গৌরবের মাস শুরু

gbn

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

শুরু হলো বাঙালির গৌরবের মাস। অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে উত্তাল ছিল বাঙালি জাতি। আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাসেই ডাক এসেছিল বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে এ মাসে। এই মার্চেই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দেওয়ার ওই দিনটি কেমন ছিল? সাতই মার্চের ওই দিনটির কাব্যভাষ্য রচনা করেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ- ''শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/ রবীন্দ্র্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।/ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল/ হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার/ সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর-কবিতাখানি : 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'/ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।''

 

মূলত ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকেই বাঙালির ধারাবাহিক স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ ধাপের প্রতিরোধের শুরু। এ দিনই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দু'যুগের ধারাবাহিক শোষণের বলয় থেকে বের হয়ে মুক্তির স্বাদ নিতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে পুরো দেশ ও জাতি। এই দিন দুপুর ১টায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর প্রধান ইয়াহিয়া খান আকস্মিক এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। বর্বর এই স্বৈরশাসকের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ। ছাত্র, শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কলকারখানার শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট। বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন ঢাকার মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর সামনে। সেখানে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছুটে যান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পরে সেখান থেকেও তারা হোটেল পূর্বাণীর সামনে সমবেত হন। চূড়ান্ত সংগ্রামের ঘোষণার অধীর অপেক্ষায় উন্মুখ স্বাধীনতাকামী বিক্ষুব্ধ সেসব মানুষের মুখে 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো' স্লোগান আগের চেয়ে আরও দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হতে শুরু করে।

ইয়াহিয়ার ১ মার্চের ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারা বাংলা। সে দিনই দেশজুড়ে শুরু হওয়া সর্বাত্মক বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় সূত্রপাত ঘটে অসহযোগ আন্দোলনের। একপর্যায়ে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিমা সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণই অকার্যকর হয়ে পড়ে। প্রকৃত কর্তৃত্ব চলে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। এরপর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ঘোষণা দেন, তা স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে আরও সুনির্দিষ্টভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় জাতিকে। ইস্পাতকঠিন সুদৃঢ় ঐক্যে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে গোটা জাতি।

এই যখন অবস্থা, তখনই রচিত হচ্ছিল বাঙালি নিধনের নীলনকশা। নানা কূটকৌশলে সময়ক্ষেপণের পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা এই বাংলায় নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৫ মার্চ কাল রাতে পৃথিবীর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণহত্যার মধ্যরাতেই তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর হাতে গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সে দিনের ডাকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক চক্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি, সশস্ত্র প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয় ঘটে নতুন একটি দেশের- বাংলাদেশ। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর বহু প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন