টাওয়ার হ্যামলেটসে আবারো মেয়র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত লুতফুর রহমানের

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমান আসন্ন নির্বাহী মেয়র নির্বাচনে প্রার্থীতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন মাস বারার ২০টি ওয়ার্ডের সাধারন মানুষ এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে নিজের প্রার্থীতা নিয়ে কনসালেটশন করেই এই সিদ্ধান্ত। শিগ্রই নানা পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। তার আশা ,কমিউনিটির যথার্থ প্রতিনিধিত্ব হিসেবে তথা পিপুলস চয়েস হিসেবে বিবেচিত হবেন তিনি। লুৎফুর সমর্থিত এ্যাসপায়ার পার্টিও আলাদা করে মেয়র ও কাউন্সিলারদের পরিচিতি সভা আয়োজন করবে।
লুৎফুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, সবার সমর্থনে একমাত্র আমাদের টিম এ্যাসপায়ার লেবার পার্টির নেতৃত্বে চলমান সার্ভিস কাট তথা চরম দুরাবস্থা থেকে বারার মানুষকে রক্ষা করতে পারে। আমি দু বার নির্বাচিত মেয়র ছিলাম, আমার সময়ের মধ্যে যতটুকু আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার চেয়ে বেশী বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লেবার মেয়র এই সাত বছর ক্ষমতায় থেকে শুধু টাউন হলেই বসেছেন। কাজের কাজ কী হয়েছে আপনারাও ভালো জানেন। কমিউনিটির উন্নতির বদলে যেনো শাস্তি দেয়া হচ্ছে। যেসব জরুরী সার্ভিসের উপর আমরা নির্ভর করি সেগুলো কর্তন করা হয়েছে।

লুৎফুর রহমান আগামী দিনের জন্য বিস্তারিত এজেন্ডা পরবর্তিতে প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, আমাদের কাজ হবে উন্নত ও অগ্রসর এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের সফলতার রেকর্ড থেকে বলা যায়, আমরা টাওয়ার হ্যামলেটসে পুনর্জাগরণ আনতে চাই। সুন্দর ভবিষ্যত নির্মান করতে চাই।
লুৎফুর বলেন, আমি জানি প্রতি বছর কাউন্সিল ট্যাক্স বিশাল ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া মানুষজন ক্ষুব্ধ। আমরা লিডারশীপ ও মেয়রশীপের ৭ বছরের মতো কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি না করার প্রতিশ্রুতি দিতে চাই। বারায় ক্রাইম এবং ড্রাগস সমস্যা চরমে। আর আমরা মাত্র ৫৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করে এ ক্ষেত্রে যথাসাধ্য উন্নতি এনেছিলাম। ডিলার এ ডে প্রোগ্রাম ছিলো প্রভাবশালী। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের স্বীকৃতি ছিলো জাতীয় পর্যায়ে। আজ পার্শ্ববর্তী বারা নিউহামের সেই সুনাম। উল্টো ওফস্টেড রিপোর্টে আমাদের হচ্ছে বদনাম। সারা দেশে এডুক্যাশন মেইনটেনেন্স এলাউন্স (ইএমএ) বন্ধ হয়েগেলে আমি নিজস্ব ফান্ডিং-এ আমাদের বারায় চালু রাখি। বাড়তি কাজ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে চালু করি ইউনির্ভাসিটি গ্রান্ট (প্রতি স্টুডেন্ট ১৫শ পাউন্ড)ও ফ্রি স্কুল মিল। হাউজিং-এর ক্ষেত্রেও আমরা ইউকের সেরা ছিলাম। হাজার হাজার মানুষ নতুন ঘর পেয়ে ছিলেন দারুন আনন্দিত। পাইপলাইনে রেখে আসা ৩ হাজারসহ মোট ৮ হাজার ৫শ ৯০টি নতুন সোসাল হাউস আমরা তৈরী করি। আর ৭ বছরে বর্তমান মেয়র হাতে গুনা কিছু ঘর তৈরী করেছেন।

নির্বাচিত হলে একটির পর একটি ইয়ুথ সেন্টার আবারো চালু করা হবে আমার কাজ এ কথা উল্লেখ করে লুৎফুর বলেন, আমরা ৪৮টি নতুন ইয়ুথ সেন্টার চালু করি,যার বেশীর ভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেমন বন্ধ হচ্ছে লাইব্রেরী, যেখানে আমরা নতুন লাইব্রেরীর জন্য বিনিয়োগ করেছিলাম। ব্যাতিক্রমী বিভিন্ন কর্মসূচীর পাশিপাশি হাউজিং, এডুক্যাশনসহ নানা ক্ষেত্রে জনপ্রিয় প্রজেক্ট গুলো আবারো ফিরিয়ে আনা হবে আমার প্রধানতম কাজ।

বিবৃতিতে বলা হয়, লুৎফুর রহমানের অনেক সফল কর্মসূচীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ৩ মিলিয়ন পাউন্ড খরচে সিডকাপে নতুন কমিউনিটি ব্যারিয়েল সাইট (কবরস্থান) প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে টাওয়ার হ্যামলেটসের নাগরিকরা অতি স্বল্প খরচে আপনজনকে কবর দিতে পারেন। এই করোনায় বিপুল মানুষের উপকারে এসেছে এই কবরস্থান। হোয়াইটচ্যাপলে নিজস্ব টাউন হল নির্মান করে ভাড়ার নামে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড খরচ কমানোর প্রজেক্ট শুরু। ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড খরচে ফ্রি হোম কেয়ার (দেশে একমাত্র বারা)। ভিক্টোরিয়া পার্কসহ বিভিন্ন পার্কে ও ক্লিন-আপ প্রজেক্টে বিনিয়োগ। কমিউনিটি তথা বাংলা স্কুল চালু রাখা। লন্ডন লিভিং ওয়েজ চালু করা,চাকুরী এবং ট্রেনিং প্রজেক্টের মাধ্যমে সহযোগিতা। এছাড়া কমিউনিটি সংগঠনগুলোকে গ্রান্টস দিয়ে বাচিয়ে রাখা এবং ফেইথ গ্রান্টস চালুর মাধ্যমে সকল ধর্মের প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা।

২০১০-২০২২: লুৎফুরের পাশে জনগন এবং ইয়েস ফর মেয়রের বিশাল জয়:
প্রেস রিলিজে বলা হয়, লুৎফুর রহমানের প্রতি সাধারন মানুষের সমর্থন বার বার প্রমানিত হয়েছে। লেবার পার্টি থেকে মনোনিত হওয়ার পরও অন্যায় ভাবে তার মনোনয়ন কেড়ে নিলে ২০১০ সালে সাধারন মানুষের বিশাল সাড়ায় তিনি বারার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেন । তারপর ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেই শুরু হয় নানা চ্যালেনজ আর মিথ্যাচার। কিন্তু সবকিছু ভুল প্রমান করে পুনরায় নির্বাচিত হন লৎফুর। তারপর একজন মাত্র কমিশনারের রায়ে তার বিজয় হাতছাড়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একটির পর একটি তদন্ত এবং প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে পুলিশ জানায় লুৎফুরের বিরুদ্ধে কিছুই করার নেই, কোনো যথার্থ প্রমান নেই। আর্থিক কারনে আর এ্যাপিলে লড়তে পারেননি তিনি। ২০২২ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো যখন জনগন তাকে নিয়ে ভাবনা শুরু করে তখনই কী ভাবে তাকে আটকানো যায় তারও যেনো ভাবনা শুরু হয় একশ্রেনীর রাজনীতিবিদদের মাঝে। কোনো উপায় না পেয়ে তারা টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগনের ক্ষমতা তথা মেয়র সিস্টেমই তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মেয়র সিস্টেম থাকবে কী না এই ভোটাভোটিতে তথা রেফারেন্ডামে একত্রিত হন লেবার-টোরিসহ প্রায় সকল পার্টি। কিন্তু লৎফুর একাই তার সমর্থকদের নিয়ে সক্রিয় হন ইয়েস ফর মেয়র ক্যাম্পেইনে। ২০২১ সালের মে মাসের এই রেফারেন্ডামে ৬৩ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী মেয়র সিস্টেম। আর মেয়র বিরোধী তথা লিডার সিস্টেম পায় মাত্র ১৭ হাজার ভোট। রেফারেন্ডামে লুৎফুরের ইয়েস ফর মেয়র ক্যাম্পেইনে সরাসরি সমর্থন দেন লন্ডনের প্রথম মেয়র ক্যান লিভিংস্টন, প্রথম বাংলাদেশী অরিজিন হাউস অব লর্ডস মেম্বার এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক লেবার পার্টিও ডিপুটি লিডার ব্যারোনেস পলা উদ্দিন ও পপলার লেবার পার্টির সাবেক চেয়ার এবং আসপায়ার পার্টির সেক্রেটারী লিল কলিন্সসহ আরো অনেকে।
এই বিজয়ের রেশ শেষ হতে না হতেই আসে স্থানীয় উইভার্স ওয়ার্ডর একটি উপ নির্বাচন। সেখানেও লুৎফুর সমর্থিত আসপায়ার পার্টির কাউন্সিলার প্রার্থী কবির আহমদ বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন ।সাম্প্রতিক এই দুই ভোটাভোটিতে মাঠে ছিলেন লুৎফুর। জনগণ যে তার সাথে আছে তার প্রমান তিনি নিজেও পেয়েছেন। তাই আত্মবিশ্বাাস নিয়ে মানুষের দরজায় যাচ্ছেন এবং নতুন এক সম্ভাবনার জানান দিচ্ছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন