জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
সারাদেশে তীব্র গরমের মধ্যে দিয়ে কাটছে এবারের ঈদ উৎসব। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হলেও তাতে খুব বেশি কমেনি গরমের তীব্রতা। এরই মধ্যে চলছে দিনব্যাপী ঘোরাঘুরি, আড্ডা। এই বেড়ানো-আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে আইসক্রিম। পাড়া-মহল্লার অলিগলি কিংবা পর্যটন স্পটগুলোতে চোখে পড়ছে ভ্রাম্যমাণ আইসক্রিমের গাড়ি। তাতেই মজেছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ- সবাই। মহল্লার দোকানগুলোতেও আইসক্রিম কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। ঈদকেন্দ্রিক এই আইসক্রিম বেচাকেনা তিনশ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সবমিলে এখন রমরমা আইসক্রিমের ব্যবসা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পরে এ ব্যবসায় গতি এসেছে। প্রায় দুই বছর করোনাকালীন মন্দা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে এ খাত।
আইসক্রিমের অন্যতম উৎপাদনকারী এক কোম্পানির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে আইসক্রিমের বাজার ছিল এক হাজার ৫শ কোটি টাকার। যা পরের বছর (২০২০) নেমে আসে ৭৩০ কোটি টাকায়। গত বছরও ভালো ব্যবসা হয়। ২০২১ সালে আইসক্রিমের বাজার ছিল ১ হাজার ৪১০ কোটি টাকার।
এদিকে চলতি বছর গরমের তীব্রতা ও ভরা মৌসুমে দুটি ঈদের কারণে এবার বিক্রি ১ হাজার ৬শ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা খাত সংশ্লিষ্টদের। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ এই শিল্পের বাজার ২ হাজার ৬শ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে তাদের ধারণা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে ১ হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হলেও ঈদের মাসগুলোতে বিক্রি তিনশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে সারাবছর যে পরিমাণ আইসক্রিম বিক্রি হয় তার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বিক্রি হয় মার্চ থেকে শুরু হয়ে আগস্ট মাস পর্যন্ত গরমের মৌসুমে।
দেশের আইক্রিমের বাজারে সবচেয়ে বড় কোম্পানি ইগলু। কোম্পানিটির সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার সুমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘এখন ব্যবসা খুব ভালো। মহামারির কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিয়ে এখন ভালো ব্যবসা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ বছরের বিক্রি অন্য বছরের চেয়ে বাড়বে। এখন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ গ্রোথ নিয়ে এ খাত এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে শুধু ঈদে সব কোম্পানি মিলে বিক্রি তিনশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। গত রোজার মাসেও (এপ্রিল) ভালো ব্যবসা হয়েছে। আগে রোজায় কখনো এত বিক্রি হয়নি।’
খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বলছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় আইসক্রিমের বাজার বড় হয়েছে। এ খাতে এখন তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। দেশে এখন আইসক্রিমের চাহিদা বছরে ছয় কোটি লিটার।
বাজারে ইগলু, পোলার, লাভেলো, কোয়ালিটি, জাএনজি, ব্লুপ ও সেভয় মিলিয়ে এ চাহিদা পূরণ করছে। তবে বড় অংশ পূরণ করছে ইগলু, পোলার ও কোয়ালিটি- এ তিন কোম্পানি মিলে। এর বাইরে অন্য ব্র্যান্ড ছাড়াও আঞ্চলিক ও বিভিন্ন এলাকায় কিছু আইসক্রিমের ব্র্যান্ড রয়েছে। এসব ব্র্যান্ডের বাজার শেয়ার ১০ থেকে ১৫ শতাংশর বেশি নয়।
অন্যদিকে পণ্যমূল্যে অস্থিরতার প্রভাব আইসক্রিমের বাজারেও পড়েছে। কোয়ালিটি আইসক্রিমের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও চিনিসহ অন্যান্য উপকরণ ও পরিবহন খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা অনেক কমেছে। ফলে বিক্রি বাড়লেও সেটা ব্যবসায়ীদের জন্য ততটা সুখকর হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি উৎপাদনকারী কিছু কোম্পানির অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণেও এ খাতে ক্ষতি হচ্ছে।
করোনাকালে দেশের বেশকিছু আইসক্রিম কোম্পানি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেছিল। সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধও ছিল কয়েকটি কোম্পানির। এ পরিস্থিতি কেটে গেছে। এরই মধ্যে এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। দেশে আইসক্রিমের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও আয় দ্রুত বাড়ছে। এ খাতে কয়েক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন