আবুল কাশেম রুমন,সিলেট||
সিলেটে বিয়ে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে আমেরিকা প্রবাসী মৌসুমী সহ তার পিতা-মাতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর দক্ষিণ ভাগের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে নগরীর হাউজিং এস্টেট ৫৬ নং বাসার এলাকার বাসিন্দা জাকের আহমদ বাদি হয়ে অতিরিক্ত মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে মামলা (সিআর নং-১১/২০২১) দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
আদালতের নির্দেশে তদন্তপূর্বক এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ মামলাটি (নং-৭(২)২১) রেকর্ড করে। মামলায় মৌসুমীর ও তার পরিবার বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনেন। মামলায় স্ত্রী মৌসুমী এবং তার পিতা-মাতাকে আসামি করা হয়।
বুধবার (১৬ মার্চ) আদালত তাদের বিরুদ্ধে ফের দ্বিতীয় বারের মতো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূক্তভোগীর অভিযোগ জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট চুনাহাটি গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রফিকুর আর এম এ মুনিম (৫০) ও স্ত্রী ইমামা বেগম দম্পতির বিরুদ্ধে মেয়ে শারমীন সুরভী মৌসুমীকে (৩১) বিয়ে দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন আসামিরা প্রতারণা মূলক ভাবে ১৫ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কারের স্থলে ১ লাখ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে ২০ লাখ টাকা মুয়াজ্জল দেখিয়ে নিকাহনামা সম্পাদন করে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অভিযোগপত্রের স্বপক্ষে মতামত দেন আদালতের পিপি। মামলায় জব্দকৃত আলামতের মধ্যে শারমীন সুরভী মৌসুমী কর্তৃক প্রথম স্বামী ডা. মো. ফরিদ আহমদের সাথে বিয়ের কাবিন নামা ও অর্থ আত্মসাত কল্পে প্রতারণা পূর্বক তার বিরুদ্ধে দায়েরী পরিবারিক মামলার তথ্য-প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়।
অভিযোগে জাকের আহমদ উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি শারমিন সুরভী মৌসুমীর সঙ্গে ২১ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্যক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে মেয়েকে কুমারী দেখিয়ে তার সঙ্গে বিয়ে দেন মুনিম দম্পতি। বিয়ের ১৩ দিন পর ২৮ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে স্বস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান মুমিন দম্পতি।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মৌসুমী, তার মা মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলতেন। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ২১ নভেম্বর মৌসুমী ফোন দিয়ে বলেন, তোমাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে হলে মায়ের অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এ খবর জানতে পেরে জাকেরকে তার মা বলেন, এতো টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দরকার নেই। তুমি সাইপ্রাসে ছিলে আবার সাইপ্রাসে চলে যাও।
২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফরিদ আহমদ নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে মৌসুমীকে বিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা-মা। এ তথ্য তার কাছে গোপন রাখা হয়। ওই চিকিৎসকের ঔরসজাত একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল সন্তান জন্ম দেন মৌসুমী।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে মৌসুমীর প্রাক্তণ স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন জাকের। ওই চিকিৎসক পরিবারও মৌসুমীর প্রতারণার ফাঁদে আর্থিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তথ্যমতে, অভিযুক্ত বাবা-মায়ের সম্মতিক্রমেই ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডা. ফরিদের সঙ্গে মৌসুমীর বিয়ে হয় ৩০ লাখ টাকা দেনমোহরে। পরে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মোহরানা আদায়ের জন্য পারিবারিক মামলা (নং-৩৯/২০১৮) দায়ের করেন মৌসুমী। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ সোলেনামা দাখিলের মাধ্যমে তা নিস্পত্তি হয়। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি ডা. ফরিদের কাছ থেকে এসব ঘটনা জানতে পারেন জাকের আহমদ। অভিযোগে দেখা যায়, জাকেরের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে এবং দেনমোহর বাবদ ৬ লাখ টাকা মু’অজ্জল রেখে কাবিন সাব্যস্তক্রমে বিয়ে হয়। অভিযুক্তরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর কাবিনের কপি সংগ্রহ করে দেখা যায়, তাতে ২১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে । সেই সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারের ৬ লাখ টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা কর্তন দেখান সুকৌশলে। আর আগের বিয়ের কথাও গোপন রাখা হয়েছে।
আদালতে করা অভিযোগের সঙ্গে মৌসুমীর পূর্ববর্তী নিকাহনামা, সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলার (৩৯/২০১৮) কপি, আরজি, জবাব, সোলেনামা ও রায় ডিক্রির ছায়ালিপি, মৌসুমীর বর্তমান বিয়ের ছবি ও পরবর্তী বিয়ের নিকাহনামা ফিরিস্তি দিয়ে দাখিল করেন জাকের।
আদালতের নির্দেশে তদন্তে সত্যতা পেয়ে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ মৌসুমী ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে আগের বিয়ে গোপন করে বিবাহ সম্পন্ন করার অপরাধে মামলা (নং-৭(২)২০২১) দায়ের করেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন