জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
রুটা করা যাক আন্তর্জাতিক এক প্রতারকের কাহিনী দিয়ে৷ এই ব্যক্তির ছদ্মনাম সাইমন লেভিয়েভ৷ আসল নাম সিমন হায়ুত৷ গত বছর তাকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সাড়া ফেলেছিল নরওয়ের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ভিজি৷
ইসরায়েলি এই যুবক ডেটিং-অ্যাপ ‘টিন্ডারের’ মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামর্থ্যবান তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতান৷ নিজেকে পরিচয় দেন বিরাট ধনী হিসেবে৷ এরপর পরিচয় হওয়া নারীদের সঙ্গে তিনি ডেটিং শুরু করেন৷
ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে তাদের নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ান৷ বিলাসবহুল হোটেলে থাকেন৷ সঙ্গে রাখেন ভাড়া করা বডিগার্ড৷ ভুয়া ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও ব্যবসায়িক সফরসঙ্গী৷ একেকজন নারীর সঙ্গে মাসের পর মাস বা বছর অবধি এই সম্পর্ক গড়াতে থাকে৷
এক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন বিপদের কথা বলে প্রেমিকাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা ধার করতে শুরু করেন৷ তাকে উদ্ধারের জন্য কেউ কেউ ব্যাংক ঋণ করেও কয়েক কোটি টাকা ধার দেন৷ যেমন নরওয়ের সিসিলিয়ে৷ সিমনের জন্য তিনি দশটি ব্যাংক থেকে ঋণ করেছিলেন৷ পরবর্তীতে সেই টাকা পরিশোধের ভুয়া ডকুমেন্ট পাঠান সিমন সেসিলিয়ের কাছে৷ এর মধ্যেই সিমন পার্নিলা খয়াহোলম নামের আরেক সুইডিশ তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের ভিত গড়তে শুরু করে দিয়েছেন টিন্ডারে৷
ভিজির অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেসিলিয়ের পাঠানো টাকা থেকে সিমন পার্নিলাকে চার লাখ ক্রোনা আর সেই সঙ্গে ব্যাংকক যাওয়ার টিকেট কিনে পাঠিয়েছিলেন৷ সেসিলিয়ে কিংবা পার্নিলা যতক্ষণে তার অভিসন্ধি আঁচ করতে পারেন ততক্ষণে একজনকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে ডেটিং শুরু করেন সিমন৷ নতুন প্রেমিকার জন্য একই উপায়ে বিছান প্রতারণার জাল৷
কয়েক বছর ধরে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বিভিন্ন দেশের একাধিক নারীকে এমন অভিনব প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন সিমন৷ ২০১১ সালেই ইসরায়েলে তার বিরুদ্ধে চুরি, জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা হয়েছিল৷ কিন্তু গোটা ইউরোপ চষে বেড়ানো এই সিমনের টিকির দেখাও পাচ্ছিল না দেশটির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ২০১৫ সালে ফিনল্যান্ডে তিন নারীর সঙ্গে প্রতারনায়ও অভিযুক্ত হন তিনি৷ শুধু ইসরায়েল বা ফিনল্যান্ড নয় সিমনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল সুইডেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ডেনমার্ক আর নরওয়ের পুলিশও৷ অবশেষে তিনি ধরা পড়েন ২০১৯ সালের জুনে গ্রিক পুলিশের হাতে৷
সম্প্রতি বাংলাদেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এক নারীকে গ্রেপ্তার করে৷ তার ছদ্মনাম জান্নাতুল ফেরদৌস৷ আসল নাম সাদিয়া জান্নাত৷ সাংবাদিক সম্মেলনে সিআইডির দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৫-৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন৷ সিমনের ফাঁদ পাতার মাধ্যম ছিল টিন্ডার অ্যাপ৷ আর সাদিয়ার ছিল সংবাদপত্রে ক্যানাডা প্রবাসী ধণাঢ্য নারীর জন্য ‘ধার্মিক ও সুপাত্র’ চেয়ে বিজ্ঞাপন৷ বিয়ের পর সেই পাত্র পাবেন ক্যানাডায় বসবাসের সুযোগ৷ এই বিজ্ঞাপন দেয়ার পর সাদিয়াকে তার সম্ভাব্য ‘পাত্রদের’ পিছনে সিমনের মতো তেমন বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হয়নি৷ উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর যুবা, এমনকি বৃদ্ধরাও এসে ধরা দেন তার জালে৷ উল্টো তারাই কাড়ি কাড়ি টাকা তুলে দেন তার হাতে৷ হয়ে যান সর্বস্বান্ত৷
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন