জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
বৈশাখের শুরুতে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ আট বছর পর তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ২টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশের সর্বোচ্চ এই তাপমাত্রায় পদ্মাপাড়ের রাশাহীতে শুক্রবার অসহনীয় হয়ে উঠে সাধারণ মানুষের জীবন। অব্যাহাত তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন যেন যায় যায় করছে! অগ্নিদহনে সবুজ রাজশাহী। বাতাসে যেন অনুভূত হচ্ছে আগুনের হলকা। সকাল থেকে দুপুর গড়াতেই তেঁতে উঠেছে পথঘাট। বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
আর এই দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ। আকাশে মেঘের দেখা নেই। ঘরে বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা; ওপর থেকে যেন আগুনই নামছে! তীব্র গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে।
রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি দেখা যায়। কিন্তু এবার শীত কম পড়ায় বৈশাখের শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে আগুনমুখো সূর্য। এ সময় সাধারণত ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থাকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতি যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বেরো ধান চাষের সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর গুটি। বৃষ্টি পানি না পেয়ে প্রায় সব এলাকাতেই আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।
রাজশাহীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, মার্চের মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত একই মাত্রায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ওপর দিয়ে। এর মধ্যে গত ৪ এপ্রিল মাত্র ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও খরাপ্রবণ এলাকা রাজশাহীতে তার দেখা নেই। রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু তাপদাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে মাঝারি তাপপ্রবাহ রাজশাহীতে শুক্রবার তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, শুক্রবার দুপুর ২টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ৩টায়ও একই তাপমাত্রা ছিল। এ ছাড়া শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এর আগে ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি।
১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন