিলেও তিনি অংশ নেন । তখনো ভাষা আন্দোলন শুরু হয়নি। ১৯৪৭ সালের আগস্টে দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গটি প্রকাশ্যে আসে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ৪৮ সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। তখন আন্দোলনটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। স্কুলের ছাত্রীরা সে মিছিলে অংশ নিয়েছে। মূল আন্দোলন ঢাকায় হলেও ওই সময় বাংলা ভাষার ব্যাপারে বাঙ্গালীদের মধ্যে একটা জাতীয় চেতনা তৈরি হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ’৫২-এর ২৭ জানুয়ারি জিন্নাহর ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন। পাকিস্তানের সে সময়ের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষনার পরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি এক ধর্মঘট আহ্বান করে। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী মুসলিম লীগ সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ঢাকা বার লাইব্রেরিতে সর্বদলীয় এক সভা হয়। সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের ডাক দেয়া হয়। গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। আন্দোলন-সংগ্রাম তখনো চলছিল, চলছিল অবিরাম । ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটে। অনেক ছাত্রী গ্রেপ্তার হয়। অনেককেই সেদিন ১৪৪ ধারা ভাঙার দায়ে পুলিশ ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সেদিন গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২০-২১ জন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যাপক লায়লা নূরও ছিলেন তাদের সাথে। লায়লা আপা আমাদের পরিচিতদের একজন. লায়লা আপার সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন শরীফা খাতুন। ’৫৫-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীরা গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকারের টনক নড়ে। পরের বছর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। ৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়।
ভাষা সংগ্রামী অধ্যাপক চেমন আরা ১৯৫১ সালে ঢাকার সরকারি কামরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৬ সালে বিএ অনার্স ও ১৯৫৭ সালে এমএ পাস করেন. তিনি সক্রিয়ভাবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সাল থেকেই ‘তমদ্দুন মজলিস’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেন। ১৯৩৫ সালের ১ জুলাই চেমন আরার জন্ম চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার ঐতিহ্যবাহী মৌলভি বাড়িতে । বাবা এ এস এম মোফাখ্খর ছিলেন বিভাগ পূর্বকালে কলকাতা হাইকোর্টের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ও মা দুরদানা খাতুন একজন গৃহিণী।
নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু । ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ ও ইডেন কলেজে বাংলা বিভাগে প্রায় ৩৬ বছর তিনি অধ্যাপনা করেন। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৩ সালে তিতুমীর কলেজ থেকে অবসর নেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে কিছুদিন কিশোরগঞ্জ জেলার কাটিয়াদীতে অবস্থিত ডা. আব্দুল মান্নান মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেন। সাপ্তাহিক সৈনিকে ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প। অধ্যাপক চেমন আরার গল্প, স্মৃতিকথা, জীবনীগ্রন্থ ও ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং ৫টি গ্রন্থ তিনি সম্পাদনা করেছেন। ভাষা আন্দোলনের চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ও লেখালেখির মাধ্যমে অবদান রেখেছেন।
ভাষাসংগ্রামী প্রতিভা মুৎসুদ্দি ১৯৩৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মহামুনি পাহাড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম- কিরণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি ও মায়ের নাম- শৈলবালা। তার স্কুল জীবন শুরু হয় গ্রামের মহামুনি অ্যাংলো পালি ইনস্টিটিউশনসের মাধ্যমে। তিনি ১৯৫১ সালে মেট্রিক, ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাস করেন। রাজনৈতিক কারণে যথাসময়ে এমএ পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি, ফলে ১৯৫৯ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহ মহিলা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু। ১৯৬২ সালে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করে বছরখানেক সেখানে শিক্ষকতা করেন। ভারতেশ্বরী হোমসে অর্থনীতির প্রভাষক ১৯৬৩ সালে যোগদান করেন এবং একমাস পর ভাইস প্রিন্সিপাল পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কুমুদিনী ট্রাস্টের পরিচালক হিসেবেও দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের প্রশাসক ও পরিচালক। এই কল্যাণময়ী নারী ভাষাসংগ্রামী আমাদের সমাজের এক মহান আদর্শ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। প্রতিভা মুৎসুদ্দি ১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রদত্ত বক্তব্যের প্রতিবাদে মিছিলে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। তখন তিনি চট্টগ্রামের রাউজানে অবস্থিত মহমুনি এ্যাংলো পালি ইনস্টিটিউটের ছাত্রী।
নারী ভাষা সংগ্রামী রওশন আরা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। এ সময় যেসব ছাত্রছাত্রী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করাই আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন মনে করেন, রওশন আরা ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। রাষ্ট্র ভাষার জন্ম ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় সূচিত হয়েছিল বায়ান্ন ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম বের হয় মেয়েরা। বাগেরহাট জেলার বাদেকাড়াপাড়া গ্রামের মেয়ে হালিমা খাতুন। হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ আগস্ট. ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্দান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
মুসলিম গার্লস স্কুল ও বাংলাবাজার গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের আমতলায় নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিলো হালিমা খাতুনের ওপর। ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দেয়ার পর পরই স্লোগানে স্লোগানে কেঁপে ওঠে আমতলা। ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’- স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ। সিদ্ধান্তানুযায়ী ১৪৪ ধারা ভেঙে প্রথম বের হয় ৪ জনের মেয়েদের দল। জুলেখা, নূরী, সেতারার সঙ্গে হালিমা খাতুনও ছিলেন। তাদের ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করতে থাকে। এ টিয়ার গ্যাসের যন্ত্রণা সহ্য করে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান তারা কিন্তু বেশি দূর এগুতে না পেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মধ্যে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়। হালিমা খাতুন তার সাথীদের নিয়ে বিভিন্ন রকম সেবা ও সহযোগিতার মাধ্যমে আহতদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন।
ভাষা সংগ্রামে নারীদেরও অগ্রণী ভূমিকা ছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সে ভুমিকা আজো অস্বীকৃতই রয়ে গেছে । নারী ভাষা সংগ্রামীদের নাম উচ্চারিতই হয় না বললেই চলে। ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এখনি আমাদের উদ্যোগী হতে হবে নতুবা ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন