জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের পর ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান মুছে ফেলা হয়েছিল। আসলে সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাস ঠিকই ফিরে আসে।
রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কুতি যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিকশিত হয়, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। সেই প্রচেষ্টায়ও আমরা সাফল্য অর্জন করব বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাঙালির ভাষার অধিকা্র আদায়ের দিন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের সকলকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের না। যারা মাতৃভাষা ভালোবাসে এবং মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছে এবং মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা, হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা খুঁজে বের করা এবং সেগুলো সংরক্ষিত করা, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টায় আমরা সফলকাম হয়েছি।
তিনি বলেন, যা কিছু অর্জন আমরা করতে পেরেছি, মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই কিন্তু তা করতে পেরেছি। যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বলতেন এবং তার লেখায়ও আছে যে মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার।
বাহান্নর ভাষা শহীদদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদের রক্ত বৃথা যায় না,বৃথা যেতে আমরা দেইনি,বৃথা যেতে আমরা দেব না।
এ সময় অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত না থাকতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদকপ্রাপ্ত গুণীজনদের শুভেচ্ছা জানান। পরবর্তী কোনও সময়ে দেখা হবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক হস্তান্তর করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
পদক পাওয়া বিশিষ্টজনেরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে মোস্তফা এম. এ. মতিন (মরণোত্তর) ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (নৃত্য) জিনাত বরকতউল্লাহ, শিল্পকলায় (সঙ্গীত) নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান বেণু, অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ, মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ এ বি এম রহমান এবং আমজাদ আলী খন্দকার।
এছাড়াও পদক পেয়েছেন সাংবাদিকতায় এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, সমাজসেবায় এস. এম. আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। এছাড়াও গবেষণায় এককভাবে পদক পেয়েছেন ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল, আর দলগতভাবে পুরস্কার পেয়েছেন ড. মো. এনামুল হক (দলনেতা), ড. সাহানাজ সুলতানা ও ড. জান্নাতুল ফেরদৌসী।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এবং একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখছেন, তাদের সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার প্রতিবছর গৌরবময় একুশে পদক প্রদান করেন।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধে অবদান, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখা ব্যক্তি, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়ে থাকে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন