দে লো য়া র জা হি দ ||
ইউক্রেনীয়রা যখন মরণপণ লড়ছে তাদের ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষায়, যখন ডনবাস, ক্রাইমিয়া এবং দক্ষিণের মারিউপোলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে রাশিয়া, যখন দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধে বৈঠকে বসতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভলোদমির পুতিনকে আহ্বান, যখন খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ইকুমেনিকাল প্যাট্রিয়ার্ক বার্থলোমিউ ‘ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ’ বন্ধের জন্য ব্যাকুল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে "এতদিন তারা যেভাবে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করে চলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোটের সহযোগিতা নিয়ে তারা যেভাবে রাশিয়ার ক্ষতিসাধন করেছে, তাতে তারা মনে করছেন যে এধরনের সাহায্য পেতে থাকলে তারা হয়তো রাশিয়াকে পরাস্ত করতে পারে।" একথা সত্যি এখনও পর্যন্ত রাশিয়া রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটাতে পারেনি, পারেনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। রাজধানীর উপকণ্ঠে ইউক্রেনের সৈন্যদের তীব্র প্রতিরোধের মুখ রুশ বাহিনী সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।...এ অর্জনে
যুক্তরাষ্ট্র মহা খুশি কারণ এ ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ভূ-রাজনীতিতে বিশ্ব এ রাশিয়ার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে রুশ আগ্রাসনের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষ। হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তপে পরিনিত হয়েছে কতগুলো শহর, বন্দর ও নগরী তারপর আশাবাদী বাইডেন প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে জানিয়েছে--- ইউক্রেনকে পুরোপুরিভাবে রাশিয়া কখনোই পরাস্ত বা দখল করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের মিত্রদের মধ্যকার ঐক্য রাশিয়াকে এই কঠোর বার্তাই দিচ্ছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টা চালানো একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ হচ্ছে তুরস্ক। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস তুরস্ক, মস্কো ও কিয়েভ সফর করবেন। বাসস (২৪ এপ্রিল) জানায় রাশিয়ার এ যুদ্ধ তিন মাসে প্রবেশ করার পর তিনি এ সফরে আসছেন। এদিকে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং অবরুদ্ধ বন্দর নগরী মারিউপোলে অনেক বেসামরিক নাগরিক ও ইউক্রেনের সৈন্য আটকা পড়েছে।ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলানস্কি কিয়েভের আগে মস্কো সফরে যাওয়ার গুতেরেসের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্তের কোন ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা নেই।’ জেলানস্কি বলেন, ‘এই যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনে। মস্কোর রাস্তায় কোন লাশ পড়ে নেই। এক্ষেত্রে প্রথমে ইউক্রেন সফর করা যুক্তিযুক্ত হবে।’
উল্লেখ্য, তুরস্ক এ যুদ্ধাবসানে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকদের মধ্যে বৈঠকের এবং আন্তালিয়ায় এ দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করে। আঙ্কারা বর্তমানে পুতিন ও জেলানস্কির মধ্যে একটি সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করছে। সমেম্মলনটি ইস্তাম্বুলে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।---এছাড়াও, "ইউক্রেনের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, যিনি এই যুদ্ধ শুরু করেছেন তার পক্ষেই সম্ভব এটি শেষ করার।"
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের কারণ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এ যুদ্ধ। কয়েকটি পর্বে রাশিয়া তার অভিযানকে ভাগ করেছে। প্রথম পর্বের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে দ্বিতীয় পর্বের সূচনা করেছে। ডনবাস, ক্রাইমিয়া এবং দক্ষিণের মারিউপোলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে রাশিয়া, এখন দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে এ ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ আরো অনেকদিন ধরে চলবে কিনা এ প্রশ্নের সরল কোনো উত্তর নেই। সমরবিদ সৈয়দ মাহমুদ আলীর মতে, বিভিন্ন খবরাখবর দেখে মনে হচ্ছে ৯ই মে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দিনটিতে রাশিয়ার বিজয় হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।---"শোনা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো সেদিন একটা ভাষণ দিয়ে রাশিয়ার সীমিত লক্ষ্য অর্জনের কথা বলে দেশবাসীকে বোঝাতে চেষ্টা করবেন যে এই যুদ্ধের আর প্রয়োজন নেই," । তিনি মনে করেন মারি উপোল যদি সত্যিকার অর্থে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে তাকে রাশিয়ার আঞ্চলিক বিজয় বলে মনে করা হতে পারে। তবে পাশ্চাত্যের সহযোগিতা নিয়ে ইউক্রেন যদি রাশিয়ার আরো ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তাহলে তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন কি না তা বলা কঠিন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে এ মুহূর্তে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইউক্রেনের এ যুদ্ধে পশ্চিমা নেতারা সামরিক, কূটনৈতিক,ও অর্থনৈতিক সাহায্য যুগিয়ে আসছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে এ যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিই জয়লাভ করবেন এখানে রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় হতে যাচ্ছে। দিনে দিনে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এ যুদ্ধে ইউক্রেন এখন আর একক কোনো পক্ষ নয়.জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস তুরস্ক, মস্কো ও কিয়েভ সফরের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও সফর করা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র যতদিন বিশ্ব ভূ-রাজনীতি থেকে রাশিয়াকে মুছে ফেলার মনোবাসনা ত্যাগ না করবে ততদিন প্রকারান্তরে এ যুদ্ধ চলবে।
লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন