দে লো য়া র জা হি দ
ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ও দেশের অপর ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যেতে পারার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতায় আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ও শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা সহ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সনদের বৈধতা বাতিল এবং আরো একটির ভর্তি বন্ধ করার ঘোষণার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণে ইউজিসি যেন সুনামি রূপে আবির্ভুত হয়েছে। এতে উচ্চ-শিক্ষাখাতে শুধু বৈষম্য সৃষ্টি নয় বরং সরকারের যথাযথ পরিচর্যা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে পথপ্রদর্শনের অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে চরম নৈরাজ্য, বিভ্রাট ও বিভ্রান্তির। উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশে বৈচিত্র্যময় ও সৃজনশীল একটি শিল্প হিসেবে যখন উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক সে সময় এ বৈষম্যপূর্ণ সিদ্বান্ত গোটা ব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।
গত ১৭ এপ্রিল কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মোঃ ওমর ফারুখ ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভর্তি বন্ধের একটি নির্দেশনা প্রদান করেন। আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতির বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের অবর্তমানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা ও এর ফলাফলের আইনগত কোন বৈধতা নেই বলে ও চিঠিতে উল্ল্যেখ করেন। "ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল হতে আচার্য নিযুক্ত ভিসি এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্যের অবর্তমানে অন্য কারো সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভার আইনগত কোন বৈধতা নেই বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।---উল্লিখিত কারণে কমিশন কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।"((বাসস))
"বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা ও উন্নতশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবশ্যকতা' শীর্ষক একটি নিবন্ধ ০৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে।--"বাংলাদেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাদানকারী কলেজগুলি দেশে একটি শিক্ষা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে পারে। সরকার যদি উন্নত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা উচ্চশিক্ষাকে একটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসে তাহলে এর দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে। ইউজিসির ভিশন হলো "বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ও উদ্ভাবনী গবেষণায় উৎকর্ষতা অর্জন, টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সার্বিক সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করা।" ইউজিসি স্বীকৃত হওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটিকে ইউজিসি দ্বারা মনোনীত একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পরিদর্শন করতে হবে। প্যানেলের দৃষ্টিভঙ্গি সন্তুষ্ট হওয়ার পরই এর অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা, অনুষদ এবং কর্মী, পাঠ্যক্রম, নীতি ও পদ্ধতি ইত্যাদি স্বীকৃতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপারিশ করা হয়। ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গত ১৪ মার্চ, ২০১২-এ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এবং ২০ মার্চ, ২০১২-এ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন লাভ করে এবং ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২ পূর্ণোদ্যমে ক্লাস শুরু করে.
জানা গেছে বিগত ২৪/০৭/২০১৩ তারিখে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ড. মোঃ আব্দুস সাত্তারকে ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ প্রদান করা হয়। ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার বিগত ২১.০৬.২০১৭ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের নিমিত্তে বিগত ২০/০৪/২০১৭ তারিখে একটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়াগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রাপ্ত আবেদনগুলো থেকে একটি প্যানেল তৈরি এবং তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার জন্য বিগত ২১/০৬/২০১৮ তারিখে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রকাশনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূর্বক ড. তোফায়েল আহমেদ (প্রাক্তণ অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)-কে প্যানেলের ক্রমিক-১-এ রাখা হয় এবং একজনকে ক্রমিক-২ এবং অপর জনকে ক্রমিক-৩ এ রেখে ৩ (তিন) জনের একটি প্যানেল চুড়ান্ত করা হয়। অনুষ্ঠিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিগত ২৫/০৭/২০১৮ তারিখে ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য নিয়োগের নিমিত্তে সৈয়দ এহসানুল হক, চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর স্বাক্ষরের একটি প্যানেল প্রস্তাব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নিয়ম অনুসরণ করে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকায় প্রেরণ করা হয় এবং এর অনুলিপি চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রেরণ করা হয়। ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এর পদ পূরণের লক্ষ্যে ৩ (তিন) জন প্রার্থীর প্যানেল প্রস্তাব প্রেরণ করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে এর অনুমোদন করা বা না করার বিষয়ে কোন কিছু ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ বছর ৬ মাসের মধ্যেও জানানো হয়নি। ড. তোফায়েল আহমেদ মনোনীত ভিসি হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ও আচার্য এর অনুমোদন পাননি। ধৈর্য্যচুত হয়ে ২০২০সালের অক্টোবরে তিনি পদত্যাগ করেন। শুধু ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নয় দেশের প্রায় প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরণের নানাহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পরিস্থিতির শিকার। যেমন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও নাম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে এবং ছাত্র, শিক্ষক ও অভিবাবকদের মাঝে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
ইউজিসির চতুর্থ দফা আলটিমেটাম: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে শিরোনামে ২০ এপ্রিল ২০২২ দৈনিক যুগান্তর একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। নিবন্ধ এর উপসংহারে বলা হয় যে "কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কোনো শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে। এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা যাতে মানসম্মত শিক্ষা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবাই যদি উন্নত নীতি-নৈতিকতার পরিচয় দিতে না পারেন, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?"
বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মোঃ ওমর ফারুখ স্বাক্ষরিত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া পত্রটি একতরফা এবং বিভ্রান্তিকর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সনদের বৈধতা বাতিল ও ভর্তি বন্ধে শত শত শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে যা সরকারের শিক্ষা নীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কোনো শর্ত পালনে যেন অনিচ্ছাকৃত ভাবে ব্যর্থ না হয় এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতাকে অবশ্যই বাড়াতে হবে ও জবাবদিহিতার আওতায় ও আনতে হবে.. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইউজিসিকে শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নয় বরং পরামর্শকের সক্ষমতা অর্জন এবং গৃহীত সিদ্বান্তগুলোকে পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।
\
লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন