জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
ইউক্রেন সংকটে রাশিয়ার কিছু ব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অর্থায়নে কোন প্রভাব পড়বে কিনা তা যাচাই করে দেখছে বাংলাদেশ সরকার।
দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার দাবি, প্রকল্পটির অর্থায়নে নেতিবাচক কোন প্রভাব পড়বে না। একই সঙ্গে কর্মকর্তারা পরিস্থিতি যাচাই করে দেখার কথা বলছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন। তারা বলেছেন, প্রকল্পটিতে ঋণ হিসাবে অর্থের বড় অংশের যোগান দিচ্ছে রাশিয়ার যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ভিবি ব্যাংক, সেই ব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পটির অর্থায়ন নিয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। খবর বিবিসি বাংলার।
দেশে একক প্রকল্প হিসাবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ অর্থেরই যোগান দিচ্ছে রাশিয়া ঋণ সহায়তা হিসাবে। এখন ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ভিবি ব্যাংকসহ দেশটির কিছু ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ সহায়তার বড় অংশ দিচ্ছে রাশিয়ার ভিবি ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির রাশিয়ার অর্থ যোগান দিতে কোন প্রভাব পড়বে কিনা-সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান বলেছেন, পারমাণবিক প্রকল্পের কাজে এখনও কোন সমস্যা তারা দেখছেন না।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ যা হয়, কোন একটি কাজ শেষ হলে বা টার্গেট পুরো হলে, তখন এখান থেকে আমাদের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এর ভিত্তিতে যে প্রতিষ্ঠান সেই কাজটি করে, সে প্রতিষ্ঠানকে রাশিয়ার ফেডারেশনের পক্ষে ব্যাংকগুলো থেকে পেমেন্ট দেয়া হয়" বলে তিনি উল্লেখ করেন ‘
জিয়াউল হাসান জানিয়েছেন, প্রকল্পে এখন রাশিয়া, ইউক্রেন এবং কাজাখস্তানের চার থেকে ছয় হাজার লোক কাজ করছে। আর আমাদের দেশীয় শ্রমিক সহ মোট ২৬ হাজারের মতো লোকবল রয়েছে। তাদের পেমেন্টেরতো কোন সমস্যা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে কাজ পুরোদমে চলছে এবং এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার খবর আমরা পাইনি।'
কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটির অর্থের যোগান দেয়ার পাশাপাশি রাশিয়া সরকার নিজেরা নির্মাণ কাজও করে দিচ্ছে এবং প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে। ফলে বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, রাশিয়া যেহেতু নিজেরা প্রকল্পের কাজ করছে, সেজন্য রাশিয়ার কোন ব্যাংক নিষেধাজ্ঞায় আওতায় থাকলে অন্য ব্যাংক থেকে অর্থের যোগান মিলবে।
কোন সমস্যা হবে না বলেই কর্মকর্তাদের ধারণা। এরপরও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা তারা বলছেন।
অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলেছেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ভিবি ব্যাংক যেহেতু এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে বড় অংশের ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, ফলে এই প্রকল্পের একটা সংকট হতে পারে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘কোন ধরনের সমস্যা হতে পারে-সেটা দ্রুত যাচাই করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এখন পশ্চিমা এবং বাংলাদেশেরও কোন ব্যাংক বিধিনিষেধের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া ঋণপত্র খুলবে না।কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়তে চাইবে না এবং সেটাই বড় সমস্যা" বলে তিনি মনে করেন।’
অর্থনীতিবিদরা আরও বলেছেন, রাশিয়ার কিছু ব্যাংক যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে, বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঋণ সহায়তা পেতে এবং রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, এ মুহুর্তে প্রভাব বোঝা যাচ্ছে না।একই সাথে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, সেই ব্যাংকগুলোর সাথে সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে সঙ্গতকারণেই প্রভাব পড়বে।’
বাংলাদেশ সরকার এখনও তা মনে করছে, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট আগামী বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দু'টি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন