জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসানের স্ত্রীকে ডালিয়া আক্তারকে সাহায্য-সহযোগিতা করার নামে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন লোকজন। এমনকি কেউ কেউ সকালে বাড়িতে গিয়েও বসে থাকছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। বারবার এমন প্রস্তাবে বিব্রত-বিরক্ত-ক্ষুব্ধ তিনি।
গত ১৮ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদ হাসান ও মুরসালিন মারা যান।
এরপর গত ২০ এপ্রিল নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করেন।
জানা গেছে, ডালিয়াদের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তার বাবা সেখানেই থাকেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ডালিয়া থাকতেন কামরাঙ্গীরচরের কামরুল ইসলাম কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে নানির বাসায়। এখানেই নাহিদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। সম্পর্কটি চিরস্থায়ী করতে ছয় মাস আগে তারা বিয়ে করেন। সুখেই কাটছিলো যুগলবন্দি দিন।
বিয়ের পর এটিই ডালিয়ার প্রথম ঈদ। স্বামীর সঙ্গে ঈদ করবেন বলে অজস্র স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন। কিন্তু নাহিদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যেন মুছে গেছে ডালিয়ার সেসব স্বপ্নও।
তিনি জানান, ঘটনার দিন (১৯ এপ্রিল) নাহিদ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে বলেছিলেন, বাসায় ফিরে কামরাঙ্গীরচর রনি মার্কেটে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করবেন। ঈদের পরের দিন ডালিয়ার বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলেও যাওয়ার কথা ছিলো একসঙ্গে। তবে ডালিয়া সন্ধ্যায় খবর পেলেন, স্বামী আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখান থেকে আর ফেরা হলো না।
সদ্য বিধবা ডালিয়ার পাশে যেন সমাজের বিত্তবানরা দাঁড়াতে পারেন, সে জন্য গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সেসব খবরে যুক্ত করে দেওয়া হয় ডালিয়ার বিকাশ নম্বর। আর এই নম্বর নিয়েই কিছু লোক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলছে ডালিয়াকে। স্বামীর মৃত্যুর সপ্তাহ না পেরোতেই ফোনে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। এমনকি ইমো নম্বরে ভিডিও কল দিয়েও সহযোগিতার নামে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে চাইছে তার সঙ্গে।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে ডালিয়া আক্তার বলেন, লোকজন সহযোগিতার নামে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ফোন দিয়ে বলে, বিয়ে-শাদি করবেন কি না, সেই চিন্তা-ভাবনা আছে কি না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ যদি আপনার (প্রস্তাবদাতা) কোনো বোন হতো, তাহলে কি এমন কথা বলতে পারতেন? আজ আমার স্বামী মারা গেছে ১২ দিন। ১২ দিন হওয়ার আগেই আপনারা এসব কথা (বিয়ের প্রস্তাব) বলেন। আপনাদের ঘরে মা-বোন থাকলে তাদেরও কি ১২ দিনেই এসব কথা বলতেন? অন্তত ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, ছয় বছর তো যাইতো। আপনারা কেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন?
‘অনেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সকালে বাসায়ও আইসা বইয়া থাকে। সকাল ৭টা বাজে আইসা বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সবাই বিয়ের কথা বলে অথচ কেউ টাকা সহযোগিতা করে না। এই বিষয়টা নিয়ে পরিবার বিরক্ত। নম্বর দিয়েছি যেন আমার হেল্প হয়। তবে দয়া করে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেবেন না। যে নম্বর মিডিয়াতে দেওয়া সেই নম্বরে টাকা পাঠানোর পরিবর্তে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে।’
ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করে ডালিয়া বলেন, স্বামী আমাকে বেশিই ভালোবাসতো। সংসারের অভাব বুঝতে দিতো না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন