দে লো য়া র জা হি দ ||
বায়ান্নের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে রফিক, সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন। এর ঠিক ৪৬ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে আরেক রফিকুল ইসলাম ও সালাম কানাডায় বসে তাদের স্বতীর্থদের নিয়ে মাতৃভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অকুন্ঠ সহায়তায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারী 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে..১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি বীর মুক্তিযুদ্ধা রফিক তাঁর সহযোদ্ধা আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন ভাষাবাসীদের সমন্বয়ে "মাদার্স লেঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড" গঠন করেন এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহন, শিল্পকর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারক এবং স্বাধীনতার অংকুর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় আসীন করেন।
দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গৌরবগাঁথায় জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের অবদান : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ছাত্র সমাজের অতুলনীয় আত্মত্যাগে হৃদ্য হয়েছে আমাদের আত্ম পরিচয়ের দীর্ঘ সংগ্রাম। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক গৌরবগাঁথায় জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের অবদান। প্রধান বিচারপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ভূমিকা বিশ্বের বুকে আমাদের এনে দিয়েছে লাল সবুজের পতাকা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।---সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের ধারণা কেবল শ্রেণিকক্ষ, পাঠদান, পরীক্ষা কিংবা ডিগ্রি অর্জনে সীমাবদ্ধ না হয়ে মৌলিক জ্ঞানচর্চা ও মুক্তবুদ্ধির অনুশীলন বহমান রাখতে হবে। আপমর জনতার নিঃস্বার্থ সেবার মানসিকতায় উজ্জ্বীবিত হতে হবে তোমাদের। মনে রাখতে শ্রেণি, পেশা, ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে আমরা সবাই শহীদদের রক্তস্নাত এ মাটির সন্তান।(২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ (বাসস) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলা ভাষার প্রচার-প্রসারসহ পৃথিবীর সব ভাষা সংরক্ষণ, গবেষণা ও বিকাশের লক্ষ্যে ১১ বছর আগে রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক।---জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকালে এ ইনস্টিটিউটের জন্য ২৩টি কাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, যার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি পুরোপুরি এবং কয়েকটি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান কাজ ছিল দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, পাশাপাশি বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া।---কিন্তু এসব ব্যাপারে আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ। বাংলা ভাষাসহ দেশের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণার যে কাজ করার কথা, তাতেও প্রতিষ্ঠানটি সফল হয়নি। গত ১১ বছরে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের একমাত্র বড় কাজ নৃ-ভাষা বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা। বস্তুত কিছু সেমিনারের আয়োজন, স্মরণিকা ও নিউজলেটার প্রকাশ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ নেই। বিষয়টি দুঃখজনক।(যুগান্তর, ২৩শে ফেব্রুয়ারী)
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO) দ্বারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষা উদযাপন এবং বহুভাষাবাদ ও বহুসংস্কৃতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এর পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বহুভাষিকতাকে উন্নীত করার জন্য প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হলেও বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালনে পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যেমন: প্রতিটি স্কুলে একটি ভাষা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, বহুভাষিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিল্পকর্ম, মাতৃভাষায় "আমার ভাষা, আমার পরিচয়" শ্লোগানকে বিবেচনায় রেখে প্রচারপত্র, ভিডিও তৈরি ও সোশ্যাল মিডিয়াতে এগুলো শেয়ার করার মাধ্যমে ভাষার বৈচিত্র্য তুলে ধরা.ঢাকা ট্রিবিউনের মতে রুটিন কার্যক্রম ছাড়া অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট: একে একটি ব্যর্থ উদ্যোগ আখ্যা দেয়া হয়েছে( ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২) প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তা সেমিনার আয়োজন, বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ, নিউজলেটার ও জার্নাল প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে গত এক দশকে ও প্রতিষ্ঠানটি তার অস্তিত্ব দেখানোর মতো উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা গবেষণা ও সংরক্ষণ এবং তা প্রচার-প্রসারের এ পর্যন্ত কি ভূমিকা রেখেছে এর জবাবদিহিতা প্রয়োজন।
বায়ান্ন থেকে ২০২২ সত্তর বছর পেরিয়ে গেলো এখনো আমরা বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও বাংলাদেশে বাংলাকে রাস্ট্র ভাষা করা যায়নি। জীবনের সর্বস্তরে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারা যায়নি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতিতে আমাদের আবেগে আপ্লোত হওয়ার চেয়ে দায়িত্ববান হওয়া প্রয়োজন ছিলো। মাতৃভাষা দিবস বিষয়টি উপহাস ও উপেক্ষার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা ভাষা কেন ৫০ বছর পরও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা পেল না, বিকশিত হতে পারছে না- তা নিয়ে সমকালের(২১ ফেব্রুয়ারি ২২) সাথে কথা হচ্ছিল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, 'বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকে পরাজিত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ জয়ী হলো; কিন্তু পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ যেমন, ঠিক তেমনি বাঙালি জাতীয়তাবাদও পুঁজির কাছে বাধা পড়ল। মানে বাঙালি ধনিক শ্রেণি পুঁজিবাদের কাছে পরাস্ত হলো। আর পুঁজিবাদের কাছে পরাস্ত হওয়ার অর্থই হলো প্রথমত, পুঁজিবাদের ভাষার কাছে পদানত হওয়া, অর্থাৎ ইংরেজির পদানত হওয়া, কেননা ইংরেজি তো বলা যায় পুঁজিবাদের মাতৃভাষা। ধনিক শ্রেণির জন্য ইংরেজি অপরিহার্য; কেননা তারা যে অসাধারণ, এটি প্রমাণের জন্য তাদের বাংলা থেকে দূরে থাকতে হয়, তা ছাড়া আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য, বৈশ্বিক পুঁজিপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যও তাদের এই ভাষার ওপর নির্ভর করতে হয়। ইংরেজির পিছু তারা দৌড়াতে চায় হীনমন্যতা থেকে, আর বাংলাকে ত্যাগ করতে চায় উচ্চমন্যতা থেকে। মধ্যবিত্তের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে- কেননা ওপরতলার দৃষ্টান্তই তো নিচের দিকে ধাবিত হয়।'
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালতে বাংলায় রায় লেখা শুরু হয়েছে। এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে আলাদা শাখা চালু হয়েছে। হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীরা যাতে আদালতের রায় বুঝতে পারে, সে জন্য ইংরেজিতে দেওয়া রায় বাংলায় অনুবাদ করতে সুপ্রিম কোর্টে যুক্ত হয়েছে নতুন সফটওয়্যার ‘আমার ভাষা’। বলা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওই সফটওয়্যারটি দিয়ে রায়গুলো বাংলায় অনুবাদ করা যাবে। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এ কথা জানান।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, "বাংলা ভাষার মর্যাদা কমিয়ে ইংরেজি ব্যবহার করবো না" বাংলা ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ভাষা। আমাদের ভাষার মর্যাদা কমিয়ে আমরা ইংরেজি ব্যবহার করবো না।---তিনি বলেন, ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের সময় বাংলা ভাষা যেন প্রাধান্য পায় আমরা সেই চেষ্টা করে যাবো। আমি এমন কথা বলি না যে, আমরা ইংরেজি ব্যবহার করব না। কারণ সারা বিশ্বে চলতে হলে ইংরেজি ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু আমরা আমাদের ভাষার মর্যাদা কমিয়ে ইংরেজি ব্যবহার করবো না। শহীদ দিবসে এটাই হোক আমাদের প্রত্যয় (বাসস, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২)
ভাষা সংরক্ষণ ও মাতৃভাষার মান উন্নয়নের ওপর কখনো গুরুত্বারূপ করা হয়নি তা হোক বাংলাদেশ অথবা মানবাধিকারের দেশ বলে খ্যাত কানাডায়। বহুসংস্কৃতিবাদ ও স্বাক্ষরতা নিঃসন্দেহে যে কোন দেশের একটি রাজনৈতিক অঙ্গিকার, আর এর সাথে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির চরিত্র.. যার কারণে কখনো কখনো আমাদের রাষ্ট্রকে ও আপসকামিতার আশ্রয় নিতে হয়। মায়ের ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সচেতনতা প্রসারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ হোক একটি মোক্ষম উপলক্ষ। প্রতিযোগি নয় বরং সম্পূরক শক্তি হিসাবে অন্যান্য সংগঠনের সাথে একাত্ন্য হয়ে দেশে বিদেশে কাজ করার মাধ্যমে ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে বিশ্ববাসী ।(যুগান্তর, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বাংলাদেশের বিপন্ন ভাষার তালিকায় ও যুক্ত হচ্ছে আদিবাসী মাতৃভাষা। সরকারি হিসাবে দেশের ১৪ ভাষা বিপদগ্রস্ত/ তালিকায় উঠে আসেনি বিপন্নতার পুরো ছবি: ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে সারাদেশে চালানো বাংলাদেশের নৃভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় ১৪ ভাষাকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো খাড়িয়া (জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার), সৌরা (জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার, তবে এই ভাষায় কথা বলে মাত্র চারজন), কডা (জনসংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০), মুণ্ডারি (জনসংখ্যা ৩৮ হাজার ২১২), কোল (জনসংখ্যা দুই হাজার ৮৪৩), মালতো (জনসংখ্যা প্রায় আট হাজার), কন্দ (জনসংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০), খুমি (জনসংখ্যা তিন হাজার ৩৬৯), পাংখোয়া (জনসংখ্যা দুই হাজার ২৭৪), রেংমিটচা (জনসংখ্যা প্রায় ৪০), চাক (জনসংখ্যা দুই হাজার ৮৩৫), খিয়াং (জনসংখ্যা তিন হাজার ৮৯৯) লালেং বা পাত্র (জনসংখ্যা দুই হাজার ৩৩) ও লুসাই (জনসংখ্যা ৯৫৯ জন)।(সমকাল, ২১ ফেব্রুয়ারি ২২).
বাংলায় সহজ বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার বিকাশ ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না সে উপলব্ধি থেকে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান এমনকি শিল্পসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈজ্ঞানিক পরিভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক শব্দের কঠিন পরিভাষা ব্যবহার সবার বোধগম্য নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত শব্দ এবং আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় তা গ্রহণ করতে হবে।---প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান, ইংরেজি, ফরাসিসহ অনেক ভাষার শব্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলা ভাষায় প্রায় আট হাজার বিদেশি শব্দ আছে।---প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই বিষয়ে এতটা রক্ষণশীল হওয়া উচিত নয়, বিজ্ঞানের সহজ শিক্ষার জন্য বাংলা ভাষায় সাধারণভাবে ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক পরিভাষাগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি।
দৈনিকশিক্ষা, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ "ইংল্যান্ডেই তিন শতাব্দী লেগেছিল ইংরেজিতে রায় লিখতে" একটি প্রতিবেদনে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তিনি উচ্চ আদালতে বিচারপতি থাকাকালে প্রায় পুরো সময়ে বাংলায় রায় দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন, যা এখনও কোনো কোনো বিচারপতি অনুসরণ করে চলেছেন।---প্রথমদিকে ইংরেজিতে রায় দেয়া প্রসঙ্গে জনাব খায়রুল হক বলেন : সেটা হাইকোর্ট রুলের কারণে। আবার সংবিধানে লেখা আছে বাংলার কথা। কোনো প্রধান বিচারপতিও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেননি। এর মধ্যে জনকণ্ঠে পরপর তিন দিন তিনটা নিবন্ধ প্রকাশ হলো সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরও প্রধান ছিলেন। নিবন্ধ তিনটি পড়ার পর আমি কনভিন্সড হলাম- ইংল্যান্ডেও রায় প্রথমে দেওয়া হতো লাতিন ভাষায়। ইংল্যান্ডের রাজারা ফরাসি ভাষায় কথা বলতেন। আর পণ্ডিতি ভাষা ছিল; যেমন এখানে ছিল সংস্কৃত, সেখানে লাতিন। যেহেতু জজ সাহেবদের পণ্ডিত বলেই মনে করা হয়, তারা লাতিন ভাষায়ই রায় দিতেন। পরবর্তী সময়ে কিছু জজ সাহেব ফরাসি ভাষায় দিতেন, তবে ইংরেজি ভাষায় কেউ রায় দিতেন না। কারণ ইংরেজি ভাষাটা ছিল কৃষকদের ভাষা, শ্রমিকদের ভাষা। ১০৬৬ সালে উইলিয়াম দি কনকোয়ারার ইংল্যান্ড দখল করে রাজা হলেন। তার মাতৃভাষা ফ্রেঞ্চ। তিনি তো ফ্রেঞ্চ ভাষাতেই কথা বলতেন। আমি অনেক খুঁজেও বের করতে পারিনি- কে প্রথম ইংরেজিতে রায় দিয়েছিলেন। আমার একটা আর্টিকেল আছে। সেখানে দেখিয়েছি, অন্তত ৩০০ বছর লেগেছে ইংরেজি ভাষায় পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে। আমাদের দেশেও অনেকটা এগিয়েছি আমরা বাংলায় রায় লিখতে।"
ঔপনিবেশিক শাসনের শক্তিশালী অস্ত্র ইংরেজি ভাষা আমাদের আঁকড়ে যেন ধরে রেখেছে। আঁকড়ে ধরে রেখেছে ধর্ম ভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা ও এ দুইয়ের চাপেএকটি সুসমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সফল হয়নি আজো । অধ্যায়নের ভাষা, সাহিত্যের ভাষা, কারিগরি ও বিশেষায়িত বিষয়ের ভাষা, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থায় শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতির ভাষা ও গণমাধ্যমের ভাষা এগুলোকে নিয়ে কোনো গবেষণা নেই..তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার কাজ এগোচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্টপোষকতায় ১১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট যার প্রধান কাজ ছিল বাংলা ভাষার প্রচার-প্রসারসহ পৃথিবীর সব মাতৃভাষা সংরক্ষণ, গবেষণা ও বিকাশ যা অর্জনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই.বায়ান্ন থেকে ২০২২ একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসের ৭০ বছর পূর্তিতে স্মৃতিঘেরা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের গৌরব উজ্জ্বল এ দিন পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয়েছে একুশে। বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে সমুন্নত করার মহান দায়িত্ব বোধ থেকে বাংলাদেশকে সর্বস্তরে বাংলা চালু ও চর্চা করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে ।
লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন