মোদি ঢাকা যাচ্ছেন  

বিশেষ প্রতিনিধি ||  ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারবেÑএমন আশা দেশের মানুষ ছেড়েই দিয়েছে। যৌথ নদী কমিশন, পানিসম্পদমন্ত্রী থেকে নিয়ে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বহুবার নিষ্ফল আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে নতুন আশা করার কোনো বিশ্বাসযোগ্য ভিত খুঁজে পাচ্ছে না মানুষ। অবস্থাটা সরকারের জন্য মারাত্মক বিব্রতকর হচ্ছে বলে এ নিয়ে সরকারি কোনো পর্যায় থেকে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক। অন্যদিকে ভারতীয় পক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেই রেখেছে।  পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে, আসন্ন শুকনো মৌসুমে তিস্তাসহ পাঁচটি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে অথবা অক্টোবরে জয়েন্ট কনসালটেটিভে কমিটির বৈঠক হবে ঢাকায়। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছর দিল্লিতে।  ঢাকার বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবরা অংশ নেবেন। নৌ ও সড়কপথে বাণিজ্য বৃদ্ধি, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনা হবে এবারের বৈঠকে। বৈঠক এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে এতে উভয় পক্ষ একটা সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে উপনীত হবে। ভারতের দিক থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। যৌথ নদী কমিশন থেকে বাংলাদেশের সদস্যদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়ে প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে। যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির আগামী অক্টোবর কিংবা চলতি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে আলোচনায় এ ব্যাপারে ভারত সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের আভাস দিয়েছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকায় আসতে পারেন বলেও জানা যায়। তবে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আসার বিষয়টি কিছুদিন পর নিশ্চিত করার কথা জানানো হবে।  দীর্ঘ ভোগান্তির পানিবণ্টন সমস্যা নিয়ে ভারতের আগ্রহী হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশকে বঞ্চিত রাখার এ আরেক কৌশলও হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। চীন-ভারত রক্তক্ষয়ী সংঘাত-পরবর্তী কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি সামরিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও অবনতিশীল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ, নেপালসহ প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর গুরুত্ব চীন-ভারত উভয়ের কাছেই বেড়েছে। ভারতের সঙ্গে রক্তের বাঁধনে গড়ে ওঠা সম্পর্কে ন্যূনতম ক্ষতিকর কিছু করার পক্ষে কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ আগ্রহী নয়। বারবার প্রমাণ দেওয়ার পরও ভারত তা বিবেচনায় নেয়নি। নিজেদের অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বিষয়টিকে ভারত বরাবর বড় করে দেখে আসছে। পরিস্থিতির চাপে ভারত প্রতিবেশীদের সঙ্গে মনোভাবে সাময়িক পরিবর্তন এনেছে বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করেন।  উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্্যাপন উপলক্ষে আগামী জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সে সময়ই পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন হিস্যা চূড়ান্তভাবে স্থির করা হবে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে। আসন্ন যৌথ বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত খসড়া রূপ দেওয়া হবে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর ১৯৮৩ সালে তিস্তার অস্থায়ী পানিবণ্টন চুক্তি হয়। এতে মোট প্রবাহের ৩৬ শতাংশ ভারতের, ৩৯ শতাংশ বাংলাদেশের এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ নদীর নাব্যতার জন্য রাখার ব্যবস্থা ছিল। এই চুক্তিতে ৬১ শতাংশ পানি ভারতের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়। নদীর নাব্যতার জন্য যে ২৫ শতাংশ পানি রাখা হয়, সেই পানি তিস্তার ভারতীয় অংশেই প্রবাহিত। অন্তর্বর্তীকালীন সেই চুক্তি সম্পাদিত হলেও কোনো দিনই কার্যকর করেনি ভারত। ড. মনমোহন সিং সরকারের সময় আধাআধি হারে পানিবণ্টনের খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে চুক্তি হয়নি। জানা যায়, তিস্তার পাশাপাশি অপর চারটি অভিন্ন ছোট নদীর পানিবণ্টনে সমঝোতা করতে আগ্রহী ভারত। তিস্তার কী পরিমাণ পানি বাংলাদেশ পাবে, তা স্থির করা হবে কিছুদিনের মধ্যেই। মোট প্রবাহের ২৭ শতাংশের বেশি বাংলাদেশকে দেওয়া হবে না বলেই জানা যায়। ২০ শতাংশ পানি নদীর নাব্যতার জন্য সংরক্ষিত রাখা ছাড়াও ভারত নেবে ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ ভারত নেবে ৭৩ শতাংশ। অবশ্য বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে চূড়ান্ত হবে বলে জানা যায়। তিস্তার প্রবাহ আগে কম বলে ভারত দাবি করে আসছে। উজানে প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় সমীক্ষা করার জন্য ভারত দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করতেও রাজি। উজানে প্রবাহ যাচাই করার জন্য যৌথ কমিটি গঠন প্রস্তাব করে আসছে বাংলাদেশ। ভারত কোনো সময়েই তা বিবেচনায় নেয়নি। তবে ইদানীং তিস্তার ব্যাপারে ভিন্ন নীতি নেওয়ার আভাস দিচ্ছে

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন