জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
ঘটনার মাত্র পাঁচদিন আগে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার কন্টাক্ট পায় মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনো অর্থ নয়, আগের কয়েকটি মামলা তুলে নেওয়াসহ বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চুক্তিতে কিলিং মিশনে নামে মাসুম। ঘটনার আগেরদিনও তিনি কমলাপুরে টিপুকে হত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেদিন ব্যর্থ হন। দ্বিতীয়বার আর তার মিশন ব্যর্থ হয়নি। মাসুমের ছোড়া গুলিতে মারা যায় আওয়ামী লীগ নেতা টিপু এবং প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। এদিন আসামীকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, শাহজাহানপুরের চাঞ্চল্যকর জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরান জামান প্রীতি হত্যা মামলার শ্যুটারের নাম মাসুম মোহাম্মদ আকাশ (৩৪)। তিনি চাঁদপুরের মতলবের কাইশকানির মোবারক হোসেনের ছেলে। তিনি রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেকের ৬০/১৫ বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার নামে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শ্যুটার আকাশ জানিয়েছে, সে ঘটনার আগের দিন ২৩ মার্চ জাহিদুল ইসলাম টিপুকে তার কমলাপুরের রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তায় অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বেশি লোকজন থাকায় সে ব্যর্থ হয়।
ঘটনার দিন ২৪ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একজন ফোন করে মাসুমকে জানায়, টিপু তার অফিসে (রেস্টুরেন্ট) অবস্থান করছে। এ সংবাদ পেয়ে মাসুম জাহিদুল ইসলাম টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছে থেকে টিপুকে অনুসরণ করে গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করে। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেল লাইনের আগে আমতলা সংলগ্ন রাস্তায় যানজটে আটকা পড়লে গ্রেপ্তার শ্যুটার মাসুম গাড়ির চালকের পাশের আসনে বসা টিপুকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি করে পালিয়ে যায়।
হাফিজ আক্তার বলেন, শ্যুটার আকাশকে যারা কন্টাক্ট করেছে তাদের কয়েকজনের নাম সে বলেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, তার নামে মামলা তুলে নেওয়ার সুবিধার বিষয় থাকতে পারে। সেই কিলিং মিশনে সেসহ দুজন ছিল। যেহেতু মূল কিলার গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন তদন্তে জানা যাবে এই খুনের সঙ্গে আর কারা জড়িত এবং কি কারণে খুন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পালানোর সময় তার কর্মকাণ্ড, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোটরসাইকেলের ব্যবহার সবমিলিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছি।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে জাহিদুল মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতি। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ গাড়িচালক মুন্না বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় পরের দিন শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন