বহুল আলোচিত নববধূ রাজনাকে হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ উদ্ধারে নবীগঞ্জে পুলিশ সুপারের প্রেসব্রিফিং

বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ- বহুল আলোচিত সমালোচিত নবীগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূ রাজনা বেগম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নবীগঞ্জ থানায় প্রেসব্রিফিং করেছেন, নবীগঞ্জ- বাহুবল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের। এ সময় নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ, ওসি (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম, ওসি (অপারেশ) আব্দুল কাইয়ুম, সেকেন্ড অফিসার সমিরণ দাশ ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নব- নির্বাচিত সভাপতি রাকিল হোসেন সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রেসব্রিফিং এ সহকারী পুলিশ সুপার জানান- রাজনা হত্যা মামলায় র‌্যাবের সহযোগিতায় ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার পুত্র ও নিহত রাজনার স্বামী জাকারিয়া মিয়া (২৫), মৃত আনোয়ার মিয়া চৌধুরীর পুত্র ভাড়াটিয়া বাসার মালিক শফিক মিয়া চৌধুরী (৫৬) ও তার পুত্র আকরাম চৌধুরী মাসুম (২১)। সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩ বছর প্রেমের সম্পর্কের পর প্রায় ৬ মাস পূর্বে উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার পুত্র জাকারিয়া মিয়ার সাথে পাশ্ববর্তী পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুুর রহিমের কন্যা রাজনা বেগমের সাথে বিয়ে হয়। গত ১০/-১২ দিন পূর্বে রসুলগঞ্জ বাজারের সফিক মিয়া চৌধুরীর মালিকানাধীন একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে রাজনা বেগমের মা তাকে দেখতে ওই ভাড়া বাসায় যান। সেখানে গিয়ে বাসার দরজা বন্ধ দেখে তিনি ডাকা ডাকি করেন। এক পর্যায়ে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে বিছানার ওপর তার মেয়ে রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশাপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেন। এতে তাৎক্ষনিক ভাবে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাজনার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা বটি দা উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই রাজনার স্বামী পলাতক ছিল। গত (২ ফেব্রুয়ারী) রাজনা বেগমকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে গলাকেটে হত্যা ও সহযোগিতার অভিযোগ এনে নিহত রাজনার ভাই সুফি মিয়া বাদী হয়ে রাজনার স্বামী জাকারিয়া আহমদ, বাসার মালিক শফিক মিয়া চৌধুরী ও তার পুত্র আকরাম চৌধুরী মাসুম সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার দায়েরের পর থেকেই মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৯। গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সরাজিদখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী রাজনার স্বামী জাকারিয়া মিয়া (২৫) কে র‌্যাবের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন অপর আরেকটি আভিযানিক দল নবীগঞ্জ উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার ৩ ও ৪নং আসামী ভাড়া বাসার মালিক সফিক মিয়া চৌধুরী (৫৬) ও তার পুত্র আকরাম চৌধুরী মাসুম (২১) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জানাযায়- জাকারিয়া পেশায় একজন সিএনজি চালক। সে রাজনা বেগমের সাথে ৩ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছর পারিবারিক সম্মাতিক্রমে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সিএনজি কেনার কথা বলে যৌতুকের টাকার জন্য রাজনা ও তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে যৌতুকের টাকার জন্য প্রথমে জাকারিয়া তার স্ত্রী রাজনা বেগমের হাত- পা ওড়না দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন ভাবে ভয়- ভীতি দেখিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে জাকারিয়া তার শ্বশুর বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে এবং সিএনজি কেনা বাবদ টাকা না দিলে রাজনাকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সে তার স্ত্রীর মুখ ওড়না দিয়ে বেধে ফেলে যাতে সে চিৎকার করতে না পারে। পরে রান্না ঘরের ধারালো বটি-দা দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে হত্যা করে ঘরের বাহির দিকে তালা দিয়ে চলে যায়। গত (১ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতের দিকে বাসযোগে রওনা হয়ে ঢাকায় চলে যায় জাকারিয়া। ঢাকায় নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে সে তার এক সময়কার কর্মস্থল মুন্সিগঞ্জের লতব্দী এলাকার ইট ভাটায় আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত (৩ ফেব্রুয়ারী) রাত ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার লতব্দী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন