জরুরি অবস্থার মাঝেও থেমে নেই বিক্ষোভ, উত্তাল শ্রীলঙ্কা

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় জারি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বিদেশি কূটনেতিকরা। রাজাপাকসে সরকারের পদত্যাগের দাবি কয়েক সপ্তাহ ধরা চলা বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। জানিয়েছেন, এটি ‘জনশৃঙ্খলা নিশ্চিতের’ পদক্ষেপ।

কিন্তু কড়াকড়ি আরোপ করেও বিক্ষোভ দমাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজাপাকসে সরকার। বিক্ষুব্ধরা শুক্রবার পার্লামেন্টে হামলার চেষ্টা করে। এসময় কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

 

বিক্ষোভের কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। দোকান-পাট, গণ-পরিবহন বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাধারণ জনগণ। এতে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ আছে বিপাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফল উল্টো হতে পারে। কারণ এক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ছিল।

শ্রীলঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের দূত জুলি চুং বলেন, ‘কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা কাজে আসবে না। দেশটির অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন।

‘সরকারের উচিত শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের কণ্ঠস্বর শোনা দরকার। শ্রীলঙ্কানরা যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন। এতে দেশটিকে শান্তি-সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।’

কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেভিড ম্যাককিনন বলেন, গণতন্ত্রের অধীনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার আছে শ্রীলঙ্কানদের। জরুরি অবস্থা ঘোষণা কেন প্রয়োজন, তা বোঝা কঠিন।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সীমিত করেছে।

শ্রীলঙ্কা সরকার বলছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরির জন্য জরুরি আইন ঘোষণা হয়েছে। আর্থিক সহায়তা এবং ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরিতে এ পদক্ষেপ সহায়তা করবে।

‘রাজধানী এবং দেশের অনেক জায়গায় সংগঠিত আবেগপূর্ণ বিক্ষোভ জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। অব্যাহত বিক্ষোভ কেবল অর্থনৈতিক সংকট বাড়িয়ে তুলবে।’

বিক্ষোভের মুখে গত ১ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করে রাজাপাকসে সরকার। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলে এই অবস্থা।

কিন্তু এই সময়ে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর এমন পরিস্থিতি দেখেনি শ্রীলঙ্কা। এসবের মধ্যে ক্ষমতা না ছাড়ার সিদ্ধান্তে অনড় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগ করবেন না।

বিক্ষোভকারীরা সম্প্রতি রাজাপাকসের অফিস ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ চলছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার দেশজুড়ে জারি হয় জরুরি অবস্থা।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, রাজাপাকসে এবং তার শাসক পরিবার এই অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার দায়ী। কয়েক মাস ব্ল্যাকআউটসহ খাদ্য, জ্বালানী এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতি দ্বীপজুড়ে ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগদ মুদ্রার ঘাটতি, উত্পাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে বাধা সৃষ্টি করছে। মার্চে মুদ্রাস্ফীতি ১৮.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কার জ্বালানি মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারার কারণে সারা দেশে দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করা হয়েছে।

দেশটির ট্রেড ইউনিয়ন শুক্রবার ধর্মঘট পালন করে। কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে এতে অংশ নেয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাস পরিষেবা।

শিল্প-শ্রমিকরা নিজ নিজ কারখানার বাইরে বিক্ষোভ করে। ক্ষোভ প্রকাশে দেশজুড়ে টাঙানো হয় কালো পতাকা।

ট্রেড ইউনিয়নের নেতা রবি কুমুদেশ বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের নীতিগত ভুলগুলো চিহ্নিত করেছি। এগুলোর কারণে আজ আমাদের এই দশা।’

গত মাসে সরকার জানায়, ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণের খেলাপি শ্রীলঙ্কা। দেশটির অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি চলতি সপ্তাহে সতর্ক করেছিলেন, আরও অন্তত দুই বছর তাদের অভূতপূর্ব এই অর্থনৈতিক কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে।

করোনা মহামারির কারণে পর্যটন এবং রেমিট্যান্স আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে আমদানিনির্ভর দ্বীপরাষ্ট্রটি।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন