পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারে সতর্কাবস্থায় রাশিয়া, পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ

দে লো য়া র  জা হি দ

পারমাণবিক শক্তিধর রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা দলকে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে রাখার জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ২৭ ফেব্রুয়ারি সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি এমন নির্দেশ দেন..ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ব্যাপারে অবন্ধুত্বসুলভ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় নিয়ে এসেছেন। বিবিসি জানিয়েছে "রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেদেশের পারমাণবিক শক্তিকে বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার জন্য আদেশ দেবার পর নেটো জোটের প্রধান একে "বিপজ্জনক ও দায়িত্বহীন" বলে বর্ণনা করেছেন।

ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর একটি পরিস্থিতি আরো গুরুতর করে তুলছে।রাশিয়ার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর জন্য এটাই সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কাবস্থা। মি. পুতিন তার ভাষায় “নেটো দেশগুলোর আক্রমণাত্মক বক্তব্য-বিবৃতি”র পর এ ঘোষণা দেন।

যুক্তরাষ্ট্র একে “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে বর্ণনা করেছে।

জাতিসংঘে মার্কিন দূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড সিবিএস নিউজকে বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, মি. পুতিন এমনভাবে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধি করছেন যা “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যার দিক দিয়ে রাশিয়ার অবস্থান দ্বিতীয় এ ছাড়া দেশটির হাতে বিপুল পরিমাণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর যখন বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা চরমে, সে মুহূর্তে পুতিনের ওই নির্দেশ পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

➤ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমা ব্যবহার করে রাশিয়ার সব ধরনের বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পুতিনের পারমাণবিক হুমকিকে রাজনৌতিক বিশ্লেষকরা বিভ্রান্তিকর বলে মনে করছেন। ২০২০ সালে, মস্কো কখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এ বিষয়ে পুতিন চারটি ক্ষেত্রে "মৌলিক নীতি"কে  অনুমোদন করেছিলেন।

এগুলি ছিল যখন রাশিয়ার বা মিত্র অঞ্চলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলে , যখন কোনও শত্রু পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, কোনও রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্রের সাইটে আক্রমণ করে বা রাশিয়ান রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে। বর্তমান সংঘাতে সেসব মানদণ্ডের কোনোটিই পূরণ হয়নি।---এছাড়াও  রাশিয়া জানুয়ারিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্য চার স্থায়ী সদস্যদের সাথে যোগ দিয়েছিল এবং একটি নথিতে স্বাক্ষর করে যে "পরমাণু যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না এবং কখনোই এ লড়াই করা উচিত নয়"।(সূত্র: এএফপি) মস্কো-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহাওয়ারের মতে, 'পুতিন শক্ত অবস্থানে আছেন। একবার যদি পশ্চিমারা রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সম্পদ আটকে রাখে এবং রাশিয়ার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, এতে পুতিনের কাছে তেমন বেশি বিকল্প পথ নেই।'---'পুতিনের কাছে একটি পথ হচ্ছে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া, এতে ইউরোপিয়ানরা ধাক্কা পাবে। আরেকটি বিকল্প পথ হচ্ছে ব্রিটেন ও ডেনমার্কের মধ্যে উত্তর সাগরের কোথাও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণ করা (বিবিসি)

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসী অভিযান যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপে তার অবস্থান সুসংহত করতে সহায়তা করছে ,যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল জার্মানি ও ফ্রান্সকে নিজ বলয়ে ধরে রাখা। ইউরোপজুড়ে আবারও ন্যাটো নড়ে চড়ে বসছে।  যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় ইউরোপকে রাশিয়ার ভয় দেখিয়ে আয়ত্তে রেখেছে।  ইউক্রেন যুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারে নতুন রাস্তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন করে খোলে গেছে। আফগানিস্তানে বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে এ সঙ্কট। সবদিক বিবেচনা করেই ইউক্রেন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক এক মেরুভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তে বহু মেরুকেন্দ্রিক অবস্থার উন্মেষ ঘটছে বলে আলাপ প্রচলিত আছে। রাশিয়া নিজের পেশিশক্তি প্রদর্শন করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের  মেরুভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার পথকে প্রশস্থ করে দিলো। পারমাণবিক বিকল্পের প্রচার নিঃসন্দেহে রাশিয়ার একটি মরিয়া পদক্ষেপ যে পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় বেলারুশ ও তার পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায় ইউক্রেনে রুশ হামলা গড়াল পঞ্চম দিনে। এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউরোপের দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে দুই দেশেরই অসংখ্য সেনা-বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন। যুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মিত্র ও সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নজিরবিহীন ছায়াযুদ্ধে পশ্চিমারা/ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, গ্রিস
ইউক্রেন থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে বসে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে এই যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধে জয়লাভের জন্য যত উপায় অবলম্বন সম্ভব, পশ্চিমা দেশগুলো তার কোনোটিই বাকি রাখেনি। তবে একটি যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণের যে বেদনা, হাজারো ক্ষত নিয়ে সেই বেদনা ইউক্রেন একাই সয়ে যাচ্ছে। পরাশক্তিগুলোর দীর্ঘদিনের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই ইউক্রেনের মাটিতে মর্টার শেল ও মিসাইলের রূপে দেখা দিচ্ছে। এ কথা নিশ্চিত, ইউক্রেনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ইতিহাসের নজিরবিহীন ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমারা। ইউক্রেন হামলার আগের কয়েক মাসজুড়ে এই ছায়াযুদ্ধেরই মহড়া চলেছে। যে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে সংকট তৈরি হয়েছিল, মাসব্যাপী একাধিক কূটনৈতিক আলোচনায় সেই ইউক্রেনই অনুপস্থিত ছিল। তার বদলে আলোচনার টেবিলে দরকষাকষি করেছে ইউক্রেনের পশ্চিমা বন্ধুরা। নিজেদের স্বার্থ ও চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোনো সমাধানে না পৌঁছে ইউক্রেনকে এক প্রকার যুদ্ধের মাঠে ঠেলে দিয়েছে সেই পশ্চিমারাই। একটি যুদ্ধের যে ভয়াবহতা, তার সামনে এখন বিপন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেনবাসী। আর অর্থ, অস্ত্র, প্রযুক্তি ও মিডিয়াকে ব্যবহার করে সেই যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।(সমকাল, ২৮ ফেব্রুয়ারি)

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় শান্তিপ্রিয় মানুষ। সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে এখনই বিশ্বনেতৃবৃন্ধকে  আলোচনায় বসতে হবে ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতিসংঘের মাধ্যমে বৈশ্বিক মনোযোগ সৃষ্টির সময় ও সুযোগ যেন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন