যুদ্ধের ধাক্কায় রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি তলানিতে

gbn

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি তলানিতে নেমে এসেছে। যুদ্ধের উত্তাল মাস মার্চে দেশটিতে মাত্র ২ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

এই অঙ্ক গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৬৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। আর আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

 

২০২১ সালের মার্চে সম্ভাবনাময় বাজার রাশিয়ায় ৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে করেছেন ৭ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সার্বিক পণ্য রপ্তানি ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার দ্বিগুণের বেশি ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এই দুই বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ সকল দেশেই রপ্তানি বেড়েছে। প্রচলিত বাজারের (পুরনো বাজার) পাশাপাশি অপ্রচলিত বা নতুন বাজারেও রপ্তানি বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে।

কিন্তু যুদ্ধের কারণে মার্চ মাসে রাশিয়ার বাজারে রপ্তানি ৬৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমেছে। অথচ মার্চ মাসের আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিসাবে এই বাজার থেকে রপ্তানি আয় ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি বেড়েছিল।

তবে অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে এখনও ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে।

এই নয় মাসে রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৫ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪৬ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

এই সময়ে দেশটি থেকে মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এরমধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৩০ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে এসেছে ৯২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ক্রাস্টেসিয়ানস থেকে এসেছে ৮৭ লাখ ২০ হাজার ডলারের বিদেশি মুদ্রা।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘তৈরি পোশাকের খুবই সম্ভাবনা এবং ভালো বাজার হয়ে উঠছিল রাশিয়া। অনেক দিন চেষ্টার ফলে আলো দেখা দিয়েছিল। জুলাই-মার্চ সময়ে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে ৩৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাশিয়ায় না কমলে এই প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ত।’

তিনি বলেন, ‘যেভাবে বাড়ছিল, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। এবার রাশিয়ায় আমাদের রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে সেটা আর সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে (১২ মাস, জুলঅই-জুন) বাংলাদেশ রাশিয়ায় ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার পোশাক রপ্তানি করেছিল।

যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। প্রতি মাসেই ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি রাশিয়ার বাজারেও আমাদের রপ্তানি বাড়ছিল, কিন্তু এই যুদ্ধ সবকিছু কেমন জানি ওলটপালট করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ যে কেবল বাজার অস্থিতিশীল করছে তা নয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল-গ্যাসের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাতে জাহাজ ভাড়া আরও বেড়ে যেতে পারে। এমনিতেই জাহাজ ভাড়া বাড়ায় আমদানি-রপ্তানি খাত ধুঁকছে।’

পোশাক রপ্তানিকারকরা জানান, বাংলাদেশ থেকে দুভাবে পণ্য রপ্তানি হয় রাশিয়ায়। একটা হচ্ছে, সরাসরি যায়; অন্যান্য দেশের মাধ্যমে যায়। এখন যে সব পণ্য যাচ্ছে তা বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় হামলা চালায়। এর আগে থেকে অবশ্য দুদেশের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা চলছিল।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন