তিন বছরেও মিলেনি চুড়িহাট্টার আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ওই এলাকার ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে আশপাশে আগুন ছড়িয়ে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিলো। তিন বছর আগের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর এখনো দিন কাটে সেই রাতের বিভীষিকা মাথায় নিয়ে। স্বজনহারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সহায়-সম্বল পরিবারগুলোকে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরুণ আজও দেওয়া হয়নি।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের সেই ভয়াবহ দিন। দিনটি স্মরণে স্বজনহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ওই এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে।

 

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। চার্জশিটে ভবন মালিক দুই ভাই মোহাম্মদ হাসান সুলতান ও হোসেন সুলতানসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দুই ভাই ছাড়াও চার্জশিটে রাসায়নিকের গুদাম পার্ল ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতিক, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফের নাম রয়েছে।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর সমন্বয়ে ‘চুড়িহাট্টা অগ্নিকান্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সংস্থা’ গঠন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এ ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গনশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য ডিএসসিসি’র তৎকালীন মেয়র সাইদ খোকন বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে থেকে ২১টি পরিবারের সদস্যকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক মাস্টাররোল পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি, ৪টি পরিবারের মাঝে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখ টাকার চেক প্রদান ও দুইটি পরিবারকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার জন্য কাগজ প্রদান করেন।

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সংস্থার সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দুইটি দোকান বরাদ্দের স্থানটিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলার এসটিএস নির্মাণ করেছে। দোকান বরাদ্দ নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায় যে প্রতিটি দোকানের জন্য ১২ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। মেয়রের প্রতিশ্রুত কাউকেই চাকরি দেওয়া হয়নি। এমনকি ৪টি পরিবারকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের অনেকেই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে যে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে সেটিই একমাত্র সহায়তা। পরবর্তীতে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি কোনও ক্ষতিপূরণ কিংবা সাহায্য আমাদেরকে প্রদান করা হয়নি। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে উপার্জনের উৎস হারিয়ে আমরা বর্তমানে নিদারুণ আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টার ৬৪, নন্দকুমার দত্ত রোডের ওয়াহেদ ম্যানসনের দোতালার কেমিক্যাল গোডাউনের বিস্ফোরণ থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।এতে ওয়াহেদ ম্যানশনসহ আশপাশের ভবনে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াহেদ ম্যানশনে থাকা অবৈধ কেমিক্যালের কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ আগুনে যানজটে আটকে থাকা পিকআপ, প্রাইভেট কার, রিকশা, ঠেলাগাড়ি, মোটরসাইকেলসহ শতাধিক যানবাহন পুড়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যানজটে আটকে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। নিমেষে চুড়িহাট্টা মোড় হয়ে ওঠে মৃত্যুকূপ। আগুন লাগার ১৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। ঘটনাস্থলেই লাশ হন ৬৭ জন। পরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ জনে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে পঙ্গু অবস্থায় বেঁচে আছেন ২০ জন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন