মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে-নিউইয়র্কের ইয়েলো ক্যাবের ব্যয়বহুল মেডেলিয়ন লাইসেন্সের ঋণ মওকুফের দাবিতে ইয়েলো ক্যাবচালকরা ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইয়েলো ক্যাবচালকেরা কুইন্স বরো ব্রিজ ও ব্রুকলিন ব্রিজে অবস্থান নেন। এ সময় দুই সেতুতে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরে নিউইয়র্ক নগরের যানবাহনের ঐতিহ্যবাহী ইয়েলো ক্যাব ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। বিশেষ করে লিমোজিন, ট্যাক্সি, উবার, লিফটসহ বিভিন্ন গাড়ি রাস্তায় চলাচল শুরুর পর থেকেই সব বদলে গেছে। জানা গেছে, ইয়েলো ক্যাবচালকরা বেলা পৌনে ১টার দিকে ব্রুকলিন ব্রিজের ম্যানহাটানের বাউন্ড সাইটে গাড়ি নিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় কয়েক মিনিটের জন্য ওই সেতুতে তাঁরা যান চলাচল বন্ধ করে দেন। ২০১৩ সালের একই সময়ের তুলনায় গত বছরের মার্চে ইয়েলো ক্যাব থেকে আয় কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের মার্চে এই ক্যাব থেকে আয় হয়েছিল ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৬ ডলার, যা ২০১৯ সালের মার্চে কমে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৪ ডলারে ঠেকেছে। এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন জানায়, ‘আমরা কুইন্স বরো সেতুটি বন্ধ করে দিয়েছি, কারণ ইয়েলো ক্যাবচালকদের প্রতি নগর কর্তৃপক্ষ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। চালকদের প্রতারিত করা হয়েছে। ৮০ শতাংশের বেশি ট্যাক্সিচালক এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য বড় একটি সংকট। এখন আমাদের ত্রাণ দরকার। এ জন্য আমরা এটি বন্ধ করে দেই।’ টিএলসির তথ্য মতে, মেডেলিয়ন লাইসেন্স প্রতি ২০১৩ সালের মার্চে মাসিক ভাড়া ১৪ হাজার ৪৩২ ডলার আয় হতো। ২০১৯ সালের মার্চে এই আয় ৯ হাজার ১২৭ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গত ছয় বছরে ইয়েলো ক্যাবে ভাড়া থেকে মাসিক আয় কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০১৩ সালের দিকে একেকটি মেডেলিয়ন লাইসেন্সের দাম এক মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির নন-করপোরেট মেডেলিয়নগুলোর দাম ৪৫ শতাংশ কমে গেছে। নিউইয়র্ক সিটির ইয়েলো ট্যাক্সির মেডেলিয়ন লাইসেন্সের ঋণ এখন একটি বড় সমস্যা। নতুন করে করোনাভাইরাস মারামারির কারণে যাত্রীর পরিমাণ কমে যাওয়ায় হাজার হাজার চালকের জীবনযাপন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্বব্লিগেট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এলএলসি, গ্রিনউইচ বিনিয়োগ সংস্থা মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রায় ২০০০ মেডেলিয়ন মালিক ও চালকদের ঋণ প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। মার্বব্লিগেট বিনিয়োগ সংস্থাটি সিটির ১৩ হাজার ৫০০ মেডেলিয়নের মধ্যে ৪ হাজার মেডেলিয়ন লাইসেন্সের মালিক ও কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটে থাকা চালকদের সর্বোচ্চ ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত ঋণ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ইয়েলো সোসাইটির সাবেক সভাপতি আউয়াল ভুঁইয়া জানান, বাংলাদেশি ইয়েলো চালকদের মধ্যে অনেকেই এখনো কাজে নামেননি। যেমন বাংলাদেশি ক্যাবীদের সংগঠন ইয়েলো সোসাইটির প্রায় ৩০০ সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে ২০-২৫ জনের মতো কাজে নেমেছেন। তাও সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন তারা কাজ করেন। তিনি বলেন, বলতে গেলে এখন আমাদের যাত্রী নেই। তবে উবার এবং লিফটের কিছু যাত্রী আছে। কিন্তু ইয়েলো সোসাইটির যাত্রী নেই। অন্যদিকে ম্যানহাটনে আগে যেখানে শুধু মানুষ দেখা যেত, এখন দেখা যায় ফাঁকা রাস্তা এবং উঁচু উঁচু বিল্ডিং দাঁড়িয়ে রয়েছে। দিনের বেলায় কিছু যাত্রী পাওয়া গেলেও রাতের বেলায় ম্যানহাটন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। তিনি বলেন, ‘আর আমরা যারা মেডেলিয়নের মালিক তাদের অবস্থাতো আরো করুণ। যাদের পুরো মেডেলিয়ন তারা মেডেলিয়ন ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর যারা নতুন মেডেলিয়নের মালিক তারা হয়ত সারভাইব করতে পারছেন। কারণ তারা নতুন মূল্যে মেডেলিয়ন ক্রয় করেছেন। আর আমরা যারা ২০১১ থেকে ১৪ সালে মেডেলিয়ন ক্রয় করেছি তাদের পক্ষে মেডেলিয়ন রাখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখনো আমাদের ইন্স্যুরেন্সসহ প্রায় ৪ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয়, কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের আয় নেই। তিনি বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে একটি কোম্পানি করে তিনটি মেডেলিয়ন ক্রয় করেছিলাম, এরই মধ্যে ২টি মেডেলিয়ন আমাদের ছেড়ে দিতে হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে আমাদের মেডেলিয়নের পেমেন্ট তিন মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেই অর্থও আমাদের দিতে হবে ইন্টারেস্টসহ। তিনি বলেন, আসলে নিউইয়র্কে ট্যাক্সিচালকরা ভালো নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন