মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :সৌদি আরবের সঙ্গে বিমান চলাচল পুনরায় চালু করা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তা সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা বলছেন, অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে বিমান বাংলাদেশ এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এর আগে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিমানকে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি না দেওয়ায় হঠাৎ করেই টিকেটের জন্য হাজার হাজার শ্রমিক সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে ভিড় করছিলেন। কেননা, সৌদি এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল। কী সিদ্ধান্ত হয়েছে? গত কয়েক দিন হঠাৎ করে ঢাকায় সৌদি এয়ারলাইনসের যে প্রধান বিক্রয়কেন্দ্র, সেটির সামনের সড়কে টিকেটপ্রত্যাশী শত শত শ্রমিক ভিড় করছিলেন। তাঁরা মূলত সৌদি আরবে আগে থেকেই কাজ করতেন; কিন্তু দেশে এসে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকা পড়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে নতুন শ্রমিক, যাঁদের সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভিসা, নিয়োগপত্রসহ সবকিছু প্রস্তুত, এমন শ্রমিকও রয়েছেন। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেছেন, ‘সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিমানকে সপ্তাহে আটটি কমার্শিয়াল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মাম এই তিনটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে বাংলাদেশ বিমান। অন্যদিকে সৌদি এয়ারলাইনসও বাংলাদেশের কাছে যতগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইবে, তার অনুমতি দেওয়া হবে।’ তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, ‘সৌদি আরব অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে; কিন্তু আসন বরাদ্দ আরম্ভ করার আগে ল্যান্ডিং পারমিশন আবশ্যক। ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়া যায়নি। ফলে যাত্রীদের আসন বরাদ্দ আরম্ভ করার জন্য ফ্লাইট এখনই ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইট ঘোষণা করা হবে।’ মোকাব্বির হোসেন আরো জানিয়েছেন, যে যাত্রীর কাছে সৌদি আরব যাওয়ার ফিরতি টিকেট রয়েছে, কেবল তাদের আসন বরাদ্দ করা হবে। আপাতত নতুন টিকেট বিক্রি করা হবে না। আসন বরাদ্দের বিস্তারিত তথ্য আজ বিমানের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ভিড় এড়ানোর জন্য মার্চ, এপ্রিল, মে এ রকম মাস অনুযায়ী ফিরতি টিকেট ‘রিকনফার্ম’ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এই জটিলতা কীভাবে তৈরি হলো? মো. মহিবুল হক নামের এক শ্রমিক বলেন, এই জটিলতা শুরু হয়েছে যখন সৌদি সরকার হঠাৎ করেই ঘোষণা দিয়েছে যে শ্রমিকদের সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে সৌদি আরবে ফিরতে হবে। মহামারির কারণে মার্চের শেষের দিকে সৌদি আরবের সঙ্গে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক দেশে এসে আর ফিরতে পারেননি। অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যাঁদের বৈধ পাসপোর্ট, আকামা বা সৌদি আরবে কাজের অনুমতিপত্র এবং বিমান টিকেট থাকা সত্ত্বেও তাঁরা যেতে পারেননি। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা যাওয়ার পথে। এঁদের সংখ্যা দুই লাখের মতো। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিকের গন্তব্য সৌদি আরব। তাঁদের এ মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সৌদি আরবে যেতে বলা হয়েছিল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় চালুর একটা ঘোষণা এসেছিল সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। বাংলাদেশের সরকারি বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও সৌদি সরকারের শর্ত সাপেক্ষে ফ্লাইট আংশিকভাবে চালু করতে চেয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরবের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতি বাংলাদেশ বিমানকে দেয়নি। এরপর বাংলাদেশও সৌদি এয়ারের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি বাতিল করে দেয়। মো. মহিবুল হক বলছেন, ‘শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়াটা খুব যুক্তিসংগত ছিল। শ্রমিকরা ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। কারণ, তাঁরা আয়হীন অবস্থায় খুব দুর্দশায় পড়েছেন। কাজেই ফ্লাইট যদি না থাকে, তাহলে তাঁরা কীভাবে ফিরবেন? যে জটিলতা ছিল, তা নিরসন হয়ে গেছে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন