পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হলেন মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শেহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের ১৭৪ জন আইন প্রণেতা তার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ২৩ তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরিফ। ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সদস্যরা ভোট বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।

 

এর আগে পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের আইনপ্রণেতারা দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগেই ওয়াক আউট করে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে যান।

নতুন প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআইয়ের সমর্থিত শাহ মাহমুদ কুরেশি জাতীয় পরিষদ থেকে পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতাদের গণপদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর তারা সংসদ বয়কট করেন। যে কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শেহবাজ শরিফ।

ইমরান খান গত শনিবার রাতে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর দুদিন পরই নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল পাকিস্তান।

এর আগে সোমবার বিকালে জাতীয় পরিষদ ভবনে এসে দলের এমপিদের সঙ্গে এক বৈঠকে জাতীয় পরিষদ থেকে নিজ দলের সব এমপিসহ পদত্যাগ এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আজকের অধিবেশন বয়কটের ঘোষণা দেন ইমরান খান।

সোমবার অ্যাসেম্বলিতে পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট হওয়ার আগেই জাতীয় পরিষদ ভবনে উপস্থিত হন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তারপর দলের সব এমপির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা কোনো পরিস্থিতিতেই আর জাতীয় পরিষদে অধিবেশনে বসব না। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যারা নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে চাপে রাখতে হবে। আর এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আমরা সবাই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করব’।

বৈঠকে অবশ্য বেশিরভাগ এমপিই প্রথম দিকে ইমরানের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা যুক্তি দেন- যদি পিটিআইয়ের এমপিরা পদত্যাগ করে, সেক্ষেত্রে মাঠ ফাঁকা হয়ে যাবে এবং বিরোধীদের জন্য আরও সুবিধা হবে।

এক পর্যায়ে ইমরান বলেন, ‘আমি হব পদত্যাগ করা প্রথম এমপি এবং অন্য কেউ যদি পদত্যাগ করতে না চায়, তবুও আমি পদত্যাগ করব’।

ইমরানের এই বক্তব্যের পর এমপিরা তার নির্দেশ মেনে নেন এবং বলেন যে, এ ব্যাপারে দলনেতার নির্দেশ অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেবেন তারা।

ইমরান খানের এই ঘোষণার পরপরই ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির সভাপতিত্বে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়।

অধিবেশন শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইমরান খানের দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি জানান, তারা একযোগে পদত্যাগ করবেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তারা অংশ নেবেন না।

তার এ ঘোষণার পর ডেপুটি স্পিকার কাসের সুরিও অধিবেশন ছেড়ে বের হয়ে যান।

পরে মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর আয়াজ সাদিক তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভোট শুরু করেন।

শাহ মোহাম্মদ কোরেশিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিল ইমরান খানের দল।

কিন্তু তিনি ভোট শুরুর আগেই জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করায় এখন শেহবাজ শরীফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন।

সোমবার দুপুরের পর দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। তেলাওয়াতের পর ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি গত ৩ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।

তিনি বলেন, ‘আদালত এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে... এবং আমরা সবাই আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য। কিন্তু আমি আপনাদেরকে আমার আদেশের পেছনের কারণ জানাতে চাই’।

সুরি বলেন, একজন দায়িত্বশীল পাকিস্তানি এবং এনএর ডেপুটি স্পিকার হিসাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

এরপর তিনি ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ আছে এমন একটি নথির কথা বলেন। আর এই নথি মন্ত্রিসভা, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক এবং সংসদীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘এবং এটি প্রমাণিত হয়েছে যে অনাস্থা প্রস্তাব একটি বিদেশি ষড়যন্ত্র’।

গত শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর মধ্যরা‌তে অনাস্থা ভো‌টে হে‌রে পা‌কিস্তা‌নের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারা‌ন ইমরান খান। দেশটির ৩৪২ সদস্যের সংসদের ১৭৪ জনই ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।

পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি বাতিল করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।

সেদিনই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ নেয় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন