সর্বস্তরে বিশুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চার শুদ্ধতম উচ্চারণের মধ্যদিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মহান শহিদ দিবস পালন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন
সাগর চৌধুরী, প্রতিনিধি : ২১ ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যে বাংলাদেশ জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রিয়াদ মহান শহিদ দিবস পালন করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের জন্য একুশের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি এবং মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। অতিমারী করোনার প্রাদূর্ভাবের কারণে প্রায় দুই বছর পর বিদ্যালয় আঙিনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করায় অনুষ্ঠান ছিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত। বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদের সভাপতিত্বে সকাল ০৭:৩০ মিনিটে এক আলোচনাসভা ও ‘একুশের নিবেদন’ শিরোণামে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি ভিত্তিক দেয়ালিকা প্রকাশ উপস্থিত সকলের মাঝে বেশ উদ্দীপনা জাগ্রত করে। একুশের মহান শহিদদের উৎসর্গ করে বিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ দিলওয়ার হসাইনের সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা “নীলশিখা”র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এসমা আইয়ুব হিবা ও নাজনীন আক্তারের যে․থ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার-কনস্যুলার এসএম রাবিকুল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর মোঃ আব্দুল হাকিম ও কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হক প্রমুখ।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফেজ শাহেদ বিন শফিক এর পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়তের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম মজুমদার ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাহা অথৈ। বাণী পাঠের পরে আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে শিক্ষকদের পক্ষে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক সানজিদা বেগম, পদার্থ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোঃ সরোয়ার জামান। অভিভাবকদের পক্ষে মোঃ মোসলে উদ্দিন মুন্না।
প্রধান অতিথি বিগ্রেডিয়ার এসএম রাকিবুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এলে মনে হয়, আমি আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে অবস্থান করছি। তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার অনন্য বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের গৃহিত কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তাঁর ছাত্রজীবনে একুশের অনুষ্ঠান আয়োজনের স্মৃতিচারণ করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ সেবার ব্রত গ্রহণ করার আহ্বান জানান। আমরা সত্যিকার অর্থে এক বীরের জাতি। আমাদের বীরত্ব গাঁথা পুরো বিশ^ময় ছড়িয়ে আছে। সিয়েরা লিয়নে আমাদের দেশীয় ক্সসনিকদের অবদানে বাংলাদেশ সড়ক নির্মিত হয়েছে। তাদেরও দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের মাতৃভাষার গৌরব গাঁথাকে সমুজ্জ্বল করেছে। আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীব সকল মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাতৃভাষার আন্দোলন করতে গিয়ে জাতির পিতা বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। কারাগারে বসেও তিনি আন্দোলনকারী বীর জনতাকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে মাতৃভাষার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করে তোলেন। দেশ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষায় উপজাতিদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
বিশেষ অতিথি জনাব সফিকুল সিরাজুল হক ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য শাহাদাত বরণকারী সকলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের অসামান্য অবদানের জন্য সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন।
মোঃ আবদুল হাকিম তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে ও স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, শত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেও সর্বস্তরে এখনো বাংলা সুপ্রতিষ্ঠিত হয় নি।
বিওডি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। যারা ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, মনের সুন্দরতম অনুভূতিগুলো প্রকাশে মাতৃভাষার কোন বিকল্প নাই। যারা স্বীয় মাতৃভাষার মর্যাদা দিতে জানে না, তারা অন্যের প্রতি সম্মান জানাতেও সক্ষম হয় না। তিনি সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিদেশ বিভূঁইয়ে মাতৃভাষা চর্চার অনন্য বিদ্যাপীঠ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (বাংলাদেশ জাতীয় কারিকুলাম), রিয়াদের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রচিত দেয়ালিকার ভয়সী প্রশংসা করেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, যারা স্বীয় মাতৃভাষাকে মর্যাদা দিতে জানেনা, তারা অন্যের ভাষার সম্মানও রক্ষা করতে পারে না। প্রবাসের বুকে একখন্ড বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভূমিকা তুলে ধরেন। বিভিন্ন দুর্যোগের মতো বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে বিদ্যালয়টি আবর্তিত হলেও সকল জাতীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি
চর্চায় আমরা কখনো থেমে থাকি নি। সকল জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এই আঙিনায় পালন করা হয়ে থাকে। পরে তিনি ভাষা আন্দোলনের একটা রূপরেখাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পূর্ণ হলো আজ। বাঙালির সামাজিক সাংস্কৃতিক চেতনার দ্বার উন্মোচনের মূলে ছিল ৫২র ভাষা আন্দোলন। ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদরা বুকের তাজা রক্তদিয়ে বাংলাকে নিয়ে যায় এক অনন্য স্থানে। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সঠিক নির্দেশনায় ভাষা আন্দোলন পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে এবং সে সফল আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকা ও সর্বপরি বিজয় অর্জনে সক্ষম হই। তাঁর সুদীর্ঘ বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনসহ আমাদের মুক্তি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট উন্মোচিত হয়।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার করা হয়। পরে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন ইসলাম ও ক্সনতিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন