হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। |
উপমহাদেশের কিংবদন্তি আলেমে দ্বীন, প্রখ্যাত শাইখুল হাদীস, বাংলাদেশের গৌরব হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান আর নেই। ৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার বাদ মাগরিব তিনি জকিগঞ্জ উপজেলার রারাই গ্রামে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর জানাযা ৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, বিকাল ৩টায় নিজ বাড়ির উত্তর পাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
শাইখুল হাদীস হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর শীর্ষস্থানীয় খলীফা ছিলেন। ইলমে হাদীসে তিনি আপন মুরশিদ ছাড়াও আরববিশ্বের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা সায়্যিদ মুহাম্মদ বিন আলাভী মালিকী (র.) ও মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা’র হেড মাওলানা ও বাইতুল মুকাররমের প্রথম খতীব আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) এর শাগরিদ ছিলেন। এছাড়া প্রখ্যাত আরো অনেক মুহাদ্দিসের নিকট থেকে তিনি ইলমে হাদীসের সনদ লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ইছামতি দারুল উলুম কামিল মাদরাসা ও সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসায় ইলমে হাদীসের খিদমাত আঞ্জাম দিয়েছেন। মধ্যখানে কয়েক বছর আরব আমিরাতে বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইন্তেকালের সময় চার পুত্র, তিন কন্যা, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য:
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার রারাই গ্রামে ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন সর্বসাধারণের কাছে ‘মুহাদ্দিস ছাহেব’ নামে খ্যাত শাইখুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান। তাঁর পিতা এলাকার খ্যাতিমান আলিমে দীন মরহুম মাওলানা মুমতায আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। মাতা মরহুমা আমিনা খাতুন। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
শিক্ষাজীবন
এলাকার প্রাইমারি স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করে বাল্য বয়সেই তিনি বড়ভাই মরহুম মাওলানা নজিবুর রাহমান রাহিমাহল্লাহ’র সাথে বর্তমান ভারতের বদরপুর সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়া করে ফিরে এসে কানাইঘাট থানাধীন সড়কের বাজার আহমদিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। এখানে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। সড়কের বাজার মাদরাসায় ছাত্র থাকাকালীন শিক্ষকগণের উৎসাহে পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুল থেকে জেলা-ভিত্তিক প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে সিলেটের অন্যতম প্রাচীন ইসলামি বিদ্যাপীঠ গাছবাড়ি জামেউল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা এডুকেশন বোর্ডের অধীন আলিম পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বাদশ স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। একই মাদরাসা থেকে ১৯৫৭ সালে ফাযজিল পরীক্ষায় বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৯ সালে হাদীস বিভাগে কামিল পরীক্ষায় বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বাদশ স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য যে, গাছবাড়ি মাদরাসার ইতিহাসে বোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান লাভকারী প্রথম ছাত্র তিনি।
কর্মজীবন
১৯৫৯ সালের তিন আগস্ট ইছামতি দারুল উলুম সিনিয়র মাদরাসায় সহকারী মাওলানা পদে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালের দশ এপ্রিল সিলেটের প্রাচীনতম ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ি আজিরিয়া মাদরাসায় যোগ দেন। স্বীয় পীর ও মুরশিদ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহির নির্দেশে ১৯৬৩ সালের তেইশ নভেম্বর সৎপুর দারুল হাদীস মাদরাসায় প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালের চৌদ্দ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে সুনামের সাথে অধ্যাপনা করেন। পনেরো জানুয়ারি ইছামতি দারুল উলুম মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ইতোমধ্যে সৎপুর দারুল হাদীস মাদরাসার অধ্যক্ষ নিয়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা নিরসন কল্পে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের অনুরোধে ১৯৭৬ সালের এগারো অক্টোবর সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে অল্প দিনের মধ্যে মাদরাসার স্থিতিশীলতা ফিরে এলে ১৯৭৭ সালের দুই এপ্রিল সেখান থেকে চলে আসেন।
১৯৭৭ সালে সৎপুর মাদরাসা থেকে চলে আসার কিছুদিন পর তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গমন করেন। প্রথমে উম্মুল কুওয়াইন শহরে একটি মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অল্প দিনের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি সে দেশের বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি উম্মুল কুওয়াইন কোর্টে বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি পূর্বোল্লোখিত মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য যে, আরব আমিরাতের কর্মজীবনে সরকারি ছুটির দিনে তিনি মরুচারী বেদুঈনদের অবৈতনিক শিক্ষাদান করতেন। বিশেষ করে বয়স্ক বেদুঈনদের কুরআন শরিফ সহিহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখাতেন।
১৯৮২ সালের চৌদ্দ সেপ্টেম্বর আবারও তিনি ইছামতি মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিয়মতান্ত্রিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের ফলে তিলে তিলে ইছামতি মাদরাসা পূর্ব সিলেটের শ্রেষ্ঠতম ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তাঁর একক প্রচেষ্টায় মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। আলিম, ফাজিল ও কামিল ক্লাশের সরকারি মঞ্জুরি এবং স্বীকৃতি আদায়ে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। মাদরাসার বিল্ডিং এবং সুবিশাল মসজিদ তাঁর নীরব সাধনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শেষ জীবনে তিনি ইছামতি মাদরাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন দেশে দাওয়াতি সফর
যুক্তরাজ্য : ১৯৮১ সালে স্বীয় পীর ও মুরশিদ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহির নির্দেশে তিনি আরব আমিরাত থেকে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্য সফর করেন। মাত্র পনেরো দিনের সফরে তিনি ছাহেব কিবলার সাথে সে দেশের বিভিন্ন শহরে আয়োজিত মাহফিলে বয়ান পেশ করেন। স্বল্পদিনের সফর শেষে ছাহেব কিবলার সাথে হজ পালন করে আপন কর্মস্থল আমিরাতে ফেরত যান।
এরপর থেকে তিনি প্রায় প্রতি বছরই যুক্তরাজ্য সফর করেন। এসব সফরে তিনি গ্রেট ব্রিটেনের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি শহরে বিভিন্ন মাহফিলের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের মহান দায়িত্ব পালন করছেন। ব্রিটেনে বসবাসরত তাঁর ছাত্রগণের অনুরোধে ২০০৯ সালে তিনি একাধারে প্রায় নয় মাস সে দেশে অবস্থান করেন। সে সময় প্রতি শনিবার লন্ডনস্থ দারুল হাদীস লতিফিয়ায় শামায়েলে তিরমিজি নামক বিখ্যাত হাদীসের কিতাব সম্পূর্ণ দারস পেশ করেন। নিয়মিত সে দারসে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে প্রচুর সংখ্যক উলামা এবং সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করতেন। দারস পূর্ণ হলে দুই শতাধিক আলিমকে শামায়েলে তিরমিজির সনদ প্রদান করেন।
বিভিন্ন সময় ব্রিটেন সফরকালে বিভিন্ন শহরে রিয়াদুস সালিহীন এবং আদাবুল মুফরাদ নামক হাদীসের কিতাবের দারস প্রদান করেন।
যুক্তরাষ্ট্র : ১৯৯৫ সালে আমেরিকায় অবস্থানরত তাঁর ছাত্র ও শুভানুধ্যায়ীদের আমন্ত্রণে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সে সময় বিভিন্ন শহরে মাহফিল সমুহে যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভন্ন শহরে তাঁর প্রেরণা ও নির্দেশনায় বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামি সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সিরিয়া : ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি সিরিয়া সফর করেন। সে সময় দামেস্কের বিখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদগণের সাথে ব্যাপকভাবে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। সে সফরে দামেস্কের প্রখ্যাত হানাফী আলিম, আল ফিকহুল হানাফী ওয়া আদিল্লাতুহু-সহ বহু মূল্যবান কিতাব প্রণেতা শায়খ ড. আসআদ মুহাম্মাদ সাঈদ সাগিরজি তাঁর কাছ থেকে ইলমে হাদীসের সনদ গ্রহণ করেন। সনদ গ্রহণ উপলক্ষে শায়খ সাগিরজি দামেস্কের উল্লেখযোগ্য উলামার উপস্থিতিতে ২৯ অক্টোবর নৈশভোজের আয়োজন করেন। এ ছাড়া বহু গ্রন্থপ্রণেতা শায়খ ড. আজ্জাজ আল খাতিব, শায়খ হিশাম বুরহানি, শায়খ আবদুর রাহমান হাম্মামি প্রমুখ তাঁর সাথে একান্তভাবে ইলমি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে শায়খ হাম্মামি পুরো সফরে নিজে ড্রাইভ করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনে নিয়ে যান।
মরক্কো : ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তিনি মরক্কো সফর করেন। এ সময় মদিনাতুল আউলিয়া নামে খ্যাত মারাকাশ শহরে দালাইলুল খাইরাত প্রণেতা ইমাম জাজুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম কাজি আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম সুহাইলি রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখের মাজার জিয়ারত করেন।
ভারত : ভারতের আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক সফর করেন। সেসব সফরে মাহফিলে যোগদান ছাড়াও উলামায়ে কেরামের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে হাদীস শরিফের দরস প্রদান করেন।
মিশর : ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি মিশর সফর করেন। সেই সফরে কায়রো শহরে সাহাবি উকবা ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাজার প্রাঙ্গণ, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ’র মাজার প্রাঙ্গণ এবং ইতিহাসখ্যাত আল-আজহার মসজিদে হাদীস শরীফের দরস প্রদান করেন।
রাজনৈতিকজীবন
শিক্ষকতা ও দাওয়াতি কার্যক্রমের পাশাপাশি একসময় তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-পূর্ববর্তীতে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির সিলেটের একজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নেজামে ইসলামের মনোনয়নে তিনি তখনকার সিলেট ৭ আসনে ( জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাট) এমএনএ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্মানজনক ভোট পান। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ মনোনীত ও সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় নির্বাচনে সিলেট পাঁচ আসনে ( জকিগঞ্জ-কানাইঘাট ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
পত্রিকা প্রকাশ
১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর সম্পাদনায় সিলেট শহর থেকে মাসিক শাহজালাল নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। স্বল্প সময়ে সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেও ১৯৯৩ সালে নানা কারণে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকাশিত গ্রন্থ
এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ১৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
১. আল কাউলুল মাকবুল ফী মিলাদির রাসুল : মাহফিলে মিলাদের ইতিহাস বিষয়ে উর্দু ভাষায় লেখা এ কিতাব ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৮-এ কিতাবখানা বাংলা অনুবাদ প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
২. দোয়ায়ে মাসনুনা ও তেত্রিশ আয়াতের ফজিলত: দৈনন্দিন জীবনে পঠিতব্য হাদীস শরীফে বর্ণিত দোয়ার সংকলন। ২০১০ সালে বাংলা ভাষায় লেখা এ কিতাবের ১৪তম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০১২ সালে লন্ডন থেকে এ কিতাবের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৩.মাসআলায়ে উশর : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ। শরিয়তের দৃষ্টিতে ভূমি দুই প্রকার, উশরি ও খিরাজি। উশরি ভূমি থেকে উৎপাদিত ফসলের একদশমাংশ জাকাত হিসেবে দেয়া ফরজ। বাংলাদেশের ভূমি থেকে উৎপাদিত ফসলের হুকুম সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে এ বইয়ে। ২০০৫ সালে ব্রিটেন সফরকালে রচিত এ বই ২০০৬ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়।
৪.দুরূদ শরীফের ফযীলত ও ওযীফা। এ বইখানা ১৯৯৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০০০ সালে।
৫. যিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারা (ফযীলত ও নিয়ম)। ১৯৯৯ সালে এ বই প্রকাশিত হয়। পরিমার্জিত ও বর্ধিত আকারে দ্বিতীয় সংস্করণ শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।
৬. আসহাবে বদর। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৩১৩ জন সাহাবীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সম্বলিত এ গ্রন্থ ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বর্ধিত ও পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালে।
৭. ওযীফা। কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে বর্ণিত দোয়া সম্বলিত পকেট সাইজের এ বই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ৫ম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
৮. হজ্জ ও যিয়ারত ( সংক্ষিপ্ত আহকাম ও নিয়ম)। প্রথম প্রকাশ ১৯৯৯ সালে।
৯. হাদিয়াতুল লাবীব ফী নাবযাতিম মিন সীরাতিন নাবিয়্যিল হাবীব ( هدية اللبيب في نبذة من سيرة النبي الحبيب)। আরবী ভাষায় লেখা সংক্ষিপ্ত সীরাতের কিতাব। ২০১১ সালে ব্রিটেন সফরকালে তিনি এ কিতাব রচনা করেন। ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছে। সীরাতে হাবীবে খোদা নামে এ কিতাবের বাংলা অনুবাদ প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালের আগস্ট মাসে। মো. আবদুল আউয়াল হেলাল কর্তৃক অনূদিত সীরাতে হাবীবে খোদা বর্ধিত ও পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়েছে। অচিরেই এ গ্রন্থ পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হবে।
১০. যাখীরাতুল আহাদীসিল আরবাঈন ফী ফাদায়িলি সায়্যিদিল মুরসালীন ( ذخيرة الأحاديث الأربعين في فضاءل سيد المرسلين)। বঙ্গানুবাদসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র ফজিলত বিষয়ক চল্লিশ হাদীস। ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
১১. কানযুল আহাদীসিল আরবাঈন ফী মানাকিবি আহলি বাইতিন নাবিয়্যিল আমীন ( كنز الأحاديث الأربعين في مناقب اهل بيت النبي الأمين )। বঙ্গানুবাদসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইত তথা পরিবার-পরিজনের মানাকিব বিষয়ক চল্লিশ হাদীস। প্রথম প্রকাশ ২০১১ সাল। ২০১০ সালে ব্রিটেন সফরকালে চল্লিশ হাদীসের এ দুই কিতাব তিনি প্রণয়ন করেন।
১২. তুহফাতুল লাবীব বিআসানীদিল হাবীব ( تحفة اللبيب بأسانيد الحبيب )। আরবি ভাষায় রচিত এ কিতাব ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে পরিমার্জিত তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এ কিতাবে তাঁর সনদ বিবৃত হয়েছে। অর্থাৎ ইলমে কিরাত, ইলমে হাদীস, ইলমে ফিকহ, ইলমে তাসাউফ ও ইলমে তাফসীরে তাঁর উস্তাদ ও শায়খগণ প্রদত্ত সনদ এ কিতাবে গ্রন্থিত হয়েছে।
১৩.আত তুহফাতুল লাতীফাহ ফী আহাদীসিল মুসালসালাতিল মুনীফাহ ( التحفة اللطيفة في احاديث المسلسلة المنيفة ) আরবি ভাষায় রচিত এ কিতাব ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। এ কিতাবে তাঁর শায়খগণ প্রদত্ত মুসালসাল হাদীসসমূহের সনদ গ্রন্থিত হয়েছে।
১৪. দালাইলুল খাইরাত। ইমাম জাজুলি রাহিমাহুল্লাহ প্রণীত দুরূদ শরীফের এ কিতাবখানা তাহকিক এবং ওজিফা আকারে পড়ার বিন্যাস করেছেন শাইখুল হাদীস ছাহেব। ২০১০ সালে ইহা প্রকাশিত হয়েছে।
১৫. আল হিযবুল আযম। ইমাম মোল্লা আলী কারী রাহিমাহুল্লাহ প্রণীত এ কিতাব তাহকীক করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে কিতাবখানা প্রকাশিত হয়েছে।
১৬. দারসে হাদীস-১। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছে দারসে হাদীস সিরিজের প্রথম গ্রন্থ। এতে হাদীসে নিয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নসব তথা বংশমর্যাদা বিষয়ক একটি হাদীসের উপর প্রদত্ত দারস গ্রন্থিত হয়েছে।
১৭.সালাতুত তারাবীহ ( القول الراجح في صلاة التراويح )। এ গ্রন্থে বিশ রাকাত তারাবীহ প্রমানাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কথিত আহলে হাদীস তথা লা-মাজহাবিদের ছড়ানো ফিতনা নিরসনে গ্রন্থখানি সহায়ক হবে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
১৮. মুন্তাখাবুস সুনান ওয়াল আসার। এটি অতি সম্প্রতি ছাপা হয়েছে। এখনো বাজারজাত হয়নি।
হিফজুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা
২০০০ সালে থানাবাজার লতিফিয়া ফুরকানিয়া মাদরাসা সংলগ্ন স্থানে তিনি জমি ক্রয় করে একটি হিফজুল কুরআন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এ মাদরাসার নামকরণ করা হয় থানাবাজার হাবিবিয়া হিফযুল কুরআন মাদরাসা। ২০১১ সালে তিনি হিফজুল কুরআন মাদরাসার সাথে একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন ।
উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালে হিফজুল কুরআন মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর তিনি থানাবাজার দাখিল মাদরাসার দুইটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষক মিলনায়তন, সুপার ও অফিস সহকারীর পৃথক অফিস রুম, ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট এবং নামাজের কক্ষ নির্মাণ করে দেন।
মসজিদ প্রতিষ্ঠা
ইছামতি দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা পশ্চিম দিকের একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ পাশে ছোট মসজিদ ছিলো দীর্ঘদিন। মাদরাসা চলাকালীন নামাজের সময় ছাত্র-শিক্ষকগণের স্থান সংকুলান হতো না। এই চাহিদার প্রেক্ষিতে এককভাবে তিনি উদ্যোগী হয়ে গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকায় অবস্থানরত তাঁর ছাত্র এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানে মাদরাসার পূর্ব দিকে ইদগাহের জন্য নির্ধারিত স্থানে সুপরিসর মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০০ সালে এলাকাবাসী এবং মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকের চাহিদার প্রক্ষিতে তিনি থানাবাজার লতিফিয়া ফুরকানিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুরাতন ছোট মসজিদের স্থলে সুপরিসর বৃহৎ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে নিজ বাড়ি সংলগ্ন স্থানে নতুন একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এ মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে আল-হাবীব জামে মসজিদ। প্রতি মঙ্গলবার বাদ মাগরিব থেকে এই মসজিদে তিনি হাদীস শরীফের দারস প্রদান করতেন। তাঁর মতো প্রথিতযশা আলেম এ উপমহাদেশে বিরল।
আল্লাহ তার খিদমাতসমূহ কবূল করুন এবং তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন